সুদূর আফ্রিকা থেকে ভেসে আসা রং আর শব্দের সমাহার

ফুটবল এমন এক খেলা, যেখানে গোল হওয়া না–হওয়ার আনন্দ-বেদনার সঙ্গে জটিলতম সব ফরমেশন ও কৌশলের মজা পাওয়া যায়। যে যার জায়গা থেকে খেলাটাকে উপভোগ করতে পারার এই দুর্দান্ত সর্বজনীনতা খেলাটাকে দুনিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় ইভেন্টে পরিণত করেছে। আর নিঃসন্দেহে ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর হলো বিশ্বকাপ ফুটবল। চার বছর পরপর হওয়া এই টুর্নামেন্টের সময় গোটা পৃথিবীর নজর থাকে কে জিতল, কে হারল। খেলাটির সব রকম মানবীয় আবেগকে ধারণ করার যে ক্ষমতা, এ কারণে বিশ্বকাপ ফুটবল শুধু হার-জিতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এই ইতিহাস তো মানুষেরই ইতিহাস। কাতারে আর কিছুদিন পরই শুরু হবে বিশ্বকাপের ২২তম আসর। তার আগে ফিরে তাকিয়ে ২০১০ বিশ্বকাপের গল্প শোনা যাক।

সে বছর দুবাইয়ে খাড়া হয়ে যায় ২ হাজার ৭২২ ফুটের বুর্জ আল খলিফা, দুনিয়ার সবচেয়ে উঁচু দালান। এর চেয়ে বেশি উচ্চতা আর উত্তেজনা নিয়ে শুরু হয় ২০১০ বিশ্বকাপ। আফ্রিকা মহাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ। দারুণ রং আর গানে, দুনিয়ার সবচেয়ে বর্ণিল মহাদেশে, আধুনিক মানুষের আদি ভূমিতে, নেলসন ম্যান্ডেলার দক্ষিণ আফ্রিকায়।

যদিও প্রাণ ভরিয়ে দেওয়া ফুটবল মাঠে দেখা যায়নি। আরও একটা ‘জঘন্য’ ফাইনাল দেখতে বাধ্য হন দুনিয়াজোড়া ফুটবলপ্রেমীরা, তবে আফ্রিকানরা প্রমাণ করেছিল যে শত দুর্নাম সত্ত্বেও সম্পদের লোভে মহাদেশটিতে আজীবন গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে রাখলেও তারা একটা মহাযজ্ঞ আয়োজন করতে পারে সুষ্ঠুভাবেই।

স্পেন যোগ্য চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই শিরোপা জিতেছে। টিকিটাকা নামের এক দুর্দান্ত পাসিং ফুটবলের পসরা সাজিয়ে তারা এর দুই বছর আগে ইউরোপসেরার শিরোপা জেতে আর জাভি আলোনসো, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, জাভি হার্নান্দেজরা সেবার অধরা বিশ্বকাপটা জিতে নেন।

গ্রেট স্প্যানিশ সার্কাসগুলোর একটা বড় অংশজুড়ে থাকত জোকারদের ছোট ছোট বল হাতে নিয়ে জাগলিং করার খেলাগুলো। এর মধ্যে একটা খেলায় দুটি বলকে একটি নাইলনের সুতায় বেঁধে হাতে নিয়ে একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধিয়ে উৎপন্ন করা হতো অদ্ভুত এক সুর। ভারসাম্যের আজব এ খেলা দেখানো খেলনার নামই টিকিটাকা। ফুটবলে এই ভারসাম্য, পুরো মাঠজুড়ে মাকড়সার জাল আর অদৃশ্য ত্রিভুজ তৈরির মোহনীয় খেলা উপহার দেয় স্পেন।

শিরোপা হাতে স্পেন দল
ফাইল ছবি

সেই স্পেন, যেখানে রিয়াল মাদ্রিদ আর বার্সেলোনা নামের দুটি অসাধারণ ক্লাবে বছরের পর বছর খেলেছেন দুনিয়ার সেরারা। ইয়োহান ক্রুইফ টোটাল ফুটবলের আবেশ ছড়িয়েছিলেন দেশটিতে। কিন্তু ক্রুইফের দেশ নেদারল্যান্ডস তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠে এবারও পারল না। দায়টা অবশ্য তাদেরই। ১১ জুলাইয়ের ফাইনালটা তারা খেলল প্রচণ্ড গা–জোয়ারি।

