জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হলো পেলের সমাধিক্ষেত্র

সান্তোসে একুমেনিক্যাল মেমোরিয়াল সমাধিক্ষেত্রে চিরঘুমে শায়িত পেলেএএফপি

পেলের মৃত্যুর প্রায় ছয় মাস পর তাঁর সমাধি জনসাধারণের জন্য খুলে দিয়েছে ব্রাজিল। গত বছরের ডিসেম্বরে মৃত্যুর পর সান্তোসের একুমেনিক্যাল মেমোরিয়াল সিমেট্রিতে সমাহিত করা হয় তিনবার বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তিকে। সমাধিক্ষেত্রটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার পর পেলের চিরঘুমের জায়গার ছবি প্রকাশ করা হয়েছে।

চারপাশঘেরা একটি কক্ষের ভেতর সোনার আবরণে মোড়ানো সমাধিটির চারপাশে মাঠের মতো সবুজ গালিচা। এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো যেখানে পেলে হয়ে উঠেছেন, সেই ফুটবল মাঠের আদলে বানানো হয়েছে তাঁর সমাধি।

আরও পড়ুন

ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইয়ে হেরে গত বছর ২৯ ডিসেম্বর ৮২ বছর বয়সে মারা যান পেলে। সান্তোসের একুমেনিক্যাল মেমোরিয়াল সমাধিক্ষেত্রটি ১৪ তলা। সেখানে প্রথম তলায় সমাহিত করা হয়েছে তাঁকে। এটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পাওয়া পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু সমাধিক্ষেত্র।

পেলের সমাধিক্ষেত্রে ঢোকার ফটক
এএফপি

পেলের সমাধিকক্ষে ঢোকার সময় দরজার দুই পাশে তাঁর দুটি সোনালি রঙের ভাস্কর্য বসানো হয়েছে। দুটির পায়েই বল। সবুজ রঙের কৃত্রিম টার্ফ বসানো ২০০ বর্গমিটার আয়তনের এই কক্ষের ঠিক মাঝে পেলের সমাধি—যা দেখলে মনে হয় সোনালি রঙের বড় কোনো ভল্ট।

সমাধিক্ষেত্রে পেলের ছেলে এডিনহো
এএফপি

পেলের এই সমাধিক্ষেত্র খুলে দেওয়ার পর তা দেখতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিলেন দর্শনার্থীরা। সেই দর্শনার্থীদের লাইনে সবার আগে ছিলেন ৪৪ বছর বয়সী ব্যবসায়ী রোনালদো রদ্রিগেজ। তিনি পরিবার নিয়ে কিংবদন্তি সমাধিক্ষেত্রে দেখতে এসেছিলেন। কিংবদন্তির সমাধি দেখে মুগ্ধ রোনালদো রদ্রিগেজ সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘আমার প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে। এটা সত্যিই খুব সুন্দর জায়গা। আশা করি পর্যটকেরা এখানে এসে পেলের গল্পটা জানবেন—সান্তোস, ব্রাজিল ও গোটা বিশ্বের কাছে তিনি কী, সেসব জানবেন।’

আরও পড়ুন

পৃথিবীর একমাত্র ফুটবলার হিসেবে তিনটি বিশ্বকাপ জিতেছেন পেলে। দুই দশকের বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে সান্তোস, নিউইয়র্ক কসমস ও ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে মোট ১ হাজার ২৮১ গোল করেছেন। যদিও পেলের এই গোলসংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে।

পেলের সমাধির এক পাশে খোদাই করা ভাস্কর্য। তাঁর ক্যারিয়ারের একটি মুহূর্ত খোদাই করা হয়েছে
এএফপি

কিংবদন্তির তিরোধানের পর তাঁর ছেলে এদিনহোর কাছে পরিবারের বর্তমান অবস্থা সমন্ধে জানতে চাওয়া হয়েছিল। অশ্রুভেজা চোখে এদিনহো জানান, পেলের শোক এখনো তাঁরা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তবে বিশ্বের আনাচকানাচ থেকে আসা জনমানুষের ভালোবাসায় মুগ্ধতা প্রকাশ করেন এদিনহো, ‘এত ভালোবাসা পেয়ে আমরা সত্যিই খুব গর্বিত ও খুশি।’

পেলের সমাধির উপরিভাগ। ওপরে তাঁর নাম, জন্ম ও মৃত্যুর তারিখ
এএফপি

একুমেনিক্যাল মেমোরিয়াল সমাধিক্ষেত্রের একটি ওয়েবসাইট আছে। সেখানে একটি ফরম পূরণ করলে পেলের সমাধিক্ষেত্র দেখার অনুমতি মিলবে। আপাতত দিনে ৬০ জন করে দর্শনার্থী সমাধি দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। ফুটবল স্টেডিয়ামে ভক্তদের নানা ছবি দিয়ে পেলের সমাধিক্ষেত্রের দেয়াল সাজানো হয়েছে। আর সমাধিক্ষেত্রের এক পাশে পেলের হাজার গোল উদ্‌যাপনের দৃশ্য খোদাই করা, অন্য পাশে তাঁর মুষ্টিবদ্ধ গোল উদ্‌যাপনের খোদাই করা দৃশ্য।

দেখতে রিসোর্টের মতো এই সমাধিক্ষেত্রে গাড়ির জাদুঘরও আছে। ১৯৭৪ সালে পেলে হাজার গোলের মাইলফলক ছোঁয়ার পর তাঁকে জার্মান গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মার্সিডিজ বেঞ্জ যে গাড়িটি তাঁকে দিয়েছিল, সেই এস–২৮০ মডেলের গাড়িটিও সেখানে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। সান্তোসের মাঠ ভিলা বেলমিরো থেকে এই সমাধিক্ষেত্র ০.৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

আরও পড়ুন