মেসি–সুয়ারেজ–নেইমারের পথে লেভা–রাফিনিয়া–ইয়ামাল
‘এমএসএন (মেসি, সুয়ারেজ ও নেইমার) তাঁদের সময়ে অসাধারণ ছিল। কিন্তু এখন যে তিনজন আছে তারাও অসাধারণ। আশা করি তারা তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে পারবে।’
অলিম্পিক স্টেডিয়ামে গতকাল রাতের চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচ শেষে বলেছেন বার্সেলোনা তারকা ফেরমিন লোপেজ। বার্সায় ‘এমএসএন’ নষ্টালজিক আক্রমণভাগ। ত্রিফলা সে আক্রমণভাগ ২০১৪-১৫ মৌসুমে বার্সাকে জিতিয়েছে সর্বশেষ ট্রেবল। ৪৫১ ম্যাচে এই আক্রমণভাগের কাছ থেকে ৩৬৩ গোল পেয়েছে বার্সা। ২০১৭ সালে নেইমারের পিএসজিতে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে জুটিটি ভেঙে যায়। তারপর থেকেই এমন একটি আক্রমণভাগের প্রত্যাশায় ছিলেন বার্সার সমর্থকেরা। রবার্ট লেভানডফস্কি, রাফিনিয়া ও লামিনে ইয়ামালে সেই প্রত্যাশা মিটতে শুরু করেছে।
চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনাল প্রথম লেগে কাল বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বার্সা। ম্যাচের স্কোরলাইনে তাকালেই বোঝা যায়, কাতালান ক্লাবটিতে সময় এখন ইয়ামাল, রাফিনিয়া ও লেভার। গোল করেছেন তিনজনই। জোড়া গোল লেভার। রাফিনিয়া ইয়ামাল ও লেভাকে দিয়ে গোলও করিয়েছেন। মোট কথা, মেসি, নেইমার ও সুয়ারেজের মাঝে যেমন বোঝাপড়া ছিল, এই আক্রমণভাগেও সেটার ছাপ দেখা যাচ্ছে। আনন্দ নিয়ে খেলছে বার্সার আক্রমণভাগ। ডর্টমুন্ডকে উড়িয়ে দেওয়ার পর এর রহস্য ভাঙলেন লেভা, ‘লামিনে, রাফিনিয়া ও আমার মধ্যে মাঠের ভেতরে ও বাইরে বোঝাপড়া ভালো।’
বার্সায় বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল মেসি, নেইমার ও সুয়ারেজের মাঝে। ইয়ামাল, রাফিনিয়া ও লেভার মাঝেও তেমন কিছু দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। যদিও বয়সের তারতম্য যথেষ্ট। লামিনে ১৭ বছর বয়সী, লেভার ৩৬ এবং রাফিনিয়ার ২৮ বছর। কিন্তু মাঠে তাঁদের বোঝাপড়া কথা ভালো সেটা বুঝিয়ে দিচ্ছে পরিসংখ্যান। চলতি মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে তিনজনের কাছে ৮২ গোল পেয়েছে বার্সা। লেভার ৪০ গোল, রাফিনিয়ার ২৮ এবং ইয়ামালের ১৪। ২০১৪-১৫ মৌসুমে মেসি ও নেইমারের পর রাফিনিয়া এবং লেভাই বার্সার প্রথম দুই সতীর্থ যারা চ্যাম্পিয়নস লিগের এক মৌসুমে অন্তত ১০টি করে গোল পেয়েছেন।
আক্রমণভাগে এই তিন খেলোয়াড়ের কারণেই চলতি মৌসুমে গোলের হাঁড়ি খুলে বসেছে বার্সা। অপরাজিতও রয়েছে চলতি বছরে। এবারের মৌসুমে এ নিয়ে ২১তমবার প্রতিপক্ষের জালে ন্যূনতম ৪ গোল করল হান্সি ফ্লিকের দল। আর চ্যাম্পিয়নস লিগে ১১ ম্যাচে করেছে ৩৬ গোল, যেটা ম্যাচপ্রতি গড়ে তিনটি গোলের বেশি। গোলে দ্বিতীয় স্থানে থাকা বায়ার্নের চেয়ে ৭টি গোল বেশি করেছে বার্সা, যদিও বায়ার্ন দুটি ম্যাচ বেশি খেলেছে।
