মেসি ও ম্যারাডোনা মিলে গেলেন এক মোহনায়

বিশ্বকাপ শিরোপায় চুমু লিওনেল মেসিরছবি: রয়টার্স

এই চিত্রনাট্য লিখেছিলেন কে! উত্তরটা সবাই জানেন। সবার জীবনের চিত্রনাট্য যিনি লিখেছেন, তিনি-ই লিখেছেন। ৩৬ বছর আগে ডিয়েগো ম্যারাডোনার চিত্রনাট্যও তিনি লিখেছিলেন। তখনই হয়তো ভেবে রেখেছিলেন, সাড়ে তিন দশক পর যে চিত্রনাট্য লিখতে হবে, সেটি পাল্টাবেন না। আর তাই লিওনেল মেসি ও ডিয়েগো ম্যারাডোনা মিলে গেলেন এক মোহনায়।

আরও পড়ুন

বিধিলিপি দুজনকে এমন এক মোহনায় মিলিয়ে দিয়েছে, যা দেখে বিস্ময় না জাগাই অস্বাভাবিক। মেক্সিকোর আজতেকা স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ জয়ের পর কেঁদেছিলেন ম্যারাডোনা। লুসাইলেও ঠিক একই চূড়ায় ওঠার পর মেসিও কেঁদেছেন। কেঁদেছেন আর্জেন্টিনার তরুণ সমর্থকেরা, যেভাবে ম্যারাডোনার হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি দেখে চোখের বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল সেসব সমর্থকের বাবা-মায়ের প্রজন্মের।

আজ সেভাবেই সেই কান্নার স্রোত আছড়ে পড়েছে লুসাইল ও আর্জেন্টিনার সীমানা ডিঙিয়ে পৃথিবীর আনাচ-কানাচে—তাবৎ আর্জেন্টিনার সমর্থকদের চোখে কিংবা বুকে।

মেসির হাতের বিশ্বকাপ। এই ছবি দেখার অপেক্ষায় ছিলেন আর্জেন্টাইনরা
ছবি: রয়টার্স

সেসব আনন্দশ্রুর দমকে সন্তুষ্টির যে বারিধারা বর্ষিত হলো, তা দেখে সেই পরম সত্ত্বাও নিশ্চয়ই খুশি হবেন! কতটা প্রার্থনায় এই শিরোপা মেলে, কতটা অপেক্ষায় সেই শিরোপাটা আর্জেন্টাইন ফুটবলের বরপুত্রের হাতের ওঠে—উদাহরণ হয়ে থাকবে এ পৃথিবীর সব অপেক্ষাধীন মানুষের জন্য। মেসিকে দেখে নিজ নিজ প্রার্থনার হাত হয়তো তাঁরাও ছাড়বেন না!

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

হয়তো ওখানে ম্যারাডোনাও প্রার্থনায় ছিলেন। উত্তরসূরি এবার অন্তত যেন খালি হাতে না ফেরে! ম্যারাডোনা তো ম্যারাডোনা, মেসিকে নিয়ে পৃথিবীর সব মানুষের প্রার্থনাই হয়তো কবুল হয়েছে। সেটিও এমন দারুণভাবে যে তাকে বিস্ময়কর বলতেই হবে। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ম্যারাডোনা ৫ গোল করেছিলেন। গোল বানিয়েছিলেন আরও ৫টি। জিতেছিলেন ‘গোল্ডেন বল’। মেসি এই বিশ্বকাপে গোল করেছেন ৭টি, বানিয়েছেন ৩টি। সব মিলিয়ে ’৮৬-র ম্যারাডোনার মতোই হলো ১০ গোল। ’৮৬-র ম্যারাডোনার মতোই জিতলেন গোল্ডেন বল।

আরও কী চাই, ৩৬ বছর আগে ম্যারাডোনাই সর্বশেষ খেলোয়াড় হিসেবে এক বিশ্বকাপে গোল করা ও গোল বানানো মিলিয়ে অন্তত ১০ গোলে সরাসরি অবদান রেখেছিলেন। মাঝে ৮টি বিশ্বকাপে কেউ গোল করা ও বানানো মিলিয়ে অন্তত ১০ গোলে সরাসরি অবদান রাখতে পারেননি।

ম্যারাডোনার সেই কীর্তিকে এবার ফিরিয়ে বিশ্বকাপও জিতলেন মেসি। চাইলে ’৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যারাডোনার সেই সলো মুভে করা গোল এবং ‘হ্যান্ড অব গড’-এর স্মৃতিও মনে করতে পারেন। ক্লাব ফুটবলেও সেসব স্মৃতি ফিরিয়েছেন মেসি। এই চিত্রনাট্য সত্যিই অনন্য।

আরও পড়ুন