ক্রুইফ এ কারণে প্রচণ্ড খেপে ছিলেন তাদের অ্যান্টি-ফুটবলে। নাইজেল ডি ইয়ং কুংফুর কায়দায় আলোনসোর বুকের ওপর যে লাথি কষান, তাতে যে স্প্যানিয়ার্ডের আক্ষরিক অর্থেই বুক ভেঙে যায়নি, তা তাঁর ও ফুটবলের কপাল। তথাপি ইংরেজ রেফারি হাওয়ার্ড ওয়েব ইয়াংকে কেবল হলুদ কার্ড দেখালেন।

ওয়েবের এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কিংবদন্তি কোচ অ্যালেক্স ফার্গুসন। তিনি মনে করেন, ম্যাচের শুরুর দিকে, যত বড় অন্যায়ই হোক না কেন, লাল কার্ড দেখিয়ে খেলার ‘ভারসাম্য’ নষ্ট করার সুযোগ রেফারির নেই। এ যে কেবল এক ব্রিটিশ আরেক ব্রিটিশের সাফাই গাইছেন, তা নয়।

যাঁরা ইংলিশ ফুটবল দেখেন, তাঁরা জানেন, ফার্গুসনের প্রতি ওয়েবের বরাবরই একটা দুর্বলতা ছিল। কিন্তু অদৃষ্টের বিচারেই কিনা কে জানে, সেদিন সবচেয়ে ভালো দুটি সুযোগ নষ্ট করে নেদারল্যান্ডসই। সুযোগ দুটি আবার নষ্ট করেন দলের সেরা খেলোয়াড় আরিয়েন রোবেন। টিকিটাকার সম্রাট ইনিয়েস্তা শেষ হাসি হাসেন সেস ফাব্রিগাসের অ্যাসিস্টে ফাইনালের একমাত্র গোল দিয়ে।

ফাইনালে গোলের পর আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার উদ্‌যাপন
ফাইল ছবি

আগের আসরের এক অদ্ভুত ব্যাপার এবারও ঘটেছে। প্রথম রাউন্ডেই বিদায় নেয় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইতালি, তা–ও কোনো জয় ছাড়াই। প্যারাগুয়ে আর নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করে। ‘এফ’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে তারা হারে স্লোভাকিয়ার বিপক্ষে। ইতালি দলটিকে মনে হচ্ছিল হতোদ্যম, প্রাণশক্তির অভাব। প্রাণশক্তি জোগাতে পারেন, এ রকম দুজন খেলোয়াড়কে দলে নেননি ইতালির কোচ মার্সেলো লিপ্পি। সেই দুজনকে সামলানোকেই তিনি কঠিন ভাবতেন।

তাঁদের একজন আন্তোনিও কাসানো। বারির বস্তি থেকে উঠে আসা এ খেলোয়াড় ছিলেন অপরিসীম মেধাবী। তবে তিল পরিমাণ শৃঙ্খলাবোধ ছিল না তাঁর। ১৯ বছর বয়সে বিপুল অঙ্কে রোমায় যোগ দেন, সেখান থেকে রিয়াল মাদ্রিদে। তবে ঝামেলাই বেশি করতেন বলে খেলেছেন কম। কোচদের সঙ্গে নানা রকম ফ্যাসাদ তো আছেই, তিনি বেশ গর্বের সঙ্গে বলে বেড়াতেন, তিনি একবার নাকি জাতীয় দলের এক ক্যাম্পে চুরি করে বান্ধবীকে নিজের কক্ষে নিয়ে আসতেন কর্তৃপক্ষকে ফাঁকি দিয়েই।

আরেকজন তরুণ মারিও বালাতোল্লি। তাঁকে নিয়ে গল্পের শেষ নেই মাঠে ও মাঠের বাইরে। ঘানার এক অভিবাসী পরিবারের এ সন্তানের মানসিক অস্থিরতা, শৃঙ্খলাভঙ্গের ইতিহাস, বিপুল প্রতিভা ও নিজেকে বর্ণবাদের শিকার ভেবে সারা জীবন রাগ উগরে দেওয়ার গল্পটা ফুটবল ইতিহাসেরই এক অবিশ্বাস্য অধ্যায়। নিজের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া এই ফুটবলারের গল্পটা অন্য কোথাও বিশদে হয়তো একদিন লেখা হবে। তবে সেবার ইতালি তাঁর অনুপস্থিতি নিশ্চিতভাবেই টের পেয়েছিল।

