ইউরোয় গত মঙ্গলবার রাতে শেষ ষোলোর ম্যাচে স্লোভেনিয়াকে টাইব্রেকারে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে পর্তুগাল। এ ম্যাচে মাঠের বাইরের একটি ভিডিও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, এক সমর্থককে ঘুষি ও লাথি মারছেন নিরাপত্তাকর্মীরা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পুলিশ ওই ঘটনার তদন্তে নেমেছে।
ফ্রাঙ্কফুর্টের ভাল্ডস্টাডিয়নে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে স্টেডিয়ামের ভেতরের একটি ফুটেজ মঙ্গলবার পর্তুগিজ সংবাদমাধ্যমে দেখানো হয়। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, হলুদ ও কমলা রঙের ভেস্ট পরা কিছু স্টাফ দুজন ব্যক্তিকে টানেলে আটকে রেখেছেন। এই টানেল দিয়েই মাঠে ঢুকতে হয়। সেসব ব্যক্তির ভেস্টের পেছনে লেখা ‘স্টুয়ার্ড’—অর্থাৎ ইউরো আয়োজনে ম্যাচ ও স্টেডিয়াম–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধরনের দায়িত্বে থাকা কর্মী তাঁরা। তবে টেলিগ্রাফ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্টুয়ার্ডরা নিরাপত্তাকর্মী।
ভিডিওতে দেখা গেছে, স্টুয়ার্ডরা এক ব্যক্তিকে টানেলের মেঝেতে উপুড় করে শুইয়ে দিয়েছেন। মেঝের সঙ্গে সেঁটে ছিল সেই ব্যক্তির মুখ। অন্য ব্যক্তিকে দেয়ালের সঙ্গে সেঁটে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন দুজন স্টুয়ার্ড। আরেকজন স্টুয়ার্ড সেই ব্যক্তির মাথায় তিনটি ঘুষি মারেন। লোকটিকে মারতে মারতে মেঝেতে ফেলা হয়। এরপর উপর্যপুরি লাথি মারেন কয়েকজন স্টুয়ার্ড।
ঘটনা কী নিয়ে—এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স–এ এক ব্যক্তি জানতে চাওয়ার পর ফ্রাঙ্কফুর্ট পুলিশ এক পোস্টে জানিয়েছে, ‘এটি আমাদের নজরে এসেছে এবং তদন্ত করা হচ্ছে।’ উয়েফার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পর্তুগাল–স্লোভেনিয়া ম্যাচে এক ভক্তের সঙ্গে স্টুয়ার্ডদের ঘটনাটা আমাদের নজরে পড়েছে। যেকোনো সহিংসতামূলক আচরণের নিন্দা জানাই আমরা। পুলিশ এখন এ ঘটনার তদন্ত করছে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এ নিয়ে মন্তব্য করার মতো অবস্থানে নেই উয়েফা।’
ইউরোপের বিভিন্ন সমর্থক গোষ্ঠীকে একসূত্রে গাঁথা ‘ফুটবল সাপোটার্স ইউরোপ’ গোষ্ঠী উয়েফার সঙ্গে সমন্বয় রেখেই কাজ করে। এই গোষ্ঠীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘দোষী ব্যক্তি যে–ই হোক, স্টেডিয়ামে তার ঠাঁই নেই এবং কৃতকর্মের শাস্তি পেতে হবে।’
ইংলিশ ফুটবল পুলিশিং ইউনিটের মতো পর্তুগালেও রয়েছে পাবলিক সিকিউরিটি পুলিশ। এই সংস্থা বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ এবং দেশ ও দেশের বাইরের সমর্থকদের সঙ্গে কাজ করে। তাদের বিবৃতিতে দাবি করা হয়, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, স্টুয়ার্ডরা যে দুজন ব্যক্তিকে স্টেডিয়াম থেকে বের করে দিয়েছেন, তারা পর্তুগিজ নাগরিক কি না, সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পাবলিক সিকিউরিটি পুলিশের (পিএসপি) বিবৃতিতে বলা হয়, ‘একদল স্টুয়ার্ড ও দুজন সমর্থকের মধ্যে একটি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তারা (দুই ব্যক্তি) পর্তুগালের সমর্থক। ব্যাপারটি জনসমক্ষে আসার আগেই জাতীয় ডেলিগেশন কর্তৃপক্ষ জেনেছে এবং কয়েকটি পদক্ষেপও নিয়েছে। জার্মান কর্তৃপক্ষ, আন্তর্জাতিক পুলিশ করপোরেশন সেন্টার ও উয়েফাকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করা হচ্ছে...প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি যে হামলার শিকার হওয়া ব্যক্তিরা পর্তুগিজ নাগরিক।’
এবার ইউরোয় নিরাপত্তাব্যবস্থা বেশ সমালোচিত হচ্ছে। গ্রুপ পর্বে ডর্টমুন্ডে পর্তুগাল–তুরস্ক ম্যাচে ছয়বার দর্শকের মাঠে ঢোকার ঘটনা ঘটেছে। পর্তুগিজ কিংবদন্তি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে সেলফি তুলতে মাঠে ঢুকেছিলেন সেসব দর্শক। উয়েফা এ ঘটনার পর নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
কিন্তু গেলসেনকির্চেনে নিজেদের পরের ম্যাচে পর্তুগাল জর্জিয়ার কাছে হেরে যাওয়ার পর এক সমর্থক নিরাপত্তাবেষ্টনী ডিঙিয়ে রোনালদোর গায়ের ওপর পড়ার চেষ্টা করেন।
শুধু তা–ই নয়, এক জার্মান ইউটিউবার দাবি করেছেন, অনলাইন থেকে কেনা কস্টিউম পরে এবার ইউরোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছদ্মবেশে মাঠে ঢুকেছিলেন তিনি। কিন্তু কেউ তাঁকে ধরতে পারেননি।
এ ছাড়া গত রোববার শেষ ষোলোয় জার্মানি–ডেনমার্ক ম্যাচে ডর্টমুন্ডের সিগনাল ইদুনা পার্কের ছাদে উঠেছিলেন এক দর্শক। তাঁর পিঠে ছিল বিশাল ব্যাগ। পুলিশ সেই ব্যক্তিকে আটক করে জানিয়েছে, তিনি ফটোগ্রাফার হতে চান এবং সেই ভাবনা থেকেই নাকি ছাদে উঠেছিলেন। কোনো ক্ষতি করার উদ্দেশ্য তাঁর ছিল না।