নিজেদের মধ্যে খেলোয়াড় বেচাকেনা করবে না বার্সেলোনা–পিএসজি

নিজেদের মধ্যকার তেতো সম্পর্কের অবসানে এগিয়ে এসেছে বার্সেলোনা ও পিএসজিছবি : টুইটার

২০১৬ সালে মার্কো ভেরাত্তিকে দিয়ে শুরু। বার্সেলোনা সে সময় চেষ্টা করে পিএসজি থেকে ভেরাত্তিকে নিয়ে আসতে। বার্সা নিজেদের লক্ষ্যে সফল না হলেও পিএসজি তখন বার্সার এ কাণ্ডে বেশ বিরক্তই হয়েছিল।

কিন্তু পরের বছর পিএসজি যা করেছে, তা বার্সাকে রীতিমতো কাঁপিয়ে দিয়েছে। নেইমারের রিলিজ ক্লজের টাকা বুঝিয়ে দিয়ে রেকর্ড ২২ কোটি ২০ লাখ ইউরোতে পিএসজি বার্সা থেকে নিয়ে যায় নেইমারকে। পিএসজির কাছে নেইমারকে হারানোর ধাক্কা এখনো সামলে উঠতে পারেনি বার্সা। আর পিএসজিও ইতিহাসের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়কে নিয়ে তেমন কোনো সাফল্য পায়নি।

নেইমারের সেই দলবদলকে ঘিরে দুই পক্ষের মাঝে কাদা-ছোড়াছুড়ি হয়েছে অনেক। তবে নেইমারের দলবদলেই দুই পক্ষে তেতো সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়নি। ২০২১ সালে বিনা ট্রান্সফার ফিতে বার্সার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তারকা লিওনেল মেসিকে দলে নিয়ে আসে পিএসজি। সে সময় অবশ্য বার্সাই মেসির সঙ্গে চুক্তি নবায়নের পথ থেকে সরে আসে, যা সুযোগ করে দিয়েছিল পিএসজিকে।

২০১৭ সালে দলবদলের বিশ্ব রেকর্ড গড়ে বার্সা ছেড়ে পিএসজিতে যোগ দেন নেইমার
ছবি : এএফপি

আর এবার দুই পক্ষ মুখোমুখি হয়েছে উসমান দেম্বেলেকে নিয়ে। বার্সার ইচ্ছার বিরুদ্ধে দেম্বেলের রিলিজ ক্লজের ৫ কোটি ইউরো শোধ করে তাঁকে দলে নিতে যাচ্ছে পিএসজি। বারবার পিএসজির এমন কাণ্ডে এখন বেশ বিরক্ত বার্সা কর্তৃপক্ষ।

তবে চলমান এই ‘কাদা-ছোড়াছুড়ি’ এড়াতে এগিয়ে এসেছে দুই পক্ষই। যারা নিজেদের মধ্যে আগামী কয়েক বছর আর কোনো খেলোয়াড় বেচাকেনা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্পেনের সংবাদমাধ্যম স্পোর্ত জানিয়েছে, বার্সা ও পিএসজি নিজেদের মধ্যে ‘নন-অ্যাগ্রেসন প্যাক্ট’ (যা দিয়ে দুটি দল সরাসরি একে অন্যের খেলোয়াড় না কেনার বিষয়টিকে বোঝানো হয়েছে। সাধারণত দুই বা তার বেশি দেশ যখন একে অন্যের ওপর সামরিক হামলা থেকে নিজেদের বিরত রাখে, তখন তাকে নন-অ্যাগ্রেসন প্যাক্ট বলে)-এর বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। যার ফলে একে অন্যের কাছ থেকে সরাসরি খেলোয়াড় কেনাবেচা করবে না তারা।

স্পোর্তের দেওয়া খবর বলছে, বার্সা-পিএসজির এই চুক্তি বাধ্যতামূলক বা লিখিত কিছু নয়, বরং মৌখিকভাবেই দুই পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছেছে। তবে শেষ পর্যন্ত এই চুক্তি যদি আনুষ্ঠানিক না হয়, তাহলে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে নিজেদের মধ্যকার এই আপাত ‘শান্তি চুক্তি’টি মানা হবে কি না, তা নিশ্চিত নয়।

বার্সাকে ট্রেবল জেতানো কোচ লুইস এনরিকে এখন পিএসজির দায়িত্বে
ছবি : পিএসজি ওয়েবসাইট

আর এটি যদি সার্বিকভাবে মানা হয়, তাহলে সবচেয়ে বেশি খুশি হবে বার্সাই। কারণ, অর্থনৈতিকভাবে বেশ কোণঠাসা অবস্থায় আছে কাতালান ক্লাবটি। যে কারণে এই মুহূর্তে তারা চাইলেও পিএসজি থেকে কোনো তারকা খেলোয়াড়কে কেনার উদ্যোগ নিতে পারবে না। এই চুক্তি মানা হলে দেম্বেলের বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে যাওয়া হবে দুই পক্ষের মধ্যকার আপাতত শেষ খেলোয়াড় কেনাবেচা।  

আরও পড়ুন

এখানে অবশ্য নেইমারের প্রসঙ্গও আসতে পারে। পিএসজি থেকে নেইমারের বার্সায় ফেরার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তবে নেইমারের চুক্তি নিয়ে জটিলতা অন্য জায়গায়। ব্রাজিলিয়ান এই তারকাকে বার্সার কাছে ছাড়তে আপত্তি নেই পিএসজির।

কিন্তু বার্সার নেইমারকে নেওয়ার পথে বড় বাধা টাকা। অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে তারা নেইমারকে সই করাতে পারছে না। সে জন্য ভিন্ন এক উপায়ে নেইমারের বার্সায় আসার কথাও শোনা যাচ্ছে। পিএসজিতে নাম লেখানো নেইমার যদি প্রথমে সৌদি আরবের কোনো ক্লাবে যান, সেখান থেকে তাঁকে ধারের চুক্তিতে নেবে বার্সা। পরিকল্পনাটা এখন পর্যন্ত এমনই।

দেম্বেলের বার্সা ছেড়ে পিএসজিতে যাওয়া নিয়ে সম্প্রতি দুই ক্লাবের মধ্যে ‘কাদা-ছোড়াছুড়ি’ শুরু হয়েছিল
ছবি : এএফপি

তবে যেভাবেই যান না কেন, নেইমারের দলবদল হয়তো বার্সা-পিএসজির বিশেষ এই চুক্তিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না। এর আগে বার্সা সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা এবং পিএসজি সভাপতি নাসের আল খেলাইফি একাধিকবার মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে লড়াই করেছেন। তবে বার্সার ক্রীড়া উপদেষ্টা দেকো ও পিএসজির ক্রীড়া পরিচালক লুইস কাম্পোসের মধ্যে নাকি খুব ভালো বন্ধুত্ব। ধারণা করা হচ্ছে, এ দুজনই দুই ক্লাবের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে এসেছেন।

আরও পড়ুন