জাগালোর সম্পত্তির ভাগ–বাঁটোয়ারা নিয়ে পরিবারে অশান্তি

ছোট ছেলে মারিও সিজারের পরিবারের সঙ্গে মারিও জাগালো। তাঁর সম্পত্তির বেশিরভাগ অংশ সিজারকেই দিয়ে গেছেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তিইনস্টাগ্রাম

৫ জানুয়ারি ৯২ বছর বয়সে মারা গেছেন মারিও জাগালো। ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কিংবদন্তির মৃত্যুর এক মাস না পেরোতেই তাঁর সম্পত্তির ভাগ–বাঁটোয়ারা নিয়ে পরিবারে অশান্তি দেখা দিয়েছে।

ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম ‘ও গ্লোবো’ জানিয়েছে, জাগালো তাঁর সম্পদের ৫০ শতাংশ দিয়ে গেছেন ছোট ছেলেকে, বাকি ৫০ শতাংশ রেখে গেছেন নিজের ও অন্য তিন সন্তানের নামে। এ নিয়ে আইনি লড়াইয়ে নেমেছেন তিন সন্তান।

খেলোয়াড়–কোচ উভয় ভূমিকায় প্রথম হিসেবে বিশ্বকাপজয়ী জাগালো ১৯৫৫ সালে বিয়ে করেন আলসিনা দি কাস্ত্রোকে। এই দম্পতির চার সন্তান—দুই ছেলে পাওলো হোর্হে ও মারিও সিজার এবং দুই মেয়ে মারিয়া এমিলিয়া ও মারিয়া ক্রিস্তিনা।

খেলোয়াড়–কোচ উভয় ভূমিকায় বিশ্বকাপ জেতা প্রথম ব্যক্তি মারিও জাগালো
ফিফা

২০১২ সালে ৮০ বছর বয়সে মারা যান জাগালোর স্ত্রী আলসিনা। মৃত্যুর আগে সর্বজনীন উত্তরাধিকার হিসেবে চার সন্তানের প্রত্যেককে ৫ লাখ ব্রাজিলিয়ান রিয়াল (১ কোটি ১১ লাখ টাকা) করে দিয়ে যান আলসিনা।

আরও পড়ুন

তবে জাগালো তাঁর সন্তানদের মধ্যে সম্পত্তি সমানভাগে ভাগ করেননি। মৃত্যুর আগে সম্পত্তির অর্ধেকটাই তিনি দিয়ে গেছেন ছোট ছেলে মারিও সিজার ও তাঁর পরিবারকে। দীর্ঘদিন ধরে জাগালো মারিও সিজারের সঙ্গেই থাকতেন।

বাকি তিন সন্তানকে কেন সম্পত্তির ভাগ কম দিয়েছেন, সেটাও জানিয়ে গেছেন জাগালো। দলিলে লিখে গেছেন, ছোট ছেলে মারিও সিজার তাঁকে দেখভাল করলেও অন্য তিন সন্তান তাঁর সম্পত্তি থেকে প্রয়াত মায়ের ভাগ বাদ দিতে উঠেপড়ে লেগেছিল। এ নিয়ে তাঁদের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন জাগালো।

তবে পাওলো হোর্হে, মারিয়া এমিলিয়া ও মারিয়া ক্রিস্তিনা দলিলে লেখা বাবার দাবি নাকচ করেছেন। তিনজনের আইনজীবী আনেলিসা তেক্সেইরা ও দানিয়েল ব্লাঙ্ক জানিয়েছেন, ২০১৬ সাল থেকে পাওলো, এমিলিয়া ও ক্রিস্তিনা তাঁদের বাবার সঙ্গে যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করেও পারেননি। ৯ জানুয়ারি, অর্থাৎ জাগালোর মৃত্যুর চার দিন পর তাঁরা সম্পত্তির দলিল খোলা ও তা কার্যকর করার অনুরোধ জানান। কিন্তু দলিলে তাঁরা দেখতে পান, জাগালো সন্তানদের মধ্যে সম্পত্তি সমানভাবে বণ্টন করেননি। এরপরেই নতুন করে পারিবারিক বিরোধ দেখা দেয়।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশের আইনে মৃত বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে প্রত্যেক ছেলে যা পান, মেয়ে তার অর্ধেক পান। অর্থাৎ বাংলাদেশে সম্পত্তি ২ : ১ অনুপাতে ছেলে ও মেয়ের মধ্যে ভাগ হয়।

মারিও জাগালোর স্ত্রী আলসিনা দি কাস্ত্রো ২০১২ সালে মারা গেছেন
এক্স

কিন্তু ব্রাজিলের আইন আলাদা। ব্রাজিলে ছেলে হোক কিংবা মেয়ে, প্রত্যেক সন্তান মৃত বাবার সম্পত্তির সমান ভাগীদার। তবে কোনো বাবা চাইলে তাঁর সম্পত্তির সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ বা অর্ধেক একজন সন্তানকে দিতে পারেন। আইন অনুযায়ী, জাগালো সেটাই করেছেন। ‘গ্লোবো’ জানিয়েছে, ছোট ছেলে মারিও সিজারকে দিয়েছেন সম্পত্তির ৫০ শতাংশ।

আরও পড়ুন

যদিও সিজারের দাবি, তাঁর বাবা পাওলো, এমিলিয়া, ক্রিস্তিনার ওপর অসন্তুষ্ট ছিলেন বলে কোনো সম্পত্তি দিতে চাননি। তবে সেটা আইনের পরিপন্থী হওয়ায় সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়েছে।

ব্রাজিলের উত্তরাধিকার পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞ পাবলো আরুদাও জাগালোর সম্পত্তি ভাগ–বাঁটোয়ারায় কোনো সমস্যা দেখেন না। বরং ‘ও গ্লোবো’কে আরুদা যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তাতে জাগালোর ছোট ছেলে সিজারের আরও ১২.৫০ শতাংশ সম্পত্তি বেশি পাওয়ার কথা।

মৃত্যুুর আগে নিজের শেষ জন্মদিনে পরিবারের সঙ্গে জাগালো
ইনস্টাগ্রাম

জাগালো সিজারকে ৫০ শতাংশ সম্পত্তি দিয়ে গেছেনই, এর সঙ্গে বাকি ৫০ শতাংশ থেকেও ভাগ পাবেন তিনি। ব্রাজিলের আইন অনুযায়ী, জাগালোর সম্পত্তির বাকি ৫০ শতাংশ চার সন্তানের মধ্যে সমানভাগে ভাগ করলে প্রত্যেকে পাবেন ১২.৫০ শতাংশ করে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে জাগালোর ছোট ছেলে সিজার একাই পাবেন ৬২.৫০ শতাংশ আর তাঁর তিন ভাই–বোন পাওলো, এমিলিয়া ও ক্রিস্তিনা মিলে পাবেন ৩৭.৫০ শতাংশ।