রাফিনিয়ার কথা আলাদা করে বলতেই হয়। স্বপ্নের মতো এক মৌসুম কাটছে তাঁর। ১২ গোল নিয়ে এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা। চলতি মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২৯ গোল করার পাশাপাশি ২০টি গোলও বানিয়েছেন। আর ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে ছুঁয়েছেন মেসিকেও। চ্যাম্পিয়নস লিগে এখন পর্যন্ত ১১ ম্যাচে ১২ গোল করার পাশাপাশি ৭টি গোল বানিয়েছেন রাফিনিয়া। ২০১১-১২ মৌসুমে মেসিরও ১১ ম্যাচে মোট ১৯ গোলে সংশ্লিষ্টতা ছিল, যা চ্যাম্পিয়নস লিগের এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলে সংশ্লিষ্টতার ক্লাব রেকর্ড মেসির। এখন তাতে ভাগ থাকবে ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গারেরও।
অবশ্য রাফিনিয়া যে ফর্মে আছেন, তাতে শুধু মেসি নয় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর গড়া চ্যাম্পিয়নস লিগের এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের সংশ্লিষ্টতার রেকর্ডও ভাঙতে পারেন। ২০১৩-১৪ মৌসুমে ১১ ম্যাচে মোট ২১ গোলে সংশ্লিষ্টতা ছিল রোনালদোর। আপাতত এবারের মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি গোলও বানিয়েছেন রাফিনিয়া।
শুধু তাই নয়, চ্যাম্পিয়নস লিগের এক মৌসুমে ব্রাজিলিয়ানদের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলও এখন রাফিনিয়ার। টুর্নামেন্টটির পূর্ববর্তী সংস্করণ ইউরোপিয়ান কাপে অবশ্য রেকর্ডটি এসি মিলান কিংবদন্তি হোসে আলতাফিনির। সাবেক এ ফরোয়ার্ড ১৯৬২-৬৩ ইউরোপিয়ান কাপে করেছিলেন ১৪ গোল। রাফিনিয়াকে নিয়ে ফ্লিক বলেন, ‘সব সময়ই জানি সে অসাধারণ খেলোয়াড়...দল তার কাঁধে সওয়ার হয়েছে।’ তবে রাফিনিয়ার দাবি অন্য কিছু, ‘আমি সতীর্থদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের ফুটবল খেলার চেষ্টা করি, যেটা আনন্দ দেয়। আমরা একে অপরকে খুব ভালো বুঝি, সেটা দলের জন্যও সহায়ক।’
লেভা চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট ম্যাচে গোলসংখ্যায় ছুঁয়ে ফেললেন করিম বেনজেমাকে। দুজনেরই সমান ৩৪ গোল। ৬৭ গোল নিয়ে শীর্ষে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, ৪৯ গোল নিয়ে দুইয়ে মেসি। তবে ৪ গোল দিলেও সেমিফাইনাল নিয়ে এখনই আশায় ভাসতে রাজি নন লেভা, ‘আমরা ভালো খেলেছি তবে কেউ সেমিফাইনাল নিয়ে ভাবছি না। আগামী সপ্তাহে বড় ম্যাচ আছে।’ রাফিনিয়ার দাবিও ঠিক এমনই, ‘ফল নিয়ে আমি খুব খুশি, তবে এটা প্রথম ধাপ।’ বার্সা কোচ ফ্লিকের কণ্ঠেও একই সুর, ‘কী ঘটতে পারে কেউ জানে না। ফুটবল খুব পাগলাটে খেলা। আমাদের আজকের (গত রাত) মতো খেলতে হবে।’
ফিরতি লেগ ডর্টমুন্ডের মাঠে আগামী মঙ্গলবার।