‘সুপারম্যান’ দোন্নারুম্মা

জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা কাল রাতে আর্সেনালের বিপক্ষে যেন সুপারম্যান হয়ে উঠেছিলেন

খেলা চলছিল পার্ক দে প্রিন্সেসে। রসিকতা চলছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কেউ কেউ বলছিলেন, পোস্টের নিচের আরেক জিয়ানলুইজি! দু-একজন আবার নামটা আরও ছেঁটেছেন, পোস্টের নিচে আরেক গিগি!

না, জিয়ানলুইজি বুফন নয়। ফুটবল মাঠে ‘জিয়ানলুইজি’ কিংবা ‘গিগি’ নাম শুনলে ইতালিয়ান কিংবদন্তিকে মনে পড়াই স্বাভাবিক। কিন্তু ২০২৩ সালে অবসর নেওয়া বুফনকে আর কাল রাতে পিএসজির পোস্টের নিচের দেখা যায়নি। সেখানে যিনি দাঁড়িয়েছিলেন তিনিও জিয়ানলুইজি। নামের বাকি অংশে দোন্নারুম্মা তবে কাজে বুফনের মতোই—তিন কাঠির নিচে এক সদস্যবিশিষ্ট মানবদেয়াল। বেশির ভাগ সময়েই যিনি হয়ে ওঠেন সুপারম্যান বা অতিমানব।

আর্সেনাল কাল রাতে সেই ‘দেয়াল’-এই ‘মাথা’ ঠুকে মরল!

আরও পড়ুন

ম্যাচের চার মিনিটের মাথায় আর্সেনাল উইঙ্গার গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লির শট ঠেকান। চার মিনিট পর আরও বড় বিস্ময়। বক্সের ভেতর থেকে আর্সেনাল মিডফিল্ডার মার্টিন ওডেগার্ডের শট অবিশ্বাস্য রিফ্লেক্সের মাধ্যমে ঠেকান দোন্নারুম্মা। ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার শরীরটা এত দ্রুত ও অবলীলায় বাঁ দিকে ফেললেন যে দোন্নারুম্মার বাঁ দিকে প্রায় ফাঁকা পোস্টে শট নিয়ে ওডেগার্ড আরেকটু হলে গোলের উদ্‌যাপন করেই ফেলেছিলেন। শেষ পর্যন্ত হতাশায় তাঁর মাথায় হাত।

ম্যাচে দারুণ কিছু সেভ করেন দোন্নারুম্মা
এএফপি

কিন্তু কারও কারও চোখে, আর্সেনালের বিপক্ষে সেমিফাইনাল ফিরতি লেগে ওটাই দোন্নারুম্মার সেরা সেভ নয়। বিরতির পর বুকায়ো সাকার শটে যে সেভ দিয়েছেন, সেটা অনেকের কাছেই ম্যাচের সেরা সেভ। ডান প্রান্ত থেকে সাকার বাঁ পায়ের বাঁকানো শট নিশ্চিতভাবেই পিএসজির জালে ঢুকত যদি দোন্নারুম্মা আবারও অবিশ্বাস্য রিফ্লেক্সে লাফিয়ে লম্বা হাতের ব্যবহারের বলটির গতিপথ পাল্টে না দিতেন। ওয়েম্বলিতে ২০২০ ইউরো ফাইনালেও সাকার পেনাল্টি ঠেকিয়েছিলেন ২৬ বছর বয়সী এ গোলকিপার। তবে এবার শুধু সেমিফাইনাল ফিরতি লেগ নয়, প্রথম লেগেও কিন্তু একই দোন্নারুম্মাকেই দেখা গেছে। লিয়ান্দ্রো ত্রোসার ও মার্তিনেল্লির শটে সেভ দুটি নিশ্চয়ই মনে আছে?

