কাঁধ থেকে ‘বোঝা’ নামার পর সনের হ্যাটট্রিক

হ্যাটট্রিকের পর সন হিউং-মিনের উদযাপন।ছবি: এএফপি

প্রিমিয়ার লিগে গত মৌসুমে যৌথভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। কিন্তু নতুন মৌসুম আসতেই যেন গোল করা ভুলে গিয়েছিলেন সন হিউং-মিন। এক এক করে টানা আটটি ম্যাচ খেলেছেন, একটাও গোল করতে পারেননি টটেনহামের দক্ষিণ কোরিয়ান ফরোয়ার্ড। ছন্দহীন সনকে তাই লেস্টার সিটির বিপক্ষে ম্যাচে বেঞ্চে বসিয়ে রাখেন আন্তোনিও কন্তে।
শুরুর একাদশে জায়গা না পাওয়া সেই সনই বদলি হিসেবে মাঠে নেমে ২৭ মিনিটের মধ্যে করেছেন ৩ গোল। প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে টটেনহামের কোনো খেলোয়াড় বদলি নেমে হ্যাটট্রিক করলেন এই প্রথম। খেলার প্রথমে পিছিয়ে পড়া টটেনহাম সনের শেষের ঝলকের সুবাদে জয় পেয়েছে ৬-২ গোলের বড় ব্যবধানে।

আরও পড়ুন

টানা আট ম্যাচ গোল না পাওয়ার পর এক ম্যাচেই তিনটি! সনের রীতিমতো আকাশে ওড়ার কথা। তবে তিন গোল নয়, ম্যাচের ৭৩ মিনিটে করা প্রথম গোলটিই আবেগপ্রবণ করে দিয়েছে টটেনহাম ফরোয়ার্ডকে।

সনের কাছে মনে হয়েছে কাঁধ থেকে বড় এক বোঝা নেমে গেছে তাঁর, ‘আমি খুব হতাশার মধ্যে ছিলাম। দল খুব ভালো করছে, কিন্তু আমি কিছুই করতে পারছিলাম না। প্রথম গোলের পর আমি ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমার সব হতাশা, সব নেতিবাচক অনুভূতি যেন এক নিমেষে উড়ে গেল।’

হ্যাটট্রিকের পর সনকে নিয়ে এভাবেই আনন্দে মেতে ওঠেন হজবজার্গ–হ্যারি কেইনরা।
ছবি: এএফপি

আগের ম্যাচগুলোয় গোলমুখে ১৭টি শট নিয়েও বিফল হওয়ার পর এবার তিন শটে ৩ গোল, সনের মনে হচ্ছে এসব গোল সৌভাগ্যের, ‘ফুটবলে মাঝেমধ্যে পাগলাটে কাণ্ডকারখানা ঘটে। কখনো কখনো বল জালের ভেতরে যেতেই চায় না, আবার কখনো তিনবারও চলে যায়। তিনটি গোলই আমার জন্য সৌভাগ্যের। আমি গর্বিতও।’

টটেনহাম কোচ কন্তে সনকে মাঠে নামান ৫৯ মিনিটে, রিচার্লিসনের বদলি হিসেবে। এর ১৪ মিনিটে পর ২৫ গজ দূর থেকে ডান পায়ের শটে গোল পান সন।

ম্যাচের ৮৪ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটি ২০ গজ দূর থেকে, এবার বাঁ পায়ে। এর ২ মিনিট পরই তৃতীয় গোলটি পেয়ে যান ৩০ বছর বয়সী দক্ষিণ কোরিয়ার ফরোয়ার্ড। অফসাইডের কারণে প্রথমে বাতিল হলেও পরে ভিএআরে আসে গোলের স্বীকৃতি, দারুণ এক মাইলফলক স্পর্শ করেন সন।
সনের সামর্থ্য নিয়ে কখনোই সন্দেহ ছিল না কন্তের। যখন গোল পাচ্ছিলেন না, সমালোচনা হচ্ছিল চারদিক থেকে, বারবারই শিষ্যের পাশে দাঁড়িয়েছেন ইতালিয়ান কোচ। কিন্তু আট ম্যাচ খেলানোর পর কি সনকে নিয়ে ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছিলেন কন্তে?

ব্যাপারটি সে রকম নয় বলেই মন্তব্য করলেন টটেনহামের কোচ, ‘আমাদের আসলে টানা অনেক ম্যাচ আছে। প্রতি তিন দিনে একটি ম্যাচ। সন শুরু থেকে প্রতিটি ম্যাচেই খেলেছে। ওই সময় রিচার্লিসনকে বেঞ্চে রেখেছিলাম। তারপর বেঞ্চে বসিয়েছি কুলুসেভস্কিকে। আর এই ম্যাচে বসালাম সনকে। আমি নিজে খেলোয়াড় ছিলাম। জানি, প্রত্যেক খেলোয়াড় প্রতিটি ম্যাচ খেলতে চায়। কিন্তু টানা খেললে শারীরিক ও মানসিক শক্তি হারিয়ে যায়। অনেক সময় নিজেই বুঝতে পারে না এভাবে খেললে পারফরম্যান্স নিচের দিকে নেমে যায়।’

আরও পড়ুন

টানা খেলার ধকল থেকে মুক্তি দিতে সনকে বেঞ্চে বসানোটা যে কাজে লেগেছে, সেটি তো ম্যাচের স্কোরশিটই বলছে।

কন্তে জানিয়েছেন, মাঠে নামানোর আগে নাকি সনকে হ্যাটট্রিকের চ্যালেঞ্জও জানিয়েছিলেন তিনি, ‘ওর আজকের পারফরম্যান্স নিয়ে আমি খুবই খুশি। ওকে বলেছিলাম, তুমি যদি ৩০ মিনিটের মধ্যে ৩টি গোল করে ফেলতে পারো, এ পরীক্ষা-নিরীক্ষা আবারও করব। তখন আসলে কথাটা মজা করে বলেছিলাম। আমি সৌভাগ্যবান যে কিছু ভালো মানুষকে আমি দলে পেয়েছি।’