প্রত্যন্ত গ্রামের তরুণের কাছে কোহলি-ডি ভিলিয়ার্সের ফোন, এরপর যা ঘটল

মনীশ বিসি ও বিরাট কোহলিএক্স

স্কুল বা কলেজে পড়া কোনো কিশোর যদি বন্ধুদের কাছে গিয়ে দাবি করেন, তাঁকে বিরাট কোহলি–এবি ডি ভিলিয়ার্সরা ফোন দিচ্ছেন, তবে সেই বন্ধুদের প্রতিক্রিয়া কী হবে!

কোথায় ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা কোহলি ও সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকা ডি ভিলিয়ার্স আর কোথায় ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পর্কহীন এক প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে! অজানা–অচেনা এক ছেলের কাছে কোহলি, ডি ভিলিয়ার্সের ফোনের খবর তাই অবিশ্বাসই করার কথা বন্ধুদের। হাস্যকর দাবি আর বাচাল বলে উড়িয়ে দেওয়াটাই বরং স্বাভাবিক। কিন্তু সত্যিকার অর্থেই যদি এমন কিছু ঘটে!

আসলেই ঘটেছে। ঘটেছে মনীশ বিসি নামের একজনের সঙ্গে। মনীশ ছত্তিশগড়ের গারিয়াবান্দ জেলার মাদাগাঁওয়ের বাসিন্দা। তাঁর বয়স এখন বিশের কোঠায়। মনীশ দাবি করেছেন, একটি নতুন সিম কার্ড কিনে চালু করার পর থেকেই তাঁর কাছে কোহলি এবং ডি ভিলিয়ার্সের মতো ক্রিকেট কিংবদন্তিরা ফোন করতে শুরু করেছেন। শুধু এ দুজনই নন, আইপিএলের দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর আরও কিছু খেলোয়াড়ও ফোন করেছেন তাঁকে।

আরও পড়ুন

একের পর এক তারকার ফোন পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই মনীশ ধরে নেন, কেউ তাঁর সঙ্গে মজা করছেন। তাই ফোনটি তিনি দিয়ে দেন তাঁর এক বন্ধু খেমরাজ বিসিকে। পরে অবশ্য কোহলি–ডি ভিলিয়ার্সদের ফোনকলের রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। মূলত ঘটনাচক্রে মনীশের হাতে চলে এসেছিল ভারতীয় ক্রিকেটার ও বেঙ্গালুরু অধিনায়ক রজত পাতিদারের পুরোনো একটি সিম কার্ড। আর সিম কার্ড থেকেই শুরু যাবতীয় বিভ্রান্তির।

রজত পাতিদারের সঙ্গে সেলফি তুলছেন বিরাট কোহলি
আইপিএল

বিষয়টি নিয়ে খেমরাজ সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানান, মনীশ ভয়ে ফোনই ধরতে চাইছিলেন না বলে তিনি নিজেই মনীশের ফোন সামলাচ্ছিলেন। সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপচারিতায় খেমরাজ বলেছেন, ‘প্রথমে বিরাট কোহলি স্যারের ফোন পাই। এরপর ফোন করেন যশ দয়াল স্যার। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন কেন আমি রজত পাতিদারের ফোন ব্যবহার করছি। আমি বললাম, এটা তার নম্বর নয়।’

খেমরাজ আরও যোগ করেন, ‘দুই-তিন মিনিট পর কোহলি স্যার ফোন করে জানতে চান, কেন পাতিদারের নম্বর ও তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করছি। আমরা বললাম, আমরা তা করিনি। আধা ঘণ্টা পর এবি ডি ভিলিয়ার্স স্যারের ফোনও আসে।’ তবে তাঁরা ইংরেজি বোঝেন না বলেও জানিয়েছেন।

খেমরাজ জানিয়েছেন, বিভ্রান্তি চরমে পৌঁছায়, যখন পুলিশ পরের ১০ মিনিটের মধ্যে গ্রামে এসে হাজির হয়। শুরুতে বিষয়টি বুঝতে না পারলেও পুলিশের মাধ্যমেই খুলতে শুরু করে রহস্যের জট। তারা জানতে পারে, এটা ভিআইপি নম্বর এবং এ নম্বরটি ব্যবহার করতেন বেঙ্গালুরু অধিনায়ক পাতিদার।

আরও পড়ুন

গারিয়াবান্দ জেলার ডেপুটি পুলিশ সুপার নিশা সিনহা বলেন, ‘রজত পাতিদার ৯০ দিন ধরে একটি সিম কার্ড ব্যবহার করছিলেন না। নিয়মানুযায়ী এত লম্বা সময় বন্ধ থাকলে সিম নিষ্ক্রিয় করা হয়। পরে নতুন করে বাজারে ছাড়ার পর এ সিমটি মনীশ বিসি কিনে নেন।’

নিশা সিনহা আরও বলেন, ‘ইন্দোর সাইবার সেলের সঙ্গে কথা বলার পর মনীশ বিসির অনুমতিতে সিম কার্ডটি রজত পাতিদারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আগে পাতিদার এই সিম ব্যবহার করায় অন্য ক্রিকেটাররা সেই নম্বরে ফোন করছিলেন। পরে পাতিদার মধ্যপ্রদেশের সাইবার সেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজের সিম ফেরত চান এবং সেই অনুরোধের ভিত্তিতেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। এখানে কারও কোনো আইনি সমস্যা নেই।’

তিকেন্দ্র বিসি নামের একই গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘পুলিশ গ্রামে আসার পর আমি মনীশকে থানায় নিয়ে যাই। ইন্সপেক্টর জানান, এটি একটি ভিআইপি নম্বর এবং সিম কার্ডটি আরসিবি অধিনায়ক রজত পাতিদারের নামে নিবন্ধিত ছিল। ভুলবশত এটি মনীশের নামে বরাদ্দ হয়ে গেছে। তাঁরা আমাদের জিজ্ঞাসা করলেন, আমরা সিম ফেরত দিতে চাই কি না? আমরা রাজি হয়ে যাই।’

ভুলবশত হলেও কয়েক মিনিটের জন্য কিংবদন্তি ক্রিকেট তারকাদের সঙ্গে কথা বলতে পেরে আনন্দিত মনীশ ও খেমরাজ। খেমরাজ বলেন, ‘আমি আরসিবির বড় ভক্ত। আমার দোকান ও বাসায় কোহলি স্যারের ছবিও আছে।’ মনীশের কৃষক বাবা গজেন্দ্র সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমার ছেলে বিরাট কোহলির সঙ্গে কথা বলেছে, এটা আমাদের জন্য বড় আনন্দের বিষয়।’