তাহলে কি আর্জেন্টিনায় খেলা হচ্ছে না জামাল ভূঁইয়ার

বাংলাদেশের মিডফিল্ডার জামাল ভুঁইয়া সুযোগ পেয়েছেন আর্জেন্টিনার ফুটবলে খেলারছবি: প্রথম আলো

শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টিনার তৃতীয় বিভাগের ক্লাব সোল দে মায়োতে খেলা হবে জামাল ভূঁইয়ার? গত কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহ যা, তাঁর আর্জেন্টিনায় খেলার বাস্তব সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। জামাল অবশ্য দৌড়ঝাঁপ করছেন নিজ ক্লাব শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র থেকে অনুমতি নিতে। কিন্তু অনুমতি এখনো পাননি। ফলে ম্যারাডোনার দেশের ক্লাবে খেলার পথে বড় বাধাটা এখনো রয়েই গেছে বাংলাদেশ অধিনায়কের সামনে।

গত পরশু জামাল দেখা করেন শেখ রাসেল ক্লাবের অর্থ ও ফুটবল দল দেখাশোনার দায়িত্ব থাকা পরিচালক মোহাম্মদ ফখরুদ্দিনের সঙ্গে। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। জামালের ভাষ্য অনুযায়ী, ক্লাব তাঁকে ছাড়তে রাজি নয়।

আমি যখন শেখ রাসেল ক্লাবের সঙ্গে মিটিং করেছি, ওরা আমাকে “না” করেছে। অর্থাৎ রিলিজ লেটার দেবে না তারা। কিন্তু আমার তো ওই চিঠি লাগবে। আর্জেন্টিনার ক্লাবটি আমাকে ৮ মার্চ ওদের সামনের ম্যাচেই চায়। আজও বারবার ফোন করেছে ওরা। আমি বলেছি, সরি ভাই, এটা আমার হাতে নেই। আমি চেষ্টা করছি ছাড়পত্রটা নিতে
জামাল ভূঁইয়া, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের মিডফিল্ডার

এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ ফখরুদ্দিন প্রথম আলোকে কাল বলেন, ‘জামাল এসে মৌখিকভাবে বলেছে, সে আর্জেন্টিনার একটি ক্লাবে খেলার প্রস্তাব পেয়েছে। যেতে যে চায়, সেটা বলেনি। কোনো চিঠিও দেয়নি। চিঠি দিলে আমরা সেটা ক্লাবের ওপর মহলে পাঠাতাম। ওপর মহল থেকেই সিদ্ধান্তটা আসবে। কিন্তু কোনো চিঠি না দিলে তো আমরা কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারি না তাকে।’

বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া
ছবি: প্রথম আলো

চিঠি দিলেও যে চুক্তি থাকা অবস্থায় জামাল ভূঁইয়াকে ছেড়ে দেবে শেখ রাসেল, এমন আভাস নেই; বরং আভাস আছে না ছাড়ারই। মোহাম্মদ ফখরুদ্দিন বলেন, ‘চলতি মৌসুমের শেষ পর্যন্ত জামালের সঙ্গে আমাদের চুক্তি আছে (জুলাইয়ে লিগ শেষ হওয়ার কথা)। সে আমাদের অধিনায়ক ও গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। কাজেই চাইলেই আমরা তাকে ছাড়তে পারি না। আমি বলব, জাতির প্রতি কর্তব্যবোধ আগে। লিগ চলার সময় কোনো চিঠি ছাড়া ওকে ছাড়ার ব্যাপারে মন্তব্য করা কঠিন।’

আমি মনে করি, একটা খেলোয়াড় আর্জেন্টিনায় গিয়ে খেলতে পারলে আরও অনেকে যেতে পারবে। ১৯৭৫ সালে আমি যখন হংকংয়ে পেশাদার লিগ খেলতে যাই, আরও কয়েকজনকে তখন ওরা আমার কাছে চায়। শেখ রাসেল ক্লাবের পরশু রাতে মিটিং করে তাদের সিদ্ধান্ত আমাকে জানানোর কথা ছিল। কিন্তু তারা কিছু জানায়নি।
কাজী সালাউদ্দিন, বাফুফে সভাপতি

তবে জামাল আর্জেন্টিনায় যেতে উদ্‌গ্রীব। তিনি বলছেন, আর্জেন্টিনার ওই ক্লাবের পক্ষে এজেন্ট নাকি তিন দিন আগে চিঠি দিয়েছেন শেখ রাসেলকে, ‘এজেন্ট শেখ রাসেল ক্লাবে বাংলা ও ইংরেজিতে দুটি চিঠি দিয়েছে।’ কিন্তু ক্লাব বলছে, জামাল কোনো চিঠি দেননি। জামালকে তা বলা হলে তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, এজেন্ট ক্লাবকে চিঠি দিয়েছে।’

ক্লাব থেকে বলা হচ্ছে চিঠি দেননি জামাল। অন্যদিকে জামাল বলছেন, সোল দে মায়ো ক্লাবের এজেন্ট চিঠি দিয়েছেন। পুরো বিষয়টা নিয়ে তৈরি হয়েছে গোলকধাঁধা। কিন্তু জামাল হাল ছাড়ছেন না। শেখ রাসেলের অনুমতি আদায়ে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে গত পরশু দেখা করেছেন জামাল।

আরও পড়ুন
বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন
প্রথম আলো ফাইল ছবি

বাফুফের সভাপতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শেখ রাসেল ক্লাবকেও অনুরোধ করেছি। কারণ, আমি মনে করি, একটা খেলোয়াড় আর্জেন্টিনায় গিয়ে খেলতে পারলে আরও অনেকে যেতে পারবে। ১৯৭৫ সালে আমি যখন হংকংয়ে পেশাদার লিগ খেলতে যাই, আরও কয়েকজনকে তখন ওরা আমার কাছে চায়। শেখ রাসেল ক্লাবের পরশু রাতে মিটিং করে তাদের সিদ্ধান্ত আমাকে জানানোর কথা ছিল। কিন্তু তারা কিছু জানায়নি।’

শেখ রাসেল ক্লাব মূলত চলে বসুন্ধরা গ্রুপের অর্থায়নে। এ কারণে বিষয়টি নিয়ে সালাউদ্দিন বসুন্ধরা গ্রুপের কর্মকর্তা ও বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসানের সঙ্গেও কথা বলেছেন।

এ ব্যাপারে ইমরুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। জামালের ভাষ্য অনুযায়ী, তিন দিন আগে তিনি দেখা করেছেন বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসানের সঙ্গে। কিন্তু ছাড়পত্র আদায় করতে পারছেন না কিছুতেই।

আরও পড়ুন
এ মাসেই ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট সামনে রেখে জাতীয় দল সৌদি আরবের মদিনায় যাচ্ছে ক্যাম্প করতে। জামালও আছেন ২৭ জনের প্রাথমিক দলে
ফাইল ছবি

জামাল কাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যখন শেখ রাসেল ক্লাবের সঙ্গে মিটিং করেছি, ওরা আমাকে “না” করেছে। অর্থাৎ রিলিজ লেটার দেবে না তারা। কিন্তু আমার তো ওই চিঠি লাগবে। আর্জেন্টিনার ক্লাবটি আমাকে ৮ মার্চ ওদের সামনের ম্যাচেই চায়। আজও বারবার ফোন করেছে ওরা। আমি বলেছি, সরি ভাই, এটা আমার হাতে নেই। আমি চেষ্টা করছি ছাড়পত্রটা নিতে।’

এ মাসেই ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট সামনে রেখে জাতীয় দল সৌদি আরবের মদিনায় যাচ্ছে ক্যাম্প করতে। জামালও আছেন ২৭ জনের প্রাথমিক দলে। সব মিলিয়ে জামাল ভূঁইয়ার আর্জেন্টিনায় খেলতে যাওয়ার আপাতত কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

আর্জেন্টিনায় খেলা মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত। এই তথ্য জানিয়ে জামাল ভূঁইয়া বলেন, ‘আর্জেন্টিনায় খেলার সুযোগ পাওয়া আমার জন্য বড় ব্যাপার। আমি চাই এই সুযোগ নিতে। কিন্তু ক্লাব না ছাড়লে কী করার আছে।’

আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস কদিন আগে দাবি করেছে, ক্লাবটির সঙ্গে চুক্তিও নাকি সেরে ফেলেছেন বাংলাদেশের এই মিডফিল্ডার। ওই ক্লাবের খেলোয়াড় তালিকায়ও উঠেছে তাঁর নাম।

ওদিকে এ মাসেই ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট সামনে রেখে জাতীয় দল সৌদি আরবের মদিনায় যাচ্ছে ক্যাম্প করতে। জামালও আছেন ২৭ জনের প্রাথমিক দলে। সব মিলিয়ে জামাল ভূঁইয়ার আর্জেন্টিনায় খেলতে যাওয়ার আপাতত কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন