দক্ষিণ এশিয়ায় যা আগে হয়নি, হামজা–শমিতদের ম্যাচে তেমন চমক দেখাতে চায় বাফুফে

শমিত সোম, হামজা চৌধুরী ও ফাহামিদুল ইসলাম

একসময় ফুটবলের গ্যালারিতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। সময়ের পরিক্রমায় সেখানে এখন ভাটার টান। অনেক বছর ধরেই দেশের ফুটবল যেন এক জায়গায় থমকে আছে। সম্প্রতি হামজা চৌধুরী, শমিত সোম, ফাহামিদুল ইসলামদের আগমনে আবার জেগেছে ফুটবল। মাঠে ফিরতে শুরু করেছেন দর্শক, পাড়ামহল্লায় চলছে আলোচনা। বলতে পারেন ফুটবলে এ এক নতুন আলোর ঝলকানি! সেই আলোয় পথ খুঁজছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও (বাফুফে)।

আরও পড়ুন

১০ জুন ঢাকায় সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে বাংলাদেশের এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচ। যেটি নিছক কোনো ম্যাচ নয়, একপ্রকার ফুটবল–উৎসবই। উৎসবের আগে যেমন উন্মাদনা, জল্পনাকল্পনা হরেক রকমের প্রস্তুতি এবং নানান আয়োজন থাকে, ১০ জুনের ম্যাচ ঘিরেও তেমন কিছু করছে বাফুফে।

একটা চমক থাকবে, সেটা আমি এখন বলতে চাই না। এতটুকু বলতে পারি, যেটা বাংলাদেশের স্পোর্টসে আগে কখনো হয়নি, বাংলাদেশ কেন দক্ষিণ এশিয়ায়ও হয়নি।
বাফুফের সহসভাপতি ফাহাদ করিম

আজ প্রথম আলোকে এমনটাই বলেছেন বাফুফের সহসভাপতি ফাহাদ করিম, ‘এটা শুধুই একটা ম্যাচ নয়। ফুটবলের জন্য বিশেষ একটা দিন। যে দিন থেকে ফুটবল নতুন করে পথ চলতে শুরু করবে। আমাদের বিশ্বাস, দর্শকেরা হামজা-শমিতদের ম্যাচটা দারুণভাবে উপভোগ করবেন।’

বাংলাদেশের হয়ে আগেই অভিষেক হয়েছে হামজার
প্রথম আলো

আগামীকাল থেকে এই ম্যাচের টিকিট বিক্রি শুরু হবে অনলাইনে। ম্যাচটি দেখতে টিকিট কিনতে ৪০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত গুনতে হবে একজন দর্শককে। কেবল ৯০ মিনিট নয় এর বাইরে লেজার শো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফ্যানজোন, বিশেষ বাস-মেট্রোরেল সুবিধার কথাও ভাবছে বাফুফে।

এ বিষয়ে ফাহাদ বলেন, ‘দর্শকেরা এরই মধ্যে ফুটবলের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। তাঁরা এখন ফুটবল দেখছেন, খোঁজখবর রাখছেন। ১০ তারিখ যখন হামজাদের ম্যাচ দেখতে আসবেন তাঁরা, আমরা চাই তাঁদের একটা ভালো অভিজ্ঞতা দিতে। তাঁদের জন্য একটা চমক থাকবে, সেটা আমি এখন বলতে চাই না। এতটুকু বলতে পারি, যেটা বাংলাদেশের স্পোর্টসে আগে কখনো হয়নি, বাংলাদেশ কেন দক্ষিণ এশিয়ায়ও হয়নি।’

কানাডা জাতীয় দলে খেলেছেন শমিত
শমিতের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল

ঢাকা স্টেডিয়ামে এর আগেও এমন অনেক ম্যাচ হয়েছে। তাহলে এবার কেন বাড়তি আয়োজন? কারণটা আসলে হামজা-শমিতদের মতো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তারকা ফুটবলাররা। সিঙ্গাপুর ম্যাচ দিয়ে ঘরের মাঠে অভিষেক হবে হামজা ও শমিতের।

