গোলকিপার হয়েও ১২৯ গোল করেছেন যিনি

ফুটবল মাঠে এমন দৃশ্য নিয়মিত দেখা যায় না। যাবে কী করে, গোলকিপারদের মূল কাজ তো গোল ঠেকানো। কিন্তু সেই গোলকিপাররাই যখন গোল করেন, তখন তা অন্যতম সেরা ও বিশেষ মুহূর্ত হয়ে ওঠে। স্কোরশিটে তাঁদের নাম দেখা বিরল ঘটনা হলেও এমন কজন সাহসী গোলকিপার আছেন, যাঁরা এই প্রথাগত ধারা ভেঙে অনেক গোল করার কীর্তি গড়েছেন। ফুটবল ইতিহাস ও পরিসংখ্যান সংরক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংগঠন আইএফএফএইচএসের হিসাব অনুযায়ী, শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন, এমন ১০ গোলকিপারকে নিয়ে এই আয়োজন—

১০

মিসায়েল আলফারো [৩১ গোল]

মিসায়েল আলফারো

এল সালভাদরের সাবেক এই গোলকিপার ২২ বছর শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবল খেলেছেন। ক্যারিয়ারে তিনি ৩১টি গোল করেছেন, সব কটিই ক্লাব ফুটবলে। এর মধ্যে মাত্র ১১ গোল করেছেন পেনাল্টি থেকে। এতেই স্পষ্ট, মাঠের দুই প্রান্তেই কতটা প্রভাব ছিল তাঁর। ২০১০ সালে ঘাড়ের গুরুতর চোটে খেলোয়াড়ি জীবনকে বিদায় বলে না দিলে হয়তো আরও বেশি গোল পেতেন। বর্তমানে তিনি এল সালভাদর অনূর্ধ্ব-১৭ দলের গোলকিপার কোচ।

ফার্নান্দো প্যাটারসন [৩৫ গোল]

ফার্নান্দো প্যাটারসন

ম্যাচের শেষ দিকে গোলের প্রয়োজন পড়লে নিজের জায়গা ছেড়ে স্ট্রাইকারের পজিশনে গিয়ে খেলা ছিল তাঁর জন্য নিয়মিত ব্যাপার। কোস্টারিকার সাবেক এই গোলকিপার খেলোয়াড়ি জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন গুয়াতেমালায়। ক্যারিয়ারজুড়ে করেছেন ৩৫ গোল। ২০১৩ সালে ৪৩ বছর বয়সে তিনি অবসরে যান।

হান্স-ইয়োর্গ বুট [৩৭ গোল]

হান্স-ইয়োর্গ বুট

ক্যারিয়ারের বেশির ভাগজুড়ে অলিভার কান ও ইয়েন্স লেমানের ছায়ায় ঢাকা পড়ে থাকতে হয়েছে। তাই জার্মানি জাতীয় দলের হয়ে খুব বেশি খেলার সুযোগ পাননি। কিন্তু শীর্ষ পর্যায়ে ফুটবলে দেড় যুগের ক্যারিয়ারে ৩৭ গোল করেছেন তিনি। এর মধ্যে ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে করেছেন ৯টি। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে তিনটি ভিন্ন ক্লাবের হয়ে (হামবুর্গ, বায়ার লেভারকুসেন ও বায়ার্ন মিউনিখ) গোল করে করেছেন। ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের শীর্ষ এই প্রতিযোগিতায় গোলকিপার হিসেবে একাধিক গোল করার কীর্তি আর কারও নেই। কাকতালীয়ভাবে তিনবারই জুভেন্টাসের জাল কাঁপিয়েছেন। ফাঁকি দিয়েছেন দুই কিংবদন্তি গোলকিপারকে—একবার এডউইন ফন ডার সার, দুবার জিয়ানলুইজি বুফনকে।

মার্সিও [৪০ গোল]

মার্সিও

ব্রাজিলের সাবেক এই গোলকিপার খেলা ছেড়েছেন ২০১৯ সালে। ক্যারিয়ারে যে তিন ক্লাবের হয়ে ৪০ গোল করেছেন, তাদের নামেও দারুণ মিল! গোইয়ানিয়েনসের জার্সিতে তাঁর গোল ৩৭টি, গোইয়ানিয়ার হয়ে ২টি এবং ১টি গোল গোইয়াসের হয়ে।

দিমিতার ইভানকভ [৪২ গোল]