আরও পড়ুন

ফিরতি লেগেও সেই একই ‘মানবদেয়াল’-এ মাথা ঠুকে মরায় (বিদায়) হতাশ আর্সেনাল কোচ মিকেল আরতেতা প্রতিপক্ষের প্রশংসা না করে পারেননি। ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘কখনো কখনো প্রতিপক্ষের প্রশংসা করতে হয়। দুই ম্যাচেই তাদের কিপার যা করেছে, সেটা তাদের জিতিয়েছে। দুই লেগ মিলিয়ে তাদের গোলকিপার সেরা খেলোয়াড়।’
অথচ ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছে আশরাফ হাকিমির হাতে। মরক্কোর তারকা দারুণ এক গোল করেন। তবে ভালো খেলেও ম্যাচসেরা না হওয়া দোন্নারুম্মার জন্য নতুন নয়। অন্তত চ্যাম্পিয়নস লিগে এবারের মৌসুমে।

অ্যানফিল্ডে শেষ ষোলোর ফিরতি লেগে টাইব্রেকার ঠেকিয়ে ম্যাচসেরা হন। কোয়ার্টার ফাইনাল ফিরতি লেগে ভিলার মাঠে পিএসজির ৩-২ গোলের জয়ে মার্কাস রাশফোর্ড ও মার্কো আসেনসিওর শট দারুণভাবে সেভ করেন দোন্নারুম্মা। কিন্তু ম্যাচসেরা হন উসমান দেম্বেলে। জয়ের পর পিএসজি তারকাই বলেছেন, ‘ম্যাচসেরা আসলে গিগি। অবিশ্বাস্য কিছু সেভ করে সে আমাদের বাঁচিয়েছে।’

আর্সেনালের বিপক্ষে সেমিফাইনাল প্রথম লেগে দোন্নারুম্মার দুটি সেভের কথা তো আগেই বলা হলো। সে ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পাওয়া পিএসজি মিডফিল্ডার ভিতিনিয়াও পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, দোন্নারুম্মাই ‘আসল ম্যাচসেরা’।

সেটা সম্ভবত নকআউট পর্ব থেকেই। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, এবার চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বে এখন পর্যন্ত ২০টি সেভ করেছেন দোন্নারুম্মা। এর মধ্যে সেমিফাইনালে আর্সেনালের বিপক্ষে দুই লেগ মিলিয়ে করেছেন মোট ৮টি সেভ, গোল হজম করেছেন মাত্র ১টি। অথচ এই দলটাই রিয়াল মাদ্রিদকে দুই লেগ মিলিয়ে দিয়েছে পাঁচ গোল!

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ বলছেন, ইতালি জিয়ানলুইজি বুফনের একদম ‘পারফেক্ট’ বিকল্প পেয়েছে। কথাটা যেমন মিথ্যা নয়, তেমনি এটাও সত্য যে বুফন ও দোন্নারুম্মা খুব ভালো বন্ধু। এসি মিলানের বয়সভিত্তিক প্রকল্প থেকে উঠে আসা দোন্নারুম্মা ক্লাবটির বল বয়ও ছিলেন। সান সিরোয় মিলান জুভেন্টাসের মুখোমুখি হলে ‘তুরিনের বুড়ি’দের পোস্টের পেছনে গিয়ে দাঁড়াতেন দোন্নারুম্মা। উদ্দেশ্য? জুভেন্টাস গোলকিপার বুফনের কিপিং দেখে শেখা।

জয়ের পর আর্সেনালের খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন দোন্নারুম্মা
এএফপি

১৬ বছর বয়সে মিলানের হয়ে অভিষেকের পর বুফনের মুখোমুখিও হতে হয়েছে দোন্নারুম্মাকে। ১৭ বছর বয়সে ইতালি জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন বুফনেরই বিকল্প হিসেবে। ইতালিয়ান সংবাদমাধ্যম ‘লা গাজেত্তা দেল্লো’কে এর আগে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বুফনকে নিয়ে দোন্নারুম্মা বলেছিলেন, ‘গিগি সত্যিকারের বন্ধু। এমনকি আমি যখন (ইতালি দলে) দ্বিতীয় সেরা গোলকিপার হিসেবে ছিলাম, তখনো আমার প্রতি তার কোনো ঈর্ষা ছিল না। তিনি আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন এবং উন্নতিতে সাহায্যও করেছেন।’