লাঁসের কাছে যে ৪ কারণে হারল পিএসজি

নতুন বছরের প্রথম ম্যাচে হেরে গেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পেরাএএফপি

বিশ্বকাপ-বিরতির পর পিএসজির দ্বিতীয় ম্যাচ ছিল গতকাল। এখনো ছুটিতে থাকায় এ ম্যাচে খেলতে পারেননি লিওনেল মেসি। লাল কার্ডের খড়্গে পড়ে খেলা হয়নি নেইমারেরও। জ্বলে উঠতে পারেননি এ সময়ের আরেক সেরা তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পেও। সব মিলিয়ে মেসি-নেইমারবিহীন পিএসজিও জিততে পারেনি। লাঁসের মাঠ থেকে ৩-১ গোলে হেরে এসেছে ক্রিস্তফ গালতিয়েরের দল।

লাঁসের মাঠে পিএসজি খেলতে নেমেছিল টানা ২৫ ম্যাচ অপরাজিত থেকে। লাঁসের কাছে হেরে সেই অপরাজয়ের যাত্রা থামার পর স্বাভাবিকভাবেই পিএসজির কোচ আর খেলোয়াড়েরা হতাশ। একই সঙ্গে চলছে হারের কারণ বিশ্লেষণ। লাঁসের বিপক্ষে ম্যাচটি বিশ্লেষণ করে পিএসজির হারের যে কারণগুলো পাওয়া গেল, তা দেখে আসা যাক—

আরও পড়ুন

মেসি-নেইমারের না থাকা

পিএসজির আসল শক্তি তাদের আক্রমণভাগে। মেসি, নেইমার ও এমবাপ্পে—সময়ের অন্যতম সেরা তিন ফরোয়ার্ড খেলেন প্যারিসের ক্লাবটিতে। সংক্ষেপে এই ত্রয়ীকে এমএনএম নামে চেনে ফুটবল–বিশ্ব। অনেকের মতেই, সময়ের সেরা আক্রমণ ত্রয়ী এটা। ছুটি কাটিয়ে এখনো পিএসজিতে ফেরেননি মেসি, আগের ম্যাচে লাল কার্ড দেখায় লাঁসের বিপক্ষে ছিলেন না নেইমারও। স্বাভাবিকভাবেই ত্রয়ীর বিপক্ষে দুই সঙ্গীকে ছাড়া বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপই হয়ে পড়েছিলেন এমবাপ্পে।

আরও পড়ুন

মেসি-নেইমার থাকলে লাঁসের রক্ষণকে ব্যস্ত থাকতে হতো তিন তারকাকে সামলানো নিয়ে। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক মেসি আর ব্রাজিলের ফরোয়ার্ড নেইমার না থাকায় শুধু এমবাপ্পেকেই সামলাতে হয়েছে লাঁসের রক্ষণকে। কাজটা তাই তাদের জন্য সহজ হয়ে পড়ে। যার ফলে শুধু রক্ষণেই আটকে না থেকে আক্রমণ নিয়েও ভাবতে পেরেছেন লাঁসের কোচ। এর ফলও পেয়েছেন ম্যাচে।

রক্ষণে রামোস-মারকিওনসদের ভুল

সের্হিও রামোসের বয়স যে ৩৬ বছর হয়ে গেছে, লাঁসের বিপক্ষে পিএসজির ম্যাচটি যেন আরেকবার তা জানান দিয়ে গেল। বল নিয়ে ওপরে উঠলে এখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সময়মতো নিজের জায়গায় ফিরতে পারেন না স্প্যানিশ ডিফেন্ডার। লাঁসের বিপক্ষে ম্যাচে বেশ কয়েকবারই এই দৃশ্য চোখে পড়েছে। অন্যদিকে ব্রাজিলের ডিফেন্ডার মারকিনিওস এ ম্যাচে করেছেন দৃষ্টিকটু কিছু ভুল। এর সুবিধা খুব ভালোভাবেই নিতে পেরেছে লাঁসের আক্রমণভাগ।

মার্কো ভেরাত্তিরা মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি
এএফপি

প্রথম গোলটির কথা ধরুন, বক্সের বাঁ প্রান্তে বাধাহীন ছিলেন ফ্লোরিয়ান সতোকা। তিনি নির্বিঘ্নভাবে ক্রস ফেলেন বক্সে। সেটি ঠিকভাবে বিপদমুক্ত করতে পারেননি পিএসজির গোলকিপার জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা। বল গিয়ে পড়ে বক্সের মধ্যে অরক্ষিত থাকা ফ্রাঙ্কোভস্কির পায়ে। দারুণ এক ভলিতে বল জালে জড়ান তিনি। এ গোলটির সময় রামোস বা মারকিনিওসদের কেউই জায়গামতো ছিলেন না।

ক্লদ মাউরিসের করা লাঁসের তৃতীয় গোলটির সময় মারকিওনস অহেতুক স্লাইড করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। তাঁকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়ান মাউরিস।

প্রতি আক্রমণের বিপক্ষে দুর্বলতা

লাঁসের বিপক্ষে ম্যাচটি পিএসজির একটি দুর্বলতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেছে। ম্যাচের প্রায় শুরু থেকেই মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় লাঁস। পিএসজির মাঝমাঠ আর রক্ষণকে নিজেদের অর্ধে টেনে আনার চেষ্টা করে তারা। আর যখনই পিএসজির মাঝমাঠ আর রক্ষণ ওপরে উঠে এসেছে, দ্রুত প্রতি আক্রমণে গেছে লাঁস। এদিকে পিএসজির খেলোয়াড়েরা দ্রুত নিচে নামতে পারছিলেন না। লাঁসের তিনটি গোলই এসেছে বলতে গেলে এভাবে।

আরও পড়ুন

বোতলবন্দী এমবাপ্পে

মেসি-নেইমার না থাকায় শুধু এমবাপ্পেকেই আটকে রাখার চেষ্টা করতে হয়েছে লাঁসকে। এ কাজটা লাঁসের কোচ দিয়েছিলেন ফ্রাঙ্কোভস্কি ও গ্রাদিতকে। এমবাপ্পেকে বোতলবন্দী করে রাখার কাজটা তাঁরা খুব ভালোভাবেই করতে পেরেছেন। এ কারণেই তো এ ম্যাচে কোনো গোল নেই এমবাপ্পের। আর এটাও সত্যি যে ১৭ ম্যাচ শেষে ৪০ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা লাঁসের রক্ষণ এখন পর্যন্ত ফ্রেঞ্চ লিগ ‘আঁ’র সেরা। লিগের প্রথম ১৭ ম্যাচে সবচেয়ে কম ১১ গোল খেয়েছে তারা।