দিমিতার ইভানকভ

তালিকার ৬ নম্বরে আছেন এই বুলগেরিয়ান। তাঁর সময়ের এই পেনাল্টি বিশেষজ্ঞ ক্যারিয়ারে করেছেন ৪২ গোল, যা ইউরোপীয় গোলকিপারদের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০০৮ সালের টার্কিশ কাপের ফাইনালে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন। গেঞ্চলারবিরলিয়ির বিপক্ষে ফাইনালে জোড়া গোল করার পাশাপাশি টাইব্রেকারে তিনটি শট ঠেকিয়ে কায়সেরিস্পোরকে ট্রফি এনে দেন তিনি।

রেনে হিগুইতা [৪৩ গোল]

রেনে হিগুইতা

তাঁকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার দরকার নেই। কারও কারও মতে, তিনিই বিশ্বের সবচেয়ে ‘পাগলাটে ও খ্যাপাটে’ গোলকিপার। অদ্ভুত কায়দায় গোল ঠোকানোর পাশাপাশি গোল করার ক্ষেত্রেও পারদর্শী ছিলেন এই কলম্বিয়ান। দুই যুগের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে করেছেন ৪৩ গোল, এর মধ্যে ৩টি জাতীয় দল কলম্বিয়ার হয়ে। গোলকিপার হয়েও হাতের ব্যবহার কম করা তাঁকে বিখ্যাতদের কাতারে নিয়ে এসেছে।

জনি ভেগাস [৪৫ গোল]

জনি ভেগাস

লাতিন ফুটবলের যাযাবর বলা হতো তাঁকে। ২০ বছরের ক্যারিয়ারে ১৫টি ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। শেষ ১৩ বছরেই ক্লাব পাল্টেছেন ১৪ বার। করেছেন ৪৫ গোল, এর মধ্যে ৯টি ওপেন প্লে (খেলা চলা অবস্থায়) থেকে।

হোর্হে কাম্পোস [৪৬ গোল]

গোলকিপার হিসেবে নামতেন কিন্তু ম্যাচের মাঝপথে হঠাৎ গ্লাভজোড়া অন্য এক সতীর্থের হাতে তুলে দিয়ে নিজে স্ট্রাইকার হয়ে যেতেন। মেক্সিকোর এই কিংবদন্তি গোলকিপার ক্যারিয়ারজুড়ে করেছেন ৪৬ গোল, এর মধ্যে ২৮টি স্ট্রাইকার হিসেবে। ২০০৩ সালে খেলোয়াড়ি জীবনকে বিদায় বলে দিয়েছেন তিনি।

হোসে লুইস চিলাভার্ট [৬৭ গোল]

হোসে লুইস চিলাভার্ট

শুধু পেনাল্টি নয়, সেট পিস বিশেষজ্ঞও ছিলেন তিনি। প্যারাগুয়ের কিংবদন্তি এই গোলকিপার ক্লাব ফুটবলের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন আর্জেন্টিনায়। ক্যারিয়ারে করেছেন ৬৭ গোল, যা গোলকিপারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তিনিই একমাত্র গোলকিপার, যাঁর তিনটি হ্যাটট্রিক আছে। জাতীয় দলের হয়ে করেছেন ৮ গোল, এর মধ্যে চারটি ২০০২ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে। গোল আটকানোর পাশাপাশি গোল করাতেও রাখা এই অবদান প্যারাগুয়েকে বিশ্বকাপের টিকিট এনে দিয়েছিল।

রজারিও চেনি [১২৯ গোল]

রজারিও চেনি

গোলকিপারদের মধ্যে গোল করায় তাঁর ধারেকাছেও কেউ নেই। ২৫ বছরের লম্বা ক্যারিয়ারে খেলেছেন ১২০৯টি অফিশিয়াল ম্যাচ। ১২৯ গোল করে গিনেস বইয়ে নাম তুলেছেন। এর মধ্যে ৫৯টি ফ্রি-কিক থেকে! ব্রাজিলের ২০০২ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্যও ছিলেন। কিন্তু একবারও মাঠে নামার সুযোগ হয়নি। ক্লাব ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ হলেও জাতীয় দলের হয়ে সেভাবে আলো ছড়াতে পারেননি। ব্রাজিলের জার্সিতে সর্বসাকল্যে ১৭ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন। হয়তো এ কারণেই তাঁকে কিংবদন্তিদের কাতারে রাখা হয়নি। তবে গোলকিপার হয়েও ১২৯ গোলের বিশ্বরেকর্ড তাঁকে ফুটবল ইতিহাসে জায়গা করে দিয়েছে। বর্তমানে তিনি ব্রাজিলিয়ান ক্লাব বাহিয়ার প্রধান কোচ।