সিটির কারণেই ভেঙেছে গার্দিওলার সংসার
ম্যানচেস্টার সিটি কোচ পেপ গার্দিওলার সংসার ভাঙার খবরটা পুরোনো। অবাক করা বিষয় হলো, ১ বা ২ বছর নয়, ১০ বছরের দাম্পত্যজীবনের অবসান হয়েছে তাঁর। ঘর ভাঙার সংবাদ চাউর হওয়ার পর থেকেই প্রশ্নটি তাই ঘুরপাক খাচ্ছিল, কী এমন কারণে বিবাহবিচ্ছেদ হলো গার্দিওলার? উত্তর সম্ভবত মিলেছে। কারণ, ম্যানচেস্টার সিটি!
ব্রাজিলিয়ান বংশোদ্ভূত সাংবাদিক ও লেখক ক্রিস্টিনা সেরার সঙ্গে ১৯৯৪ সাল থেকে একসঙ্গে বসবাস শুরু গার্দিওলার। ২০১৪ সালে বার্সেলোনায় ক্রিস্টিনাকে বিয়ে করে সেই সম্পর্কের পরিণতি দেন গার্দিওলা। এক দশক পেরিয়ে আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন দুজন। কারণটা গতকাল জানিয়েছেন স্পেনের দুই সংবাদকর্মী লোরেনা ভাসকেস ও লরা ফা। শোবিজ প্রতিবেদনের জগতে একসঙ্গে তাঁদের ‘মামারাজ্জিস’ বলে ডাকা হয়। স্পেনের সংবাদমাধ্যম ‘এল পেরিওদিকো’য় প্রকাশিত তাঁদের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, গত নভেম্বরে সিটির সঙ্গে গার্দিওলার চুক্তি নবায়ন করাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে।
বায়ার্ন মিউনিখ ছেড়ে ২০১৬ সালে সিটি কোচের দায়িত্ব নেন গার্দিওলা। এর তিন বছর পর ২০১৯ সালে ম্যানচেস্টার শহর ছেড়ে বার্সেলোনায় ফেরেন ফ্যাশন উদ্যোক্তা ক্রিস্টিনা। তিন সন্তানের মধ্যে সবার ছোট ভ্যালেন্তিনাকে নিয়ে বার্সেলোনায় গিয়ে নিজের ব্যবসায়িক কাজকর্মে মনোযোগ দেন ক্রিস্টিনা। তখন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘সানডে মিরর’–এর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল, গার্দিওলা ও ক্রিস্টিনা ‘দূরে থেকেও একসঙ্গে’ মানে, সম্পর্ক আছে কিন্তু আলাদা বসবাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে ইংল্যান্ডে নিয়মিত আসা-যাওয়া ছিল ক্রিস্টিনার।
দুজনের সম্পর্ক নিয়ে ভ্রকূটি তৈরি হয় গত বছর সেপ্টেম্বরে। গ্রীষ্মের ছুটি শেষে মোটামুটি জানাজানি হয়ে যায়, ক্রিস্টিনা ম্যানচেস্টারে যাওয়া বন্ধ করেছেন। পরের মাসে তাঁদের ঘনিষ্ঠজনেরা ‘দুজনের মধ্যে দূরত্ব’ তৈরি হওয়ায় শঙ্কায় পড়ে যান। তবে এরপরও বড়দিনের ছুটিটা বার্সেলোনায় কাটিয়েছেন গার্দিওলা ও ক্রিস্টিনা, কিন্তু তাতেও ঘর টেকেনি। গার্দিওলা সিটির সঙ্গে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত চুক্তি নবায়নের পর বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন ক্রিস্টিনা। এই চুক্তি নবায়নের কারণেই ক্রিস্টিনা শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। তবে প্রতিবেদনে এটাও জানানো হয়েছে, বিবাহবিচ্ছেদের আইনগত কাগজপত্রে দুই পক্ষ সই করেছে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
সিটির সঙ্গে গার্দিওলার আগের চুক্তির মেয়াদ ছিল চলতি মৌসুম পর্যন্ত। কোচিং ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো টানা চার হারের পর গার্দিওলা জানিয়েছিলেন, তিনি সিটিকে ছেড়ে যেতে পারছেন না, তাই চুক্তি নবায়ন করেছেন। মামারাজ্জিদের সাপ্তাহিক পডকাস্টে লোরেনা বলেন, ‘পেপের বিরুদ্ধে ক্রিস্টিনার অনেক অভিযোগের একটি হলো, তিনি নিজের পেশাদারি প্রজেক্টে অনেক বেশি মনোযোগী। সে (ক্রিস্টিনা) তাকে খুব বেশি জড়িয়ে পড়তে দেখেছে, যেটাকে আমরা বলতে পারি ফুটবলের মহাবিশ্ব। সম্ভবত এ কারণেই সে নিজের জীবনকে অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়ার কথা ভেবেছে।’
বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তটি কে নিয়েছেন, সে বিষয়েও বলেছেন লোরেনা, ‘ডিসেম্বরে তারা বার্সেলোনায় গিয়ে সন্তানদের নিয়ে একসঙ্গে বড়দিন কাটানোর পর বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তটি তখনই নেওয়া হয় এবং সিদ্ধান্তটি ক্রিস্টিনার।’
সিটির সঙ্গে চুক্তি নবায়নের আগের কয়েক মাসে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল, গার্দিওলা ইতিহাদ ছেড়ে যাবেন। লরা এ বিষয় ধরে পডকাস্টে তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেন, ‘ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে চুক্তি নবায়নের সিদ্ধান্ত তিনি (গার্দিওলা) নেওয়ার পরই সে (ক্রিস্টিনা) ওই সিদ্ধান্ত (বিচ্ছেদ) নিয়েছিল। কারণ, তার আগের মাসগুলোয় পেপ ক্লাব ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আমরা জানতাম, তার অনেক লক্ষ্যের একটি ছিল ক্লাব ছেড়ে আরব আমিরাতে যাওয়া। তার কাছের মানুষেরাও তখন তাকে বিদায় জানাচ্ছিল, কারণ, সবাই জানত সে চুক্তি নবায়ন করবে না।’
লরা আরও বলেন, ‘চুক্তি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত তাকে তার স্ত্রীর কাছাকাছি এনেছিল। কিন্তু সে যখন চুক্তি নবায়ন করে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল, ক্রিস্টিনা ভেবেছে যথেষ্ট হয়েছে এবং বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্তটা তার।’