যে কারণে ইউনাইটেডের একাদশে রাখা হয়নি রোনালদোকে

বেঞ্চে বসে থাকলেও পরে মাঠে নামানো হয় রোনালদোকেছবি: টুইটার

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে হারের পর অদৃশ্য এক খড়্গ ঝুলছিল কোচ এরিক টেন হাগের ওপর। গত ১০০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ইতিহাসে প্রথম কোচ হিসেবে নিজের প্রথম দুই ম্যাচে হেরে যান টেন হাগ।

এমন একটা অবস্থায় তৃতীয় ম্যাচে সামনে কিনা লিভারপুল, যারা গত কয়েক বছরে ফিরিয়ে এনেছে নিজেদের সোনালি দিনের সুখস্মৃতি। আর সেই ম্যাচেই টেন হাগ এমন সাহসী কিছু সিদ্ধান্ত নিলেন, যা নিতে সাহস লাগে, পরবর্তী প্রতিক্রিয়া সামলানোর আত্মবিশ্বাসও। একাদশে চারটি পরিবর্তন—অধিনায়ক হ্যারি ম্যাগুয়ারকে বাইরে রাখাই হয়তো বড় খবর হতো, যদি না বেঞ্চে বসিয়ে রাখতেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকেও!

লিভারপুলের মতো বড় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচ, জিততে হলে যেখানে অভিজ্ঞতার কোনো বিকল্প নেই, টেন হাগ কিনা সেখানে রোনালদোর মতো বড় ম্যাচের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন খেলোয়াড়কে বাইরে রাখলেন! অ্যান্থনি এলাঙ্গা, জেডন সানচো ও মার্কাস রাশফোর্ডকে দিয়ে আক্রমণভাগ সাজিয়ে ২-১ গোলের জয়ে টেন হাগ অবশ্য নিজের এমন সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতাও প্রমাণ করেছেন। এ ম্যাচের আগে ওয়েইন রুনির মতো সাবেকরাও বলেছিলেন, আক্রমণভাগে গতি সঞ্চার করতে রোনালদোকে বসিয়ে রাখা উচিত।

কিক অফের সময় রোনালদোকে ইউনাইটেডের বেঞ্চে দেখে দু-একজন ভাবতে পারেন, পর্তুগিজ তারকা এমনিতেই ওল্ড ট্রাফোর্ড ছাড়ি ছাড়ি করছেন, এর মধ্যে তাঁকে বড় ম্যাচে বসিয়ে কি চলে যাওয়ার বার্তাই দিলেন টেন হাগ? আসলে এর কিছুই না। খেলোয়াড়দের ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলানোর চিন্তা থেকেই রোনালদোকে একাদশের বাইরে রেখেছেন বলে দাবি টেন হাগের।

হ্যারি ম্যাগুয়ার ও রোনালদোকে একাদশে রাখেননি ইউনাইটেড কোচ
ছবি: এএফপি

জয়ের পর সংবাদকর্মীদের বলেছেন, ‘সিদ্ধান্ত তো আমাকেই নিতে হয়। একটা স্কোয়াড আছে, যা ভালোভাবে ব্যবহার করতে হবে। ৫০-৬০টি ম্যাচ খেলতে হবে, ম্যাচ ধরে ধরে আমরা দেখব কোন দল গড়া যায়। হ্যারি ম্যাগুয়ার কিংবা রোনালদোকে নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই। তারা অসাধারণ খেলোয়াড়। নিকট ভবিষ্যৎ ছাড়াও সামনের দিনগুলোতে তাদের ভূমিকা রাখার জায়গা থাকবে।’

টেন হাগ এরপর অবশ্য রোনালদোকে না রাখার অন্য ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। লিভারপুলের বিপক্ষে তিনি ‘প্রেসিং ফুটবল’ খেলাতে চেয়েছেন। সে কারণেই রোনালদো তাঁর প্রথম পছন্দ ছিলেন না আক্রমণভাগে, ‘আমরা জানি, লিভারপুল খুব ভালো দল এবং তাদের বিপক্ষে চাপ বিস্তার করে খেলতে হয়। এটা করতে হলে (আক্রমণভাগে) শক্তির প্রয়োজন। এ কারণে আমরা রাশফোর্ড, সানচো ও এলাঙ্গাকে বেছে নিয়েছি।’ ম্যাচের ৮৬ মিনিটে রাশফোর্ডকে তুলে রোনালদোকে বদলি হিসেবে মাঠে নামান টেন হাগ।

ইউনাইটেড কোচ হিসেবে টেন হাগের নিয়োগ চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকেই তাঁর খেলার কৌশলের সঙ্গে রোনালদো মানিয়ে নিতে পারবেন কি না, এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। কাল সংবাদকর্মীরা একই প্রশ্ন তুললে টেন হাগ উত্তর দিয়েছেন, ‘আমার মনে হয়, সে পারবে (মানিয়ে নিতে)। সে অনেক কোচের অধীনই খেলেছে এবং বিভিন্ন ধরনের খেলার কৌশলের সঙ্গে মানিয়েও নিয়েছে। পারফর্ম তো সে সব সময়ই করছে, তাহলে কেন পারবে না?’

রোনালদোর ৩৭ বছর বয়সের প্রতিবন্ধকতাকেও উড়িয়ে দিলেন টেন হাগ, ‘বয়স কোনো সমস্যা নয়। বয়স হয়ে যাওয়ার পরও ভালো খেললে, পারফর্ম করলে তাকে ভালো বলতেই হবে।’ কথাটা ঠিক হলেও একটি প্রশ্ন থেকে যায়। রোনালদোর বয়সের ভার যদি প্রতিবন্ধকতা না-ই হবে, তাহলে আক্রমণভাগে গতি সঞ্চারের জন্য টেন হাগ তুলনামুলক কম বয়সী খেলোয়াড় বেছে নিলেন কেন?