তাদের নিয়ে সাধারণ মানুষেরও বাড়তি একটা আগ্রহ রয়েছে। মানুষের এ আগ্রহ কাজে লাগিয়ে ফুটবলকে এগিয়ে নিতে চায় বাফুফে। তেমন আভাসই দিলেন বাফুফের এই কর্তা, ‘হামজা-শমিতের মতো তারকা যখন একটা জাতীয় দলে নাম লেখান, তখন এমনিতেই ওই দলের ব্র্যান্ড ভ্যালু বেড়ে যায়। সর্বোপরি ফুটবলের ইমেজ বৃদ্ধি পায়। আমাদেরও তা-ই হয়েছে। আমরা চাই এটাকে কাজে লাগিয়ে ফুটবলকে এগিয়ে নিতে।’

বাংলাদেশ–সিঙ্গাপুর ম্যাচের টিকিটের মূল্য
গ্রাফিকস: প্রথম আলো

গত ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হয়েছিল শেফিল্ড ইউনাইটেডে খেলা হামজার। কানাডা জাতীয় দলে খেলা শমিত দেশের টানে বদলেছেন তাঁর জার্সির রং। ফাহামিদুল ইতালির ঘরোয়া ফুটবলের চতুর্থ স্তরের ক্লাব ওলবিয়া কালসিওতে খেলছেন। সেখান থেকে যোগ দেবেন সিঙ্গাপুর ম্যাচের ক্যাম্পে। তাঁদের পেয়ে স্থানীয় খেলোয়াড়েরাও উজ্জীবিত। জাতীয় দলের অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড রাকিব হোসেন বললেন, ‘এটা আমাদের জন্য খুবই ইতিবাচক দিক। হামজাকে দেখে এখন অনেকেই আসছেন। ফুটবল নিয়েও একটা আলোচনা শুরু হয়েছে। যেটা দেশের জন্য খুবই দরকার ছিল।’

কেবল ফুটবল নিয়ে আলোচনাই নয়, হামজা-শমিতদের এই সূচনালগ্নে ফুটবলে যে দিনবদলের শুরু, সেটা নামী–দামি কোম্পানির স্পনসর করার আগ্রহ এবং টিকিটের মূল্য দেখলেও অনুমান করা যায়। ফুটবলে শেষ কবে টিকিটের সর্বনিম্ন দাম ৪০০ টাকা ছিল বলা কঠিন। টিকিট দূরে থাক, বিনা মূল্যেও ম্যাচ দেখার ব্যবস্থা করেও খুব একটা দর্শক টানা যায়নি।

ইতালির ঘরোয়া ফুটবলে খেলেন ফাহামিদুল
ফাহামিদুলের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল

একসময় দেশের ফুটবলে কিট স্পনসর ছিল অ্যাডিডাস (১৯৯৮–২০০০), লোটো, নকিয়া, গ্রামীণফোন, টিভিএসের মতো জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান। ফুটবলের জনপ্রিয়তার গ্রাফ নিম্নমুখী হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠান মুখ ফিরিয়ে নেয়। এখন যখন হামজাদের ঘিরে ফুটবলে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে, তখনই আবার বড় বড় প্রতিষ্ঠান ফুটবলের পাশে আসার চেষ্টা করছে।

দীর্ঘদিন পর কিট স্পনসর হিসেবে ‘দৌড়’কে পেয়েছে বাফুফে। জাতীয় দলের স্পনসর হয়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিঙ্গাপুর ম্যাচের টিকিট ক্যাম্পেইনে যুক্ত হয়েছে মোবাইল অপারেটর রবি। প্রথমবারের মতো ফুটবল স্পনসর হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বিশ্বখ্যাত জাপানি প্রতিষ্ঠান মলটেন। এ ছাড়া সিঙ্গাপুর ম্যাচের জন্য টাইটেল স্পনসর এবং তিন থেকে চারটি কো-স্পনসরও পেয়েছে বাফুফে।