ম্যারাডোনা ও মেসি যখন গুরু–শিষ্য। ২০১০ বিশ্বকাপে
ছবি: এএফপি

চ্যাম্পিয়ন ইতালির মতো আগেরবারের ফাইনালিস্ট ফ্রান্সও প্রথম রাউন্ডে বিদায় নেয়; হারে মেক্সিকো আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। অবশ্য ফ্রান্সের বিশ্বকাপে আসাটাই ছিল বিতর্কিত। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাছাইপর্বে থিয়েরি অঁরি অ্যাসিস্ট করার সময় দু-দুবার হাত দিয়ে বল থামালেও রেফারি তা এড়িয়ে যান। আর মূল পর্বে দলটির কোনো সংহতিই ছিল না, অঁরি খেলেন মাত্র ৩৫ মিনিট। বাকিরাও ছন্নছাড়া, বহু ভাগে বিভক্ত। এমনকি শেষ ম্যাচের আগে তাঁরা ধর্মঘটের ডাক দিয়ে অনুশীলনও বর্জন করেন। সেই ম্যাচে ফ্রান্স হারে এবং জিতে বিদায় নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথমবারের মতো স্বাগতিক হিসেবে প্রথম রাউন্ডেই বাদ পড়ে।

আর্জেন্টিনাও বাছাইপর্বের খেলায় উরুগুয়ের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তের গোলে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয়। ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে কোচিংয়ের দায়িত্ব দেওয়াটা বিতর্কিত হলেও সহজ গ্রুপ ‘বি’র তিনটা ম্যাচই তারা জেতে।

আরেক সহজ গ্রুপ ‘সি’ থেকে ইংল্যান্ডও পরের রাউন্ডে যায়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের পেছনে থেকে। জার্মানি সার্বিয়ার বিপক্ষে হারলেও ‘ডি’ গ্রুপে শীর্ষে ছিল। সার্বিয়া বাকি দুই ম্যাচেই হারে আর ঘানা এই গ্রুপ থেকে পরের রাউন্ডে যায়।

নেদারল্যান্ডস ও জাপান যথাক্রমে ৯ ও ৬ পয়েন্ট পায় গ্রুপ ‘ই’তে। ইতালির গ্রুপ থেকে উত্তীর্ণ হয় প্যারাগুয়ে ও স্লোভাকিয়া। ব্রাজিল ও পর্তুগাল ‘জি’ গ্রুপে প্রথম ও দ্বিতীয় হয়। প্রায় অর্ধশতক পর খেলতে এসে উত্তর কোরিয়া প্রথম ম্যাচে ব্রাজিলের সঙ্গে লড়াই করে ২-১ গোলে হারে। তবে পর্তুগালের বিপক্ষে সাত গোল হজম করে। আর প্রথম ম্যাচেই সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে হারলেও হন্ডুরাস ও চিলিকে হারিয়ে দ্বিতীয় পর্বে যায় স্পেন।

২০১০ বিশ্বকাপে বান্ধবী কারবোনেরোকে ক্যাসিয়াসের সেই বিখ্যাত চুমু
টুইটার

দ্বিতীয় রাউন্ডে সবার চোখ ছিল জার্মানি আর ইংল্যান্ডের খেলায়। চেলসিতে খেলা জার্মান অধিনায়ক মাইকেল বালাকের ধারণা ছিল, এই টুর্নামেন্টে তাঁদের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু কোচ ইওয়াখিম লোর অধীন তরুণ তুর্কি (আক্ষরিক অর্থেই) মেসুত ওজিল সৃষ্টিশীলতার অনন্য নজির দেখান। সঙ্গে ছিলেন মুলার আর বিশ্বকাপ এলেই গোলের বন্যা বইয়ে দেওয়া মিরোস্লাভ ক্লোসা। জার্মানি ইংরেজদের এক হালি গোল দেয়। এই বিস্ময়যাত্রা অব্যাহত থাকে পরের রাউন্ডেও। এবার এক হালি হজম করে ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা।

‘মনে হলো যেন মোহাম্মদ আলীর ঘুষি খাইলাম’—খেলা শেষে বলেছিলেন অসহায় ম্যারাডোনা। যেই বিশ্বকাপ খেলোয়াড় হিসেবে তাঁকে সব দিয়েছিল, কোচ হিসেবেই দিল নিদারুণ লাঞ্ছনা। মেসিসহ অন্য তরুণ প্রতিভারা ম্যারাডোনার অধীন নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি। অন্যদিকে ২০ বছরে মুলার ছিলেন জার্মান যন্ত্রের ফুসফুস। ওজিল ছিলেন হৃদয় আর হেডে গোল করায় সিদ্ধহস্ত ক্লোসা যেন মস্তিষ্ক। ফলে তেভেজের জোড়া গোল আর হিগুয়েইনের গোলে মেক্সিকোকে দ্বিতীয় রাউন্ডে হারানো আর্জেন্টিনা উড়ে যায়।

