পারল না ইরান, শেষ ষোলোয় যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রবে জয় এনে দেওয়া গোলটি করছেন ক্রিস্টিয়ান পুলিসিকছবি: রয়টার্স

জিতলেই ইতিহাস, নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে খেলা নিশ্চিত। ড্র করলেও সে আশা থাকবে, একই সময়ে শুরু হওয়া ‘বি’ গ্রুপের আরেক ম্যাচে ওয়েলস যদি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিততে না পারে।

এমন হিসাব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচটা খেলতে নেমে শুরুতে ওড়ার চেষ্টা করলেন ইরানের খেলোয়াড়েরা। কিন্তু মিনিট দশেকের মধ্যে বুঝতে পারলেন, এভাবে সম্ভব নয়। তার চেয়ে বরং গোল বাঁচানোর চেষ্টা করাটাই ভালো। রক্ষণটা জমাট রেখে প্রতি-আক্রমণে গোল করার সুযোগের চেষ্টা করে যাচ্ছিল ইরান। তবে যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণের যে ঢেউ নিয়ে ইরানের রক্ষণে আছড়ে পড়েছে, তা বেশিক্ষণ আটকে রাখতে পারেনি তারা।

ইরানের রক্ষণদেয়াল ভাঙল ৩৮ মিনিটে। মাঝমাঠ থেকে শুরু হওয়া একটি আক্রমণ থেকে বক্সের ডান দিকে বল যায় ওপরে উঠে আসা রাইটব্যাক সের্হিনিও দেস্তের কাছে। উড়ে আসা বলটি হেডে বক্সের ভেতরে ফেলেন তিনি। আগুয়ান ক্রিস্টিয়ান পুলিসিক ডান পায়ের টোকায় সেই বল পাঠান জালে। শেষ পর্যন্ত পুলিসিকের এই গোলেই ১–০ গোলে জিতে ইংল্যান্ডের সঙ্গে শেষ ষোলোতে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। শীর্ষে থেকে গ্রুপ পর্ব শেষ করতে ওয়েলসকে ১–০ গোলে হারিয়েছে ইংল্যান্ড।

বল জালে পাঠিয়ে টিমথি উইয়াহর উদ্‌যাপন। কিন্তু গোলটি অফসাইডের কারণে বাতিল হয়েছে
ছবি: রয়টার্স

এই নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে উঠল যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে তারা শেষ ষোলোতে খেলেছে ১৯৩৪, ১৯৯৪, ২০০২, ২০১০ ও ২০১৪ বিশ্বকাপে। ২০০২ সালে কোয়ার্টার ফাইনালেও খেলেছে তারা। যুক্তরাষ্ট্র কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে পারত ১৯৯৮ বিশ্বকাপেও। সেবার গ্রুপ পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ইরানের কাছে হেরেই বাদ পড়তে হয়েছে দলটিকে। বিশ্বকাপে আজকের আগে এটাই ছিল রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দিক থেকে ‘শত্রু’ দুই দেশের একমাত্র সাক্ষাৎ।

পারস্য উপসাগরের তীরে কাতার বিশ্বকাপে ইরান খেলতেই এসেছে দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে সঙ্গী করে। দেশে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত মানুষের সমর্থনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচের আগে দলটির খেলোয়াড়েরা জাতীয় সংগীতে কণ্ঠ মেলাননি। এ নিয়ে বিতর্ক আরও চাঙা হয়। সেই ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ৬–২ গোলে উড়ে যায় ইরান। দ্বিতীয় ম্যাচের আগে আবার জাতীয় সংগীতে কণ্ঠ মেলান ইরানের খেলোয়াড়েরা। সেই ম্যাচটি তারা ওয়েলসের বিপক্ষে জেতে ২–১ গোলে।

শেষ দিকে সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেনি ইরান
ছবি: রয়টার্স

ওই জয়ের পরই হাতছানি দিচ্ছিল ইতিহাস। কিন্তু গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচটি খেলতে নামার আগে তাসমান সাগরের ওপার থেকে আসে হুমকি। আর কোথাও থেকে নয়, হুমকিটা এসেছে নিজেদের দেশ ইরানের সরকারের পক্ষ থেকে। দেশটিতে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার পথ ধরেই সরকার হুমকি দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ম্যাচের আগে খেলোয়াড়েরা আচরণ সংযত না করলে বিপদ আছে!

সেই বিতর্কের রেশই হয়তো দেখা গেল ইরানের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে। মেহদি তারেমি–সরদার আজমনদের কখনো কখনো অনেক ক্লান্তই মনে হচ্ছিল। এ কারণেই মাঝেমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণে বল নিয়ে আছড়ে পড়লেও শেষ পর্যন্ত আর পারেননি। প্রথমার্ধের কথাই ধরুন, যুক্তরাষ্ট্রের গোল লক্ষ্য করে একটি শটও নিতে পারেনি ইরান। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমার্ধে ইরানের গোলের উদ্দেশে শট নিয়েছে ৯টি। যার চারটিই লক্ষ্যে ছিল। এর মধ্যে একটি থেকে গোল পেয়েছেন পুলিসিক। অন্যটি জালে জড়ালেও অফসাইডের কারণে গোল পাননি কিংবদন্তি জর্জ উইয়াহর ছেলে টিমথি উইয়াহ।

দ্বিতীয়ার্ধেও ইরানের অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। তবে ম্যাচের শেষ দিকে অবশ্য বেশ কয়েকটি ভালো সুযোগ তৈরি করেছিল ইরান। কখনো আক্রমণভাগের ভুলে, কখনো আবার যুক্তরাষ্ট্রের গোলকিপার ম্যাট টার্নারের দক্ষতায় গোলবঞ্চিত হয়েছে তারা।

শেষ ষোলোতে যুক্তরাষ্ট্র খেলবে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। আর ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ সেনেগাল।