এল ক্লাসিকো: যে কারণে রিয়াল জিততে পারে, হারতে পারে যে কারণে
৯–২! এল ক্লাসিকোর সর্বশেষ দুই লড়াই মিলিয়ে ফলটা এমনই। গত অক্টোবরে লা লিগায় রিয়াল মাদ্রিদকে ৪–০ গোলে বিধ্বস্ত করার পর জানুয়ারিতে ৫–২ গোলে উড়িয়ে স্প্যানিশ সুপার কাপের শিরোপা জিতে নেয় বার্সেলোনা।
সেই ম্যাচ দুটি রিয়ালকে আবারও তাড়া করবে নাকি ভুল শুধরে ঘুরে দাঁড়াবে, আজ সেটিই দেখার অপেক্ষা। সেভিয়ার এস্তাদিও দে লা কার্তুহায় রাতে মৌসুমের তৃতীয় এল ক্লাসিকোয় মুখোমুখি হবে স্পেনের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই ক্লাব।
এবারের লড়াইটা কোপা দেল রে ট্রফি ঘরে তোলার। ৩১ বার চ্যাম্পিয়ন হয়ে বার্সাই কোপা দেল রের রাজা, রিয়াল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২০ বার।
এই প্রতিযোগিতার ফাইনালে রিয়াল–বার্সা এর আগে সাতবার মুখোমুখি হয়েছে। সেখানে অবশ্য রিয়ালই এগিয়ে। মুখোমুখি ফাইনালে লস ব্লাঙ্কোরা জিতেছে চারবার, কাতালানরা তিনবার। আজ দুই দলের অষ্টম ফাইনালের আগে কার্লো আনচেলত্তির রিয়ালের শক্তিমত্তা–দুর্বলতার জায়গাগুলো খুঁজে বের করা যাক—
শক্তিমত্তা
এমবাপ্পের ফেরা, বালদের ছিটকে পড়া
অ্যাঙ্কেলে চোট পাওয়ায় সর্বশেষ দুই ম্যাচ খেলতে পারেননি কিলিয়ান এমবাপ্পে। তবে রিয়ালের জন্য সুখবর, আজ রাতের কোপা দেল রে ফাইনাল দিয়ে ফিরবেন এমবাপ্পে। তাঁর সঙ্গে আক্রমণভাগের আরও তিন সৈনিক ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, জুড বেলিংহাম ও রদ্রিগো তো থাকছেনই। মাঠে চারজনের সমন্বয় ভালো হলে শুধু বার্সা কেন, যেকোনো দলকেই পস্তাতে হবে।
তাঁদের কাজ কিছুটা সহজ করে দিতে পারে আলেহান্দ্রো বালদে অনুপস্থিতি। পায়ের মাংসপেশির চোট থেকে সেরে না ওঠায় এ ম্যাচে খেলতে পারবেন না বালদে। বার্সার এই লেফটব্যাক রিয়ালের বিপক্ষে সর্বশেষ দুই ম্যাচেই দারুণ খেলেছেন। বিশেষ করে লা লিগার এল ক্লাসিকোয় এমবাপ্পেকে নিষ্ক্রিয় করে রাখতে বড় ভূমিকা ছিল তাঁর। রিয়ালের বিপক্ষে স্প্যানিশ সুপার কাপ ফাইনালে গোলও করেছিলেন বালদে।
লেভার অনুপস্থিতি
এবারের লা লিগায় সর্বোচ্চ গোলদাতা রবার্ট লেভানডফস্কি। রিয়ালের বিপক্ষে সর্বশেষ দুই ম্যাচেও করেছেন তিন গোল। হ্যামস্ট্রিং চোটের কারণে সেই লেভাকে আজ পাচ্ছে না বার্সেলোনা, যা রিয়ালের অপেক্ষাকৃত নড়বড়ে রক্ষণভাগের জন্য অনেক বড় স্বস্তির খবর। লেভা না থাকায় লামিনে ইয়ামাল ও রাফিনিয়াকে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে। অবশ্য লেভার পরিবর্তে যাঁর খেলার সম্ভাবনা বেশি, সেই ফেরান তোরেসকেও হিসাবের বাইরে রাখা যাবে না। কোপা দেল রের এই মৌসুমে ফেরান যে সর্বোচ্চ গোলদাতা!
