মিরাজুলরাও হারিয়ে যাবেন না তো

এ উল্লাস ভবিষ্যতেও ধরে রাখতে পারবেন তো বাংলাদেশের যুবারা?ফাইল ছবি

সম্ভাবনা জাগিয়ে দেশের ফুটবল মানচিত্রে একঝাঁক তরুণের আবির্ভাব চোখ কেড়েছে অনেকেরই। গত কয়েক দিনে ভারতের ভুবনেশ্বরে চোখ রেখে দেশের ফুটবল জনতা শেষ পর্যন্ত নিরাশ হলেও আশাবাদী হওয়ার মতো অনেক কিছুই আছে। পরশু ফাইনালে ভারতের সঙ্গে নির্ধারিত ৯০ মিনিট ২–২ রেখে অতিরিক্ত সময়ের প্রথম ৯ মিনিটে ৩ গোল খাওয়াই সর্বনাশ করেছে বাংলাদেশের। এটুকু বাদ দিলে প্রথম সাফ অনূর্ধ্ব–২০ ফুটবল টুর্নামেন্টটি বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন এক প্রজন্মের আগমনী বার্তাই দিয়েছে।

জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আলফাজ আহমেদের মতে, এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের ফুটবলে উঠতি একটা দল তৈরি হয়েছে। ভবিষ্যতে যাদের জাতীয় দলে দেখা যেতে পারে। আলফাজ মনে করেন, বাফুফের উচিত খুব যত্নের সঙ্গে এই তরুণদের অনূর্ধ্ব–২৩ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া, ‘এই দলটাই যেন অনূর্ধ্ব–২৩ হিসেবে আগামীতে খেলতে পারে সেই ব্যবস্থা করা দরকার। বাফুফেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। যুব সাফে এই ছেলেদের মধ্যে ভালো সম্ভাবনা দেখেছি।’

শ্রীলঙ্কাকে ১–০ গোলে হারিয়ে শুরু। দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিক ভারতকে ২–১ গোলে হারিয়ে সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছে বাংলাদেশ। মালদ্বীপকে ৪–১ গোলে উড়িয়ে এবং নেপালের সঙ্গে ১–১ ড্র করে পাঁচ দলের প্রতিযোগিতায় একমাত্র অপরাজিত দল হিসেবে ফাইনালে ওঠে পল স্মলির দল। খেলা দেখে বাংলাদেশের নবীনদের প্রশংসা করছেন তৃণমূল পর্যায়ের ফুটবলার বাছাইয়ে পাকা জহুরি শফিকুল ইসলাম মানিক। মোহামেডান কোচ বেশ আশাবাদী এই দলটি নিয়ে, ‘ওরা সাফে সমীহ আদায় করেছে। চ্যাম্পিয়নও হতে পারে ভেবেছিলাম। ফাইনালে পারেনি ওই অল্প কয় মিনিট মনোযোগ হারানোয়। তবে ওদের খেলায় সাহস আর উদ্যম দেখেছি। সামগ্রিকভাবে এটা আগামীর জন্য শুভ ইঙ্গিত।’

বয়সভিত্তিক ফুটবলে সব সময়ই ভালো করে বাংলাদেশ। এএফসি অনূর্ধ্ব–১৬ ও অনূর্ধ্ব–১৯ বাছাইপর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়ে চূড়ান্ত পর্বে খেলেছে। ২০১৫ সালে সিলেটে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সাফ অনূর্ধ্ব–১৬ টুর্নামেন্টেও। বাফুফে ওই দলের তরুণদের পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্ব নেবে বলেছিল। কিন্তু পরে দেখা গেছে, সেটা ছিল শুধুই কথার কথা।

ফলে সময়ের চোরাবালিতে তলিয়ে গেছেন অনেক তরুণ ফুটবলার, যাঁরা এসেছিলেন নতুন দিনের পতাকা হাতে। অকালে খেলা ছেড়ে জীবিকার টানে ভ্যান পর্যন্ত চালিয়েছেন কেউ কেউ। কেউ হয়েছেন ঝাড়ুদার, কেউবা রাজমিস্ত্রির সহকারী। যুব থেকে জাতীয় দলে এসে নজরকাড়া ফরোয়ার্ড রবিউল ইসলাম অল্প দিনেই হারিয়ে গেছেন। সিলেটে সাফ অনূর্ধ্ব–১৬ চ্যাম্পিয়ন দলের আলোচিত স্ট্রাইকার সরোয়ার জাহান এবারের প্রিমিয়ার লিগে মুক্তিযোদ্ধার হয়ে সব মিলিয়ে ১০০ মিনিটও খেলেননি। কোচ তাঁর ওপর আস্থা রাখতে পারেননি। সেই দলের সাদউদ্দিন ছাড়া কেউই ভালোভাবে টিকে থাকতে পারেননি।

এবার সাফ যুব ফুটবলে ৪ গোল করা আলোচিত স্ট্রাইকার মিরাজুল ইসলাম বা ভারতের বিপক্ষে জোড়া গোল করা স্ট্রাইকার পিয়াস আহমেদরাও হারিয়ে যাবেন না তো, সেই শঙ্কা তাই জাগেই। বাংলাদেশ যুব ফুটবল দলের সাবেক কোচ হাসানুজ্জামান বাবলুর মনেও প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে, ‘এ দেশে ফোটার আগেই ঝরে যায় অনেক ফুল। খেলোয়াড় তৈরির কোনো কাঠামো নেই। ফলে কদিন পরই তরুণেরা হতাশ হয়ে পড়ে। ওদের খবরও কেউ রাখে না। এখনই তাই মিরাজুলদের নিয়ে উৎফুল্ল হওয়ার হওয়া কিছু নেই। আগামীতে ওরা কতটা টিকে থাকে সেটা দেখতে হবে।’

সেই আগামী খুব কাছেই। ১০–১৮ সেপ্টেম্বর বাহরাইনে এএফসির অনূর্ধ্ব–২০ টুর্নামেন্টে বাহরাইন, কাতার, নেপাল ও ভুটানের বিপক্ষে খেলবেন মিরাজুলরা।