ব্রাজিলেরও পরিণতি একই রকম হয়। দক্ষিণ আমেরিকার দল চিলিকে দ্বিতীয় রাউন্ডে ৩-০ গোলে হারালেও কোয়ার্টার ফাইনালে ২-১ গোলে হারে নেদারল্যান্ডসের কাছে।
চিলির কোচ মার্সেলো বিয়েলসা মন্তব্য করেছিলেন, ব্রাজিলের এ দল আমাদের তুলনায় অনেক শক্তিশালী। আর্জেন্টাইন বিয়েলসা আধুনিক ফুটবলের এক সুবাতাস।

তিনি ফুটবলেই বাঁচেন, ফুটবলই তাঁর ধ্যানজ্ঞান। আরেক দক্ষিণ আমেরিকান, উরুগুয়ের লুইস সুয়ারেজ কোয়ার্টার ফাইনালে পরিণত হন আলোচিত চরিত্রে। শেষ মুহূর্তে গোললাইন থেকে হাত দিয়ে বল ফিরিয়ে তিনি নিশ্চিত গোল ঠেকান এবং লাল কার্ড দেখেন। ঘানার আসামোয়া জিয়ান তা থেকে পাওয়া পেনাল্টি মিস করেন এবং শেষতক টাইব্রেকারে হেরে আফ্রিকার দলটি সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয়।

২০১০ বিশ্বকাপ শুরুর আগে জুরিখে ফিফা সদর দপ্তরে বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে নেলসন ম্যান্ডেলা
ফাইল ছবি

কেপটাউন স্টেডিয়ামে প্রথম সেমিফাইনালটি ছিল অসাধারণ। লাল কার্ডের খাঁড়ায় বাদ পড়া সুয়ারেজবিহীন উরুগুয়ের বিপক্ষে আরিয়েন রোবেন ৭৩ মিনিটের এক দুর্দান্ত হেডে দলকে ৩-১ গোলে এগিয়ে দেন। এর আগে ফন ব্রংকহোর্স্ট ১৯ মিনিটে ডাচদের এগিয়ে দেন আর দিয়েগো ফোরলান ৪০ মিনিটে সমতা ফেরানোর পর রবিন ফন পার্সির অ্যাসিস্টে স্নাইডার ডাচদের হয়ে দ্বিতীয় গোল করেন। অবশ্য গোলটা অফসাইড ছিল কি না, এ নিয়ে নিরন্তর বিতর্ক চলে। সুয়ারেজের অভাবে ফোরলান একাই দলকে টানছিলেন, শেষ মুহূর্তে পেরেইরাকে দিয়ে একটা গোলও করান, কিন্তু তা যথেষ্ট ছিল না।

অন্য সেমিফাইনালে ভাবা হচ্ছিল, স্পেনের টিকিটাকার বিপক্ষে জার্মান যন্ত্রের অনবদ্য লড়াই হবে। কিন্তু জার্মানরা হতাশ করেন। কার্লোস পুয়োল ৭৩ মিনিটে জাভির কর্নার থেকে হেডে ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেন।

ফাইনালের আলাপ তো করাই হলো। ফাইনালের মতোই সেই টুর্নামেন্টের দুটি বিভীষিকা ছিল ভুভুজেলা আর জাবুলানি। টাকাপাগল ফিফা অ্যাডিডাসের চাপে জাবুলানি নামের এক অদ্ভুত বল দিয়ে খেলা চালায়, যার বাতাসে চলাফেরার অনিশ্চয়তা খেলোয়াড় আর দর্শকদের বিরক্তির উদ্রেক করে। আর অতি বিকট ভুভুজেলার আওয়াজ গোটা দুনিয়াকে রীতিমতো অসুস্থ বানিয়ে দেয়।

অবশ্য ভুভুজেলার আওয়াজের অন্য পাশে শোনা যায় বব মার্লের র‍্যাগেতে অনুপ্রাণিত কোনানের ওয়েভিং ফ্ল্যাগ গানের সম্মোহনী সুর আর অস্ফুট আর্তনাদ।