ঢাকায় তৃণমূল ফুটবলে দেদার অনিয়ম-জালিয়াতি, দুই কোচের শাস্তি

বয়সভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতা থেকে একজন কিশোর বড় ফুটবলার হওয়ার পথে পা বাড়ায়। কিন্তু বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক ফুটবলে চলছে নানা অনিয়ম। ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ তো আছেই, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের দেওয়া অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড জালিয়াতি করে অনিবন্ধিত ফুটবলারকেও নিয়মিত খেলানো হচ্ছে নিচের দিকের টুর্নামেন্টে। অনেকে আবার দুই ক্লাবের জার্সিতে মাঠে নামছেন দুবার করে। এসব ঘটনা নজরদারি করারও যেন কেউ নেই।

অভিযোগ রয়েছে, এসব জালিয়াতির ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় নেপথ্যের ভূমিকায় থাকেন সংশ্লিষ্ট ক্লাবের কোচরা। গত ২৭ সেপ্টেম্বর বাফুফে আয়োজিত পেশাদার লিগের দ্বিতীয় স্তরের ক্লাবগুলোর অনূর্ধ্ব-১৬ টুর্নামেন্টে ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের মুখোমুখি হয়েছিল গোপালগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব। ওই ম্যাচে গোপালগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাবের কোচ নিপু দাশ অনিবন্ধিত ফুটবলার খেলানোর চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাফুফের শৃঙ্খলা কমিটি তদন্ত করে এ ঘটনার প্রমাণ পেয়েছে। তারই জেরে শাস্তি দিয়েছে কোচ নিপু দাশকে। গত পরশু বাফুফের শৃঙ্খলা কমিটির সভায় নিপু দাশকে দুই বছরের জন্য ফুটবলের সব রকমের কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করেছে বাফুফে। পাশাপাশি গোপালগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাবকে গুনতে হবে এক লাখ টাকা জরিমানা।

দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবলে দুই ক্লাবের হয়ে খেলে নিষিদ্ধ রাশেদ বাবু
সৌজন্য ছবি

গোপালগঞ্জের কোচের মতো অনিবন্ধিত ফুটবলার মাঠে নামাতে চেয়েছিলেন অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড স্পোর্টস ক্লাবের কোচ মুরাদ আহমেদ। অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবল টুর্নামেন্টে ২৯ সেপ্টেম্বর ওয়ারী ক্লাবের বিপক্ষে ম্যাচ ছিল অগ্রণী ব্যাংকের। ওই ম্যাচেই অবৈধ ফুটবলারকে খেলানোর চেষ্টা করেন কোচ মুরাদ। বাফুফে তদন্ত করে সেই ঘটনার প্রমাণ পেয়েছে। মুরাদকে দুই বছরের জন্য ফুটবলের সব রকমের কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করেছে বাফুফে। গোপালগঞ্জের মতো একইভাবে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবলেও জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে। দ্বিতীয় বিভাগে একই ফুটবলার খেলেছেন দুই ক্লাবের হয়ে। প্রথমে কদমতলা সংসদের জার্সিতে খেলেন রাশেদ বাবু। এরপর খেলেছেন পূর্বাচল পরিষদের হয়ে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরী ফুটবল লিগ কমিটি বরাবর চিঠি দেয় কদমতলা সংসদ। ঘটনা তদন্তের পর রাশেদকে এক বছরের জন্য সব রকমের ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করেছে বাফুফের ডিসিপ্লিনারি কমিটি। এ ছাড়া ওই ম্যাচে পূর্বাচল পরিষদের বিপক্ষে ৩-০ গোলে জয়ী ঘোষণা করা হয় কদমতলা সংসদকে।

ঢাকায় প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ, পেশাদার লিগের দ্বিতীয় স্তর চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের পর বয়সভিত্তিক ফুটবলে এমন অনিয়ম দেখে হতাশ ও ক্ষুব্ধ সাবেক ফুটবলার শেখ মোহাম্মদ আসলাম। ফুটবলার উঠে আসার প্রক্রিয়ায় এমন প্রতারণার ঘটনায় উদ্বিগ্ন আসলাম বলছিলেন, ‘ক্যারিয়ারের শুরুতেই যদি এমন প্রতারণার আশ্রয় নেয় কেউ, তাহলে তো অঙ্কুরেই প্রতিভা নষ্ট হয়ে যাবে। আসলে এসব প্রতারণা দেখার মতো দূরদর্শী লোক বাফুফেতে নেই। ফুটবল একটা পরিচ্ছন্ন খেলা। কিছু লোক গর্হিত কাজ করে আমাদের ফুটবল খেলা কলুষিত করছে।’