চোখে তাদের বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন
মাঠে বল দখলের লড়াই আর সেই লড়াইয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গ্যালারিতে হইহুল্লোড়। তারা সবাই খুদে। আরও স্পষ্ট করে বললে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কেউ এসেছে মা–বাবার সঙ্গে, কেউ স্কুলশিক্ষকদের সঙ্গে।
শিক্ষার্থী, শিক্ষক আর অভিভাবকদের এমন সরব উপস্থিতিতে গতকাল ঢাকা স্টেডিয়ামে হয়ে গেল প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের দুটি ফাইনাল। একটি বালক বিভাগে, আরেকটি বালিকা বিভাগে।
জেলা থেকে বিভাগ আর বিভাগ থেকে জাতীয় পর্যায়ের মঞ্চে এসে ফাইনালে শিরোপা জিতেছে (বালক বিভাগে) কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার কৈয়ারবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও (বালিকা বিভাগে) পাবনার জোড়গাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিযোগিতায় সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি পাওয়া নাহিদ হোসেন ও লামিয়া খাতুনদের চোখে এখন বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন।
তোহা নামে পরিচিত নাহিদ দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার কৈয়ারবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ টুর্নামেন্টের সর্বশেষ আসরে জেলা পর্যায় থেকে বিদায় নিয়েছিল তার স্কুল। এবার নতুন উদ্যমে ফিরে একেবারে ট্রফি হাতে তুলতে পেরে যারপরনাই উচ্ছ্বসিত নাহিদ।
ফাইনালে সিলেট বিভাগের চ্যাম্পিয়ন সুনামগঞ্জের ইছাঘরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ২-০ গোলে হারানোর পথে ১টি গোল করেছে সে। টুর্নামেন্ট–সেরা হওয়া নাহিদের চোখে এখন জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে খেলার স্বপ্ন। লক্ষ্য আবাহনী লিমিটেডে খেলা হাসান মুরাদ টিপুর উত্তরসূরি হওয়া, ‘খুবই খুশি লাগছে। আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি। বড় হয়ে নামকরা ফুটবলার হতে চাই। হাসান মুরাদ আমাদের এলাকার ফুটবলার। উনি আমাদের খোঁজখবর নেন।’
মুরাদের বাড়ি কুতুবদিয়ায়। গতকাল ফাইনালের সময় মাঠে না থাকতে পারলেও নিজ এলাকার স্কুলের খবর ঠিকই রেখেছেন। জাতীয় দলের হয়ে দুটি ম্যাচ খেলা এই ডিফেন্ডার কৈয়ারবিল প্রাথমিকের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘খবরটা শুনে ভালো লাগছে। আসলে আমিও মাঝেমধ্যে তাদের ফোন দিয়ে কিছু পরামর্শ দিতাম।’
বালিকা বিভাগের ফাইনালে পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার জোড়গাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩-১ গোলে হারায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে। মেয়েদের বিভাগে সেরা খেলোয়াড় হওয়া লামিয়ার কণ্ঠেও রঙিন স্বপ্ন, ‘জিততে পেরে আমি খুব খুশি। আমরা সবাই ভালো খেলেছি। আমাদের টিম ম্যানেজার অনেক সুন্দরভাবে শিখিয়েছেন। বড় হয়ে ফুটবলার হতে চাই। মা–ও বলেছেন, আমি পারব।’
২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মিরপুরের ন্যাশনাল বাংলা উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে শুরু হয়েছিল এবারের টুর্নামেন্টের জাতীয় পর্যায়ের খেলা। দেশের আটটি বিভাগের চ্যাম্পিয়ন আটটি বালক ও আটটি বালিকা দল এই পর্যায়ে অংশ নেয়। সেখান থেকে কাল ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন হওয়া প্রতিটি দল প্রাইজমানি হিসেবে পেয়েছে তিন লাখ টাকা। এ ছাড়া রানার্সআপ দুই লাখ এবং তৃতীয় হওয়া দল পেয়েছে এক লাখ টাকা। এ টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার উঠেছে বালক বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হওয়া কৈয়ারবিলের মোহাম্মদ জুবাইরের হাতে, আর বালিকা বিভাগের রানার্সআপ বাঞ্ছারামপুরের হিয়ামনির হাতে।
এবারের আসরে বালক ও বালিকা উভয় বিভাগ থেকে সমানসংখ্যক ৬৫ হাজার ৩৫৪টি বিদ্যালয়ের ১১ লাখ ১১ হাজার ১৮ জন করে খেলোয়াড় অংশ নিয়েছে। ২০১০ সালে বালক বিভাগ দিয়ে শুরু হওয়া স্কুলভিত্তিক এই টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১১ লাখ ১৬ হাজার ৯০০ বালক আর ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫১৫ বালিকা অংশ নিয়েছিল ২০১৮ সালে।
২০২০ ও ২০২১ সাল বাদে ২০১১ থেকে বালক ও বালিকা উভয় দল নিয়ে নিয়মিত টুর্নামেন্টটি আয়োজন করে আসছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ আসর পর্যন্ত এ প্রতিযোগিতা দুটির নাম ছিল বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট।