বার্সেলোনার ‘ক্লপ’ অস্কার, জাভির আপন বড় ভাই তিনি

জাভির ভাই ও সহকারী অস্কার হার্নান্দেজএক্স

পিঠাপিঠি দুই ভাই তাঁরা। বয়সের ব্যবধান মাত্র তিন বছরের। ফুটবল–পায়ে যাত্রাটা শুরুও করেছিলেন কাছাকাছি সময়ে। কিন্তু ধীরে ধীরে দুই ভাইয়ের পথটা বেঁকে গেল দুদিকে। বলা হচ্ছে বার্সেলোনা ও স্পেনের কিংবদন্তি ফুটবল জাভি হার্নান্দেজ ও তাঁর বড় ভাই অস্কার হার্নান্দেজের কথা।

ফুটবল মহাকাশে জাভি জ্বলজ্বলে এক নাম হলেও অস্কার সেখানে মিটিমিটি করে জ্বলতে থাকা কোনো তারাও নন। জাভির মুঠোয় ভরা সাফল্যের বিপরীতে অস্কারের ক্যারিয়ার পরিসংখ্যান ঠিক বলার মতো নয়। তবে বার্সেলোনার ডাগআউটে জাভির সহকারী হয়ে আবার আলোচনায় এসেছেন অস্কার।

আরও পড়ুন

তেরেসা অনূর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা অস্কারের খেলোয়াড়ি–জীবন থেমে যায় ২০০৭ সালে। কখনো খেলেননি বড় কোনো ক্লাবেও। অস্কার যখন খেলোয়াড়ি–জীবন গুটিয়ে দূরের মেঘে হারিয়ে যাচ্ছিলেন, জাভির ক্যারিয়ার তখন ডানা মেলতে শুরু করছিল। এরপর স্পেন ও বার্সার সর্বকালের দুই সেরা স্কোয়াডের অন্যতম সদস্য হয়ে ওঠেন জাভি। বিশ্বকাপ, ইউরো, চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে শুরু করে ফুটবলে সম্ভাব্য সব সাফল্যে যুক্ত করেন নিজের নাম।

জাভি যখন সাফল্যের মধ্যগগনে জ্বলজ্বল করছিলেন, অস্কার তখন বিস্মৃত এক নাম। তাঁর পরিসংখ্যান ঘাটতে গিয়ে দেখা গেল, ২০০৭ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়টা পুরোপুরি শূন্য। অর্থাৎ এ সময়ে ফুটবলের কোথাও ছিলেন না অস্কার। এরপর বার্সেলোনা থেকে জাভির বিদায়ে পুনরুত্থান ঘটে অস্কারের। এই ঘটনা আবার মিলিয়ে দেয় দুই ভাইকেও। ২০১৫ সালে বার্সা ছেড়ে কাতারি ক্লাব আল সাদে যান জাভি। সে বছরই কাতারের খেলোয়াড় তৈরির প্রতিষ্ঠান এস্পায়ার একাডেমির হয়ে কাজ শুরু করেন অস্কার।

২০১৯ সাল পর্যন্ত এই একাডেমিতে কাজ চালিয়ে যান অস্কার। এই একাডেমিতেই মূলত নিজেকে তৈরি করেন তিনি। ২০১৯ সালে আল সাদে খেলোয়াড়ি–জীবন শেষ করে কোচিং–জীবন শুরু করেন জাভি। তখন তাঁর সহকারী হিসেবে নিয়ে আসেন অস্কারকে। বোঝাই যাচ্ছে, অস্কারকে নিজের সঙ্গী করতেই এত দিন পরিকল্পিতভাবে তৈরি করছিলেন জাভি। ২০২১ সালে আল সাদ ছেড়ে জাভি চলে যান বার্সায়। স্বাভাবিকভাবেই দোহা থেকে বার্সেলোনার ফ্লাইটে তাঁর সঙ্গী হন অস্কারও।

বার্সাতেই মূলত পরিচিতি পান অস্কার। জাভির অবর্তমানে বার্সার ডাগআউটেও পালন করেন দায়িত্ব। দেখতে অনেকটা লিভারপুলের জার্মান কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপের মতো হওয়ায় অনেকে তাঁকে মজা করে অস্কার ক্লপ বলেও ডাকেন। কোচ হিসেবে জাভি বা ক্লপের সঙ্গে তুলনার অবস্থানে না গেলেও ডাগআউটে তাঁর সাফল্য কিন্তু ঈর্ষণীয়!
জাভির বিভিন্ন সময়ের নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন পর্যন্ত লা লিগায় ৭ ম্যাচে বার্সার কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন অস্কার।

আরও পড়ুন

আর এই সাত ম্যাচের প্রতিটিতে জয় পেয়েছে কাতালান ক্লাবটি। শুরুটা হয়েছিল ২০২২-২৩ মৌসুমে ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে ১-০ গোলের জয় দিয়ে। আর সর্বশেষ গতকাল রাতে কাদিজের বিপক্ষে ম্যাচেও নিষেধাজ্ঞার কারণে ডাগআউটে দাঁড়াতে পারেননি জাভি। তাঁর পরিবর্তে দায়িত্ব বর্তায় অস্কারের ওপর। আর এই ম্যাচে জোয়াও ফেলিক্সের দারুণ এক ওভারহেড কিকে ১-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বার্সা।

এ মৌসুম শেষেই বার্সাকে বিদায় জানাবেন জাভি। ইউরোপিয়ান সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, জাভির সঙ্গে ক্লাব ছাড়বেন অস্কারও। এরপর হয়তো ভাইয়ের সঙ্গে অন্য কোথাও ঘর বাঁধবেন অস্কারও।

কিন্তু এরই মধ্যে ৭ ম্যাচে দায়িত্ব পালন করে নিজেকে চিনিয়েছেন অস্কার। হোক না চেহেরার জন্য, তবু ক্লপের মতো বিশ্বসেরা কোচের নাম তো জুটেছে তাঁর সঙ্গে। কে জানে, এখান থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে কোচিংয়ের পথে নিজের একক পথচলাটা শুরু করেন কি না বার্সেলোনার ‘ক্লপ’!