প্রিমিয়ার লিগে মৌসুম শেষে অপ্রত্যাশিত ও মজার যত রেকর্ড

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ট্রফি হাতে হাস্যোজ্জ্বল আর্লিং হলান্ডছবি : রয়টার্স

সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের পোস্টার বয় ছিলেন আর্লিং হলান্ড। ম্যানচেস্টার সিটিকে হ্যাটট্রিক লিগ শিরোপা এনে দেওয়ার পর থেকে একের পর এক রেকর্ড ভেঙেছেন এই নরওয়েজীয় তারকা। মৌসুম শেষে লিগ সেরা খেলোয়াড়, সেরা তরুণ খেলোয়াড়, সেরা নবাগত খেলোয়াড়সহ অনেকগুলো পুরস্কার গেছে হলান্ডের হাতে।

তবে হলান্ডের কীর্তিগাথার ঠিক উল্টো চিত্রও কিন্তু আছে। যেমন গোল ছাড়ার সবচেয়ে বেশি শট নেওয়া কিংবা ৯০ মিনিট মাঠে থেকেও কোনো পাস দিতে না পারার মতো রেকর্ড। এই রেকর্ডগুলো কোনোটা হতাশার আবার কোনোটা মজার। প্রিমিয়ার লিগের সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমে এ রকমই কিছু রেকর্ড খুঁজে বের করেছে পরিসংখ্যানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অপ্টা।

আরও পড়ুন

গোল ছাড়া সবচেয়ে বেশি শট
চেক ডুকোর, ক্রিস্টাল প্যালেস

ক্রিস্টাল প্যালেসের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার চেক ডুকোর নিজের পেশাদার ক্যারিয়ারে সব মিলিয়ে গোল করেছেন ৬টি। তবে সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমে তাঁর নেওয়া প্রচেষ্টাগুলো যদি জালের দেখা পেত, তবে গল্পটা ভিন্ন হতে পারত। প্রিমিয়ার লিগে নিজের প্রথম মৌসুমে ক্রিস্টালের হয়ে সব মিলিয়ে বেশি ৩৬টি শট নেন মালির এই ফুটবলার। যেখানে ৭টি শট লক্ষ্যে থাকলেও কোনো শটই জালের ঠিকানা খুঁজে পায়নি। প্রিমিয়ার লিগে এ মৌসুমে তাঁর চেয়ে বেশি শট নিয়ে আর কোনো খেলোয়াড় গোলহীন থাকেননি।

প্রিমিয়ার লিগে একের পর শট নিয়েও গোলের দেখা পাননি চেক ডুকোর
ছবি: রয়টার্স

হলুদ কার্ড না দেখে সবচেয়ে বেশি ফাউল
এমিলিয়ানো বুয়েন্দিয়া, অ্যাস্টন ভিলা

ফাউল করেও হলুদ কার্ড না দেখা, এমিলিয়ানো বুয়েন্দিয়াকে ভাগ্যবানই বলতে হয়। প্রিমিয়ার লিগে চলতি মৌসুমে রেকর্ডটি গড়েছেন এই আর্জেন্টাইন। এই মৌসুমে কোনো হলুদ কার্ড না দেখে সবচেয়ে বেশি ফাউল করেছেন বুয়েন্দিয়া। সব মিলিয়ে বুয়েন্দিয়া ফাউল করেছেন ৪৩ বার, কিন্তু কোনোটিতেই তাঁকে হলুদ কার্ড দেখানোর মতো মনে হয়নি রেফারির। এ তালিকায় তাঁর ধারেকাছেও নেই অন্যরা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রাইটনের কাওরু মিতোমা কোনো কার্ড না দেখে ফাউল করেছেন ২৯ বার।

আরও পড়ুন

কোনো ম্যাচে শুরু না করে সবচেয়ে বেশি বদলি নামা
লুকাস মউরা, টটেনহাম এবং সালমান ঘোডোস, ব্রেন্টফোর্ড

টটেনহামের হয়ে এ মৌসুমে ১৫ ম্যাচে মাঠে নামলেও কোনো ম্যাচেই শুরুর একাদশে জায়গা হয়নি লুকাস মউরার। চলতি মৌসুমে স্পারদের দলে একাধিক কোচের অধীনে কাজ করেছেন মউরা। কিন্তু কোনো কোচই তাঁকে শুরু থেকে মাঠে নামাননি। মউরার মতো একই অবস্থা সালমান ঘোডোসেরও। তিনি ১৫ ম্যাচে মাঠে নেমেছেন কিন্তু কোনোটিতেই শুরু থেকে নয়। সালমানকে ব্রাইটন শুধু বদলি হিসেবেই খেলিয়েছে।

মৌসুমে লিগে নিজের একমাত্র গোলটি করার পর লুকাস মাউরার উদ্‌যাপন
ছবি: রয়টার্স

মউরা মাঠে নামা ১৫ ম্যাচে সব মিলিয়ে খেলেছেন ১৪৫ মিনিট। তবে এই অল্প সময়ের মধ্যে তিনটি মনে রাখার মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছে মউরা। এভারটনের বিপক্ষে মাঠে নেমেই তিন মিনিটের মধ্যে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছেন এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। লিভারপুরলের বিপক্ষে ৪–৩ গোলে হারা ম্যাচে টটেনহাম শেষ গোলটি হজম করেছিল তাঁর ভুলেই। মৌসুমের শেষ দিন অবশ্য সেই ভুল পুষিয়ে দিয়েছিলেন মউরা। লিডসের বিপক্ষে সেই ম্যাচে শেষ মুহূর্তে একক প্রচেষ্টায় দারুণ এক গোল করেছিলেন মউরা।

