আর্জেন্টাইন ফুটবলের সেই ‘অমূল্য সম্পদ’ এখন যেখানে

আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক এমিলিয়ানো মার্তিনেজএএফপি

চাইলে গ্লাভজোড়া নিজের কাছেই রেখে দিতে পারতেন। সবাইকে তা দেখিয়ে বলতে পারতেন, দেখো, আমার সংগ্রহে আছে আর্জেন্টাইন ফুটবলের এক অমূল্য সম্পদ! কিন্তু লোকটি সম্ভবত আর্জেন্টাইন, তাই ফুটবল নিয়ে আবেগও একটু বেশি। তিনি শুধু নিজের কথা ভাবেননি। সবার কথা ভেবেই এমন এক সিদ্ধান্ত নেন, যে কারণে তিনি এখন সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম। কিন্তু তাঁর পরিচয় কেউ বের করতে পারেনি।

কাতার বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেন্টিনার গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজের যে গ্লাভস পরে খেলেছিলেন, সেই গ্লাভসজোড়া লোকটি এমন এক জায়গায় সংরক্ষণের জন্য রেখেছেন, যা জেনে অবাক হতে হয়। কারণ, এই ঐতিহাসিকভাবে ‘অমূল্য’ জিনিস কেউ হাতছাড়া করে না।

আরও পড়ুন

ঘটনাটা একদম গোড়া থেকে শুরু করা যাক। গত ডিসেম্বরে কাতারে বিশ্বকাপ ফাইনাল টাইব্রেকারে যাওয়ার আগে ম্যাচের শেষ দিকে দুর্দান্ত একটি সেভ করেন মার্তিনেজ। সেভ করেন টাইব্রেকারেও। বিশ্বকাপে সেরা গোলকিপারের পুরস্কার পাওয়া মার্তিনেজ সেই ম্যাচের গ্লাভস গত ১০ মার্চ নিলামে তুলেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল মহৎ।

বিক্রি করে পাওয়া টাকাটা যাবে আর্জেন্টিনার গ্রারাহান হাসপাতালের ক্যানসার ওয়ার্ডে। আর্জেন্টিনায় এটি শিশুদের প্রধান হাসপাতাল। নিলামে গ্লাভসের দাম উঠেছিল ৪৫ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৭ লাখ ১৯ হাজার টাকা)।

ক্রেতা তাঁর নাম প্রকাশ করতে চাননি। ঘটনাটা সেখানেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কারণ, নিলামে বিশেষ কিছু কেনার পর অনেকেই নাম প্রকাশ করতে চান না। এমন ঘটনা নতুন নয়।

বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেন্টিনার গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ ও ফ্রান্সের উগো লরিস
ফাইল ছবি

কিন্তু গত পরশু ঘটনাটা আরেকটু বিস্তৃত হয়ে নতুন মোড় নেয়। মার্তিনেজের গ্লাভসের ক্রেতাকে খুঁজে বের করার একটি সূত্র জানিয়েছে ক্লারিন। আর্জেন্টিনার সান্তা ফে প্রদেশের রাজধানী সান্তা ফে দে লা ভেরা ক্রুজে গোলকিপিংয়ের সরঞ্জামের জন্য একটি দোকান আছে, যার নাম এইচবি স্পোর্ট।

এই দোকানের মালিকের নাম এরনান বার। চার দিন আগে নিজ দোকানের ফেসবুক পেজে একজোড়া গ্লাভের ছবি পোস্ট করেন এরনান বার। ক্যাপশনে লেখেন, ‘নিলামে জয়ী বন্ধুটিকে ধন্যবাদ। তাঁর কারণে আমরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দিবু মার্তিনেজের গ্লাভজোড়া ছুঁয়ে দেখতে পারছি।’ যেহেতু স্থানীয় দোকান, তাই এরনান বারের ফেসবুক পোস্টটি সেভাবে সাড়া না ফেললেও আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যমের নজরে পড়ে। এরপরই বেরিয়ে আসে দারুণ এক গল্প।

যে গ্লাভস আর্জেন্টাইনদের তো বটেই, গোটা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদেরই আগ্রহেরই বস্তু—সেটা ওই দোকানে গেল কীভাবে? নিলামে তো এক অজ্ঞাত ব্যক্তি তা কিনে নিয়েছিলেন!

বিশ্বকাপে গোল্ডেন গ্লাভ জিতেছেন এমিলিয়ানো মার্তিনেজ
ছবি: রয়টার্স

ডিজিটাল মিডিয়া ‘এইরে’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে সবিস্তারে জানিয়েছেন এরনান বার, আর তাদের বরাত দিয়ে ঘটনাটি তুলে ধরেছে আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম ‘ক্লারিন’।

এরনান বার সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এক লোক দোকানে এসে জানতে চায়, দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখার জন্য গ্লাভসকে কীভাবে ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখা করা যায়, যাতে এটি ভালো থাকে। এ নিয়ে কথা বলার সময় জানতে চাই, ঠিক কী ধরনের গ্লাভস। লোকটি আমার দিকে একবার তাকিয়ে দোকানে দিবুর (বিশ্বকাপ ফাইনালে কোলো মুয়ানির শটে যে সেভটা করেছিলেন) যে ছবিটা ছিল, সেদিকে ইঙ্গিত করে বলল—ওগুলো। জানতে চাইলাম, মডেলটা নতুন নাকি? লোকটি এরপর বলল, না, না। ওগুলোই। ফাইনালের গ্লাভস।’

আরও পড়ুন

শুনে এরনান বার স্বাভাবিকভাবেই চমকে যান। কী জিনিস তাঁর দোকানে আসি আসি করছে, সেটা বুঝতে পারেন। বাকিটা এরনান বারের মুখেই শুনুন, ‘ওগুলো (মার্তিনেজের গ্লাভস) দেখে আমার গায়ের লোম খাড়া হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা! লোকটি দোকানের বাইরে গাড়ি পার্কিং করে রেখেছিল। গাড়িতে থাকা গ্লাভস নিয়ে এসে আমাকে দেখায়। গ্লাভসে তখনো মাঠের ঘাস লেগে ছিল। (মার্তিনেজের) সন্তান ও পরিবারের নামও লেখা ছিল।’

আরও পড়ুন

এরনান বারের কথা থেকে বোঝাই যাচ্ছে, মার্তিনেজের ঐতিহাসিক ওই গ্লাভস সান্তা ফেতেই আছে। গ্লাভসের মালিকের নামও নিশ্চয়ই তাঁর জানা। তবে এরনান বার তা প্রকাশ করেননি।