ভালো–মন্দ মিলিয়ে তাবিথের কমিটির এক বছর
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে এক বছর পূর্ণ হয়েছে তাবিথ আউয়ালের। চার সাবেক ফুটবলারের দৃষ্টিতে যেমন ছিল তাবিথের এই এক বছর—
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে গতকাল রোববার এক বছর পূর্ণ হয়েছে তাবিথ আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিটির। চার সাবেক ফুটবলারের দৃষ্টিতে যেমন ছিল বাফুফের কাজী সালাহউদ্দিন–পরবর্তী এই এক বছর—
সীমাবদ্ধতার মাঝেও প্রাপ্তি আছে
গোলাম সারোয়ার
আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা। এরপরও গত এক বছরে কিছু প্রাপ্তি আছে। মাঠ নিয়ে আমাদের যে সমস্যা, সেটা এখনো কাটেনি। তাবিথের চেষ্টাটা আছে, হয়তো সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক কিছু করতে পারছেন না। প্রবাসী ফুটবলারদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা, তাঁদের মা–বাবাকে রাজি করানো, এগুলো ভালো দিক।
তৃণমূলের লিগগুলো চালাবেন কোথায়, মাঠই তো নেই। মোহামেডানের মতো ক্লাব, তারা সকালের নাশতা নিয়ে বের হয়, কোথায় অনুশীলন করবে, তা জানে না। যেখানে পাকা জায়গা পায়, সেখানেই অনুশীলনে নেমে পড়ে। সকালের খাওয়াদাওয়াও সেখানে করে নেয়। এই অবকাঠামো নিয়ে কতদূর এগোনো যাবে!
বাফুফে চাইলেই পাইওনিয়ার লিগ চালাতে পারবে না, তারা চাইলেই বাংলাদেশের সব জায়গায় লিগ করতে পারবে না। কারণ, ঢাকার বাইরের মাঠগুলো ডিসি-এসপিদের হাতে। সেখানে আজ মিটিং, কাল সভা, পরশু মেলা।
হাইপ ছাড়া কিছুই দেখছি না
আব্দুল গাফফার
একটা কাজই হয়েছে, ফুটবলের হাইপ তৈরি করতে পেরেছেন, সেটা অবশ্য শুধু হামজার জন্য। এই হাইপ শুধুই জাতীয় দলকে ঘিরে হচ্ছে। যেটা আমার মতে মানুষকে একটু স্টেডিয়ামমুখীও করতে পেরেছেন। এই পরিবর্তনকে অবশ্যই স্বাগত জানাই।
কিন্তু যে বিষয়টা আমরা সব সময় বলে আসছি, সেটা হচ্ছে না। পুরো বাংলাদেশের ফুটবলটা পরিচালিত হচ্ছে না তৃণমূল পর্যায় থেকে। বাফুফের এই কমিটির ব্যর্থতা এখানেই। জেলা, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজপর্যায়ে খেলা নেই।
বাফুফেও এটা ভাবছে না যে আজ যাঁরা খেলছেন, তাঁরা না থাকলে আগামী দিনে কারা খেলবেন। অর্থাৎ ফুটবলার তৈরিতে তেমন নজর নেই তাদের। জাতীয় দলকেন্দ্রিক হাইপ ছাড়া আর কিছুই দেখছি না আমি। সেটাও এক দিনের জন্য।
সামনে ভারতের সঙ্গে খেলা, স্টেডিয়াম পরিপূর্ণ হবে, সেটা কিন্তু ওই এক দিনের জন্যই। কিন্তু আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ফুটবলের প্রতি আরও আগ্রহী করে তোলার জন্য যেসব পরিকল্পনা দরকার, সেগুলো হচ্ছে না।
সাংগঠনিক দিক থেকে তাঁরা ব্যর্থ
আশরাফউদ্দিন আহমেদ
আমরা তখনই তাঁদের সফল বলব, যখন তাঁরা পুরো ফুটবলটাকে ঢেলে সাজাতে পারবেন। সারা দেশে ফুটবলটা ছড়িয়ে দিতে পারবেন। আমরা আশা করেছিলাম, তৃণমূল পর্যায়ে ফুটবলটা প্রাণ ফিরে পাবে। ঢাকার বাইরেও নিয়মিত লিগ হবে। কিন্তু তেমন কিছু লক্ষ করা যায়নি। তাই বলব, সাংগঠনিক দিক থেকে তাঁরা পুরোপুরি ব্যর্থ।
তাঁরা একটা দিক অবশ্য ভালো করেছেন, প্রবাসী ফুটবলারদের এনে একটা হাইপ তৈরি করতে পেরেছেন। ফুটবলে একটা জাগরণ ঘটাতে পেরেছেন। এটা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। এর বাইরে গত এক বছরে দৃশ্যমান কোনো উন্নতি চোখে পড়েনি।
ঢাকার বাইরের লিগগুলো হচ্ছে না। তৃণমূলে তেমন নজর নেই তাঁদের। আসলে পরিবর্তনটা হবে কীভাবে? বর্তমান কমিটিতে যাঁরা আছেন, তাঁরা তো আগের কমিটিরই লোকজন। সে জন্য তাঁদের মাথা থেকে নতুন কোনো পরিকল্পনা বা চিন্তাভাবনাও আসে না। আগে যেমন দেখেছি, এখনো সেভাবেই চলছে।
অবকাঠামোয় নজর দেওয়া উচিত
রুম্মন বিন ওয়ালী সাব্বির
তাঁরা চেষ্টা করছেন ঠিকই, তবে আমার মনে হয় অবকাঠামোয় আরও নজর দেওয়া উচিত। ফুটবলের উন্নয়ন করতে হলে সব খেলা চালাতে হবে। জেলা লিগ, ঢাকা লিগ, পাইওয়নিয়ার লিগ—সব লিগই নিয়মিত আয়োজন করতে হবে। এগুলো যখন ঠিকঠাকভাবে হবে, তখন দেশে ফুটবলার এমনিতেই তৈরি হবে।
জেলার ফুটবলে মনোযোগ দিলে পাইপলাইনে নিয়মিত খেলোয়াড় আসত। ডিএফএ (ডিস্ট্রিক্ট ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন) নিয়ে কাজ দেখিনি। যাঁরা ফুটবল লিগ চালাতে পারবেন, তাঁদের নিয়ে ডিএফএ পুনর্গঠন করা উচিত।
ফুটবল লিগে দলের সংখ্যা কম হলে খেলোয়াড় পাবেন না। ১০টা দল নিয়ে কেন লিগ। কমপক্ষে ১৬টি দল করা উচিত। ১৬ দল যদি করতে পারে, তাহলে লিগগুলো থেকে ভালো খেলোয়াড় পাওয়া যাবে। আসলে এই এক বছরে খুব বেশি কিছু আমরা পাইনি। আমার মনে হয় কিছু জায়গায় ঘাটতি আছে। সেগুলো পূরণ করতে পারলে সামনে ভালো কিছু হয়তো হবে।