আরও পড়ুন

কোনো অ্যাসিস্ট না করেই সবচেয়ে বেশি সুযোগ তৈরি
ড্যানিয়েল পোডেন্স, উলভস

পর্তুগিজ উইঙ্গার ড্যানিয়েল পোডেন্স সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমে সব মিলিয়ে সুযোগ তৈরি করেছেন ৩৬টি। কিন্তু এই ৩৬টির কোনোটিকেই কিন্তু তাঁর সতীর্থরা জালের ঠিকানা দেখাতে পারেননি। মৌসুমে এমন দুর্ভাগ্য হয়নি আর কোনো খেলোয়াড়ের। পোডেন্সের তৈরি সুযোগ কাজে লাগাতে না পারার প্রভাব উলভসের সামগ্রিক পারফরম্যান্সের ওপরও পড়েছে। সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমে সবচেয়ে কম ৩১ গোল করেছে ক্লাবটি। অন্যদের দিয়ে করাতে না পারলেও পোডেন্স নিজে অবশ্য ৬ গোল করেছেন।

সবচেয়ে বেশি ফাউল করে কার্ড না দেখা খেলোয়াড় এমিলিয়ানো বুয়েন্দিয়া
ছবি: রয়টার্স

বক্সের ভেতর থেকে সবচেয়ে বেশি গোল
আলেক্সান্দার মিত্রোভিচ, ফুলহাম

এই রেকর্ডটি হতে পারত আর্লিং হলান্ডের। রেকর্ড গড়া দুর্দান্ত মৌসুম কাটানো হলান্ড চলতি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ৩৬ গোল করেছেন। নরওয়েজীয় স্ট্রাইকারের করা ৩৬ গোলের ৩৫টিই তিনি করেছেন পেনাল্টি বক্সের ভেতর থেকে। ১৭ সেপ্টেম্বর উলভসের বিপক্ষে ডি–বক্সের বাইরে থেকে একমাত্র গোলটি করেছিলেন হলান্ড। তবে সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমে ফুলহামের আলেক্সান্দার মিত্রোভিচের করা ১৪ গোলের সব কটি ছিল ডি–বক্সের ভেতর থেকে।

আরও পড়ুন

মিত্রোভিচের গোল সংখ্যা অবশ্য আরও বেশি হতে পারত, যদি না তিনি নিজের নেওয়া ৮ পেনাল্টির ৪টি মিস না করতেন। এই মিসগুলোর কারণে বিব্রতকর এক রেকর্ডের সঙ্গীও হয়েছেন মিত্রোভিচ। এক মৌসুমে তাঁর চেয়ে বেশি পেনাল্টি আর কেউ মিস করেননি। এ ছাড়া অন্যদের মধ্যে রবার্তো ফিরমিনো এবং গ্যাব্রিয়েল জেসুস নিজেদের করার ১১ গোলের প্রতিটিই করেছেন ডি–বক্সের ভেতর থেকে। তাইও আউওনিয়ি নিজের করা ১০ গোলের সব কটি করেছেন ডি–বক্সের ভেতর থেকে।

কোনো পাস না দিয়ে সবচেয়ে বেশি মিনিট খেলা
ইলান মেসলেইর, লিডস

লিভারপুলের বিপক্ষে লিডসের স্মরণীয় ২–১ গোলে অদ্ভুত এই রেকর্ডটি নিজের করে নিয়েছিলেন ইলান মেসলেইর। পুরো ম্যাচে মাঠে থেকেও ন্যূনতম একটি সফল পাস দিতে পারেননি লিডস গোলরক্ষক মেসলেইর। প্রিমিয়ার লিগে কোনো খেলোয়াড় ৯০ মিনিট মাঠে থাকার পরও পাস দিতে না পারার এমন ঘটনা আর কখনো দেখা যায়নি। তবে সে ম্যাচে পাস দিতে না পারলেও ৯টি গোল সেভ করে দলের জয়ে দারুণ অবদান রেখেছিলেন মেসলেইর।

আরও পড়ুন

মাঠে নেমে সবচেয়ে কম সময় খেলা
নাথান রেডমন্ড, সাউদাম্পটন

সাউদাম্পটনের ইংলিশ উইঙ্গার নাথার রেডমন্ড এ মৌসুমে মাত্র একটি প্রিমিয়ার লিগ ম্যাচে মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছিলেন। সেই ম্যাচে তিনি মাঠে ছিলেন মাত্র ৯৫ সেকেন্ড। অন্তত এক ম্যাচে মাঠে নেমেছেন এমন খেলোয়াড়ের জন্য সবচেয়ে কম সময়। পরে অবশ্য সাউদাম্পটন ছেড়ে তার্কিস ক্লাব বেসিকতাসে চলে যান রেডমন্ড। তবে তাঁর কম সময়ে মাঠে থাকার রেকর্ডটি আর কেউ ভাঙতে পারেনি।