বসুন্ধরা কিংস ৪–১ ইয়ংমেন্স ক্লাব ফকিরেরপুল
ম্যাচের শুরুতেই বসুন্ধরা কিংসের বিপর্যয়। নিজেদের মধ্যে বল আদান–প্রদানের সময় টুটুল হোসেন বাদশার নিরীহ এক পাস গোলকিপার মেহেদী হাসান শ্রাবণের পায়ের তলা দিয়ে হয়ে গেল গোল।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলে পয়েন্ট তালিকার একেবারে নিচের দিকে থাকা ইয়ংমেন্স ক্লাব ফকিরেরপুলের বিপক্ষে নিজেদের মাঠে নিশ্চয়ই এমন পরিস্থিতি কল্পনাও করেনি কিংস। ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে ‘দৈবপ্রদত্ত’ এক গোলে যে কিংসের বিপক্ষে এগিয়ে যাওয়া যাবে, এমন দৃশ্যপট ইয়ংমেন্স ক্লাবও ভেবেছিল কি না, সন্দেহ।
লাল কার্ডের কারণে ১০ জনের দলে পরিণত ইয়ংমেন্স ম্যাচের ৬৮ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত লিগ চ্যাম্পিয়নদের ঝড় সামলাতে পারেনি। ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচটা কিংস জিতেছে ৪–১ গোলে।
মেহেদী হাসান শ্রাবণ জাতীয় দলের অন্যতম কিপার। ভালো গোলকিপার হিসেবেই তাঁর সুনাম। এ মৌসুমে কিংসের নিয়মিত গোলকিপার আনিসুর রহমান জিকোকে বেঞ্চে ঠাঁই করিয়ে নিয়মিতই খেলছেন শুরুর একাদশে। যদিও মাঝেমধ্যে ভুল করে বাজে গোল খাওয়ার অভ্যাসটা তাঁর আছে। আজ প্রিমিয়ার লিগে ইয়ংমেন্সের বিপক্ষে তিনি যে গোলটি হজম করলেন, সেটি ছাড়িয়ে গেছে সবকিছুকেই।
গোলটি হজমের পর রীতিমতো ‘মাথায় হাত’ কিংসের ফুটবলারদের। তাঁদের শরীরী ভাষাই বলে দিচ্ছিল, এমন গোল খাওয়ার ব্যাপারটি মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে তাঁদের। সেই সুযোগে উজ্জীবিত ইয়ংমেন্স আক্রমণে উঠে কিংসের রক্ষণের ভালোই পরীক্ষা নিয়েছে। পরীক্ষা নিয়েছে গোলকিপার শ্রাবণেরও।
পরপর দুইবার গোলকিপারকে একা পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি ইয়ংমেন্সের ফরোয়ার্ডরা। প্রথমে রাফায়েল টুডু ও পরেরবার উজবেক ফুটবলার তুরায়েভ সহজ দুটি সুযোগ নষ্ট না করলে ম্যাচে কিংসকে পড়তে হতো আরও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে।
ম্যাচের ৩৩ মিনিটে তিয়াস দাসের লাল কার্ডটাই ইয়ংমেন্সকে কিংসের চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে দেয়নি। তিনি আগেই হলুদ কার্ড পেয়েছিলেন। ৩৩ মিনিটে রাব্বি হোসেন রাহুলকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন।
শুরুর দিকে বসুন্ধরা কিংসকে ইয়ংমেন্স কিছুটা হলেও চোখ রাঙানি দিচ্ছিল। তবে ১০ জনের দল হয়ে পড়ার পর দলটি একেবারেই নিজেদের খোলসে ঢুকিয়ে ফেলে। তখন তাদের লক্ষ্য হয়ে ওঠে শুধুই আক্রমণ ঠেকানো। এমন পরিস্থিতিতেও কিংসের ফরোয়ার্ডরা নিজেদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে বারবার খেই হারিয়েছেন।
ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার জোনাথন ফার্নান্দেজ আক্রমণভাগকে নেতৃত্ব দিলেও তাঁর আরেক ব্রাজিলিয়ান সতীর্থ মিগুয়েল ফেরেইরার অভাবটা অনুভূত হয়েছে। ফয়সাল আহমেদ ফাহিম, রাব্বি হোসেন রাহুলরা কয়েকটি সুযোগ নষ্ট করেছেন।
একের পর এক সুযোগ নষ্ট, ইয়ংমেন্সের রক্ষণে গিয়ে ফরোয়ার্ডদের আটকে যাওয়া যখন হতাশা বাড়াচ্ছে কিংস শিবিরে, ঘড়ির কাঁটাও দ্রুত এগিয়ে চলছে তখন, ঠিক ওই সময় (ম্যাচের ৬৮ মিনিটে) কাঙ্ক্ষিত সমতাসূচক গোলটি পায় কিংস। গোল করেন জোনাথন ফার্নান্দেজ।
সমতা ফিরিয়ে ইয়ংমেন্সের ওপর ঝড়ই তোলে পাঁচবারের লিগ চ্যাম্পিয়নরা। ৭১ মিনিটে দলকে ২–১ গোলে এগিয়ে দেন ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। সোহেল রানা পাসটি দিয়েছিলেন জোনাথনকেই। কিন্তু বক্সের মধ্যে জোনাথন বলটি রাখতে পারেননি। ইয়ংমেন্সের রক্ষণসেনারা সেই বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হলে সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন ফাহিম।
৭৪ মিনিটে কিংস এগিয়ে যায় ৩–১ গোলে। জোনাথনের পাস থেকে গোল করেন বদলি নামা রফিকুল ইসলাম। বিধ্বস্ত ইয়ংমেন্সের শেষ সর্বনাশটা করেন রাকিব হোসেন। ম্যাচের ৮৩ মিনিটে তাঁর গোলেই স্কোরলাইন ৪–১ করে ফেলে কিংস।
এবারের লিগের পয়েন্ট তালিকায় কিংসের অবস্থা বেশ খারাপই। ৭ ম্যাচে ৪ জয়, ১ ড্র আর ২ হারে তাদের পয়েন্ট ১৩। আজকের জয়ে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে তারা।