আনচেলত্তির ‘শেষটা রাঙানোর’ অভিপ্রায়
রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত চুক্তি আছে প্রধান কোচ কার্লো আনচেলত্তির। কিন্তু এখন পর্যন্ত যা খবর, তাতে মনে হচ্ছে মৌসুম শেষেই রিয়াল ছাড়বেন আনচেলত্তি।
কোচের বিদায়ী মৌসুম স্মরণীয় করে রাখতে অতীতে দলের খেলোয়াড়দের সর্বস্ব নিংড়ে দিয়ে খেলতে দেখা গেছে। ভিনি–ভালভের্দে–কোর্তোয়ারাও আনচেলত্তির সম্ভাব্য বিদায়ী মৌসুম রাঙাতে ও তাঁকে আরেকটি ট্রফি উপহার দিতে আজকের ফাইনালে নিজেদের সবটুকু উজাড় করে খেলতে পারেন। এই ইচ্ছাশক্তির বলেই বার্সাকে হারিয়ে দিতে পারে রিয়াল।
দুর্বলতা
ফ্লিকের ক্ষুরধার মস্তিষ্ক
বার্সেলোনার কোচ হিসেবে প্রথম মৌসুমেই নিজের জাতটা আরেকবার চিনিয়েছেন হান্সি ফ্লিক। তাঁর অসাধারণ কৌশলের কাছেই আনচেলত্তির সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। আগের দুই এল ক্লাসিকোর একটিতে হাইলাইন ডিফেন্সের ফাঁদ তৈরি করে রিয়াল ফরোয়ার্ডদের আটকেছিলেন ফ্লিক। পরের এল ক্লাসিকোয় আবার সেই কৌশল থেকে বেরিয়ে এসে রিয়ালের রক্ষণভাগ চিরেছেন। আজও নতুন কোনো ছক এঁটে আনচেলত্তির দলকে স্তব্ধ করে দিতে পারেন ফ্লিক।
বার্সার সাম্প্রতিক ফর্ম
বার্সেলোনা যে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে চলেছে, তা নিশ্চিতভাবেই রিয়ালের মাথাব্যথার কারণ। ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত ২৭ ম্যাচ খেলে ২২টিতেই জিতেছে বার্সা, ড্র করেছে ৪টি। একমাত্র হার চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে ফিরতি লেগে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে। ফ্লিকের দলকে সেই ম্যাচ আসলে না জিতলেও চলত। খেলোয়াড়দের গোলক্ষুধা বার্সাকে আরও ভয়ংকর দলে পরিণত করেছে। এ বছর ২৭ ম্যাচের সব কটিতেই গোল পেয়েছে বার্সা, কমপক্ষে ৪ গোল করেছে ১৩ ম্যাচে। এই পরিসংখ্যান রিয়াল সমর্থকদের মনে ভয় ধরিয়ে দিতে বাধ্য।
একজন বেনজেমা কিংবা হোসেলুর অভাব
করিম বেনজেমা কিংবা হোসেলুর অভাব এই মৌসুমে ভালোই টের পাচ্ছে রিয়াল। আগের মতো এবারও প্রতিপক্ষের বক্সে অনেক ক্রস ফেলছেন ভিনি–রদ্রিগো–ভালভার্দেরা। কিন্তু বাতাসে ভেসে আসা বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে প্রতিপক্ষ গোলকিপার বা ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিতে পারছেন না এমবাপ্পে–এনদ্রিকরা।
চোটের মিছিল
লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ায় অভিজ্ঞ দুই ডিফেন্ডার দানি কার্ভাহাল ও এদের মিলিতাও এই মৌসুমে আর খেলতে পারবেন না, তা অনেকেরই জানা। সম্প্রতি হেতাফের বিপক্ষে লা লিগার ম্যাচে চোটে পড়ে মৌসুম শেষ হয়ে গেছে তরুণ মিডফিল্ডার এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গারও। মাঝমাঠে কামাভিঙ্গার অভাব ফ্রান গার্সিয়া কতটা মেটাতে পারবেন, এখন সেটিই দেখার অপেক্ষা।