‘স্টেডিয়ামে যাঁরা ছিলেন এবং তাঁকে বলটি দ্বিতীয়বার স্পর্শ করতে দেখেছেন, বলও নড়েছে, দয়া করে তাঁরা হাত তুলুন।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রতি এই অনুরোধ জানান আতলেতিকো মাদ্রিদ কোচ দিয়েগো সিমিওনে। কিন্তু কেউ হাত তোলেননি। সিমিওনে তাই পরের প্রশ্নোত্তরে চলে যান।
কিন্তু যে প্রশ্ন আর্জেন্টাইন কোচ রেখে গেলেন, তা নিয়ে এখন উত্তাল চ্যাম্পিয়নস লিগ। মেত্রোপলিতানো স্টেডিয়ামে গতকাল রাতে টাইব্রেকার থেকেই বিতর্কের শুরু। সংবাদ সম্মেলনেও তার রেশ থাকাই স্বাভাবিক। তবে টাইব্রেকারে হুলিয়ান আলভারেজ বলটি দ্বিতীয়বার স্পর্শ করেছিলেন কি না, তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক যে বেশ কিছুদিন চলবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
চ্যাম্পিয়নস লিগ শেষ ষোলোর ফিরতি লেগে কাল রাতে আতলেতিকোর মাঠে ১-০ গোলে হারে রিয়াল। দুই লেগ মিলিয়ে ২-২ গোলে দুই দল সমতায় থাকায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। কিন্তু অতিরিক্ত সময়েও জয়-পরাজয় নির্ধারিত না হওয়ায় টাইব্রেকারে যেতে হয় মাদ্রিদের চির বৈরী অথচ প্রতিবেশী দুই দলকে। ৪-২ গোলে টাইব্রেকার জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে রিয়াল।
আতলেতিকোর হয়ে দ্বিতীয় শটটি নিতে আসেন আলভারেজ। লক্ষ্যভেদ করলেও শটটি নেওয়ার সময় নিয়ম লঙ্ঘন করেন। শটটি নেওয়ার সময় আলভারেজের বাঁ পা একটু পিছলে গিয়েছিল। ডান পায়ের শট নেওয়ার আগে আলভারেজের বাঁ পা লেগেছে বলে, যেটা নিয়মের পরিপন্থী। টাইব্রেকার শট নেওয়ার সময় বল একবারই টাচ করা যাবে। আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারের বাঁ পা বলে লাগার দৃশ্য ভিডিও রিপ্লে দেখেও বোঝা কঠিন। বল নড়েছিল কি না সেটা স্পষ্টভাবে বোঝাও কষ্টকর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ভিডিওতে দেখা গেছে, আলভারেজের ডান পা বলে আঘাত হানার প্রায় সামান্য আগে তাঁর বাঁ পায়ের স্পর্শে বলটা একদমই হালকাভাবে একটু নড়েছে। স্লো-মোশন ভিডিওতেও নড়ার মুহূর্তটি পরিষ্কার করে বোঝা কঠিন। কিন্তু ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি প্রযুক্তি (ভিএআর) নিয়ম লঙ্ঘন করায় আলভারেজের গোলটি বাতিল করে।
সিমিওনে ব্যাপারটি মেনে নিতে পারেননি। সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘রেফারি বলেছেন পেনাল্টি স্পটে হুলিয়ান (শট নেওয়ার সময়) যে পায়ে (বাঁ পা) দাঁড়িয়েছিল, সেই পা দিয়ে বল স্পর্শ করেছে। কিন্তু বল তো নড়েনি। পেনাল্টি শটটি সঠিক না ভুল ছিল—ব্যাপারটি এখন এ নিয়ে শুধু তর্কই বাড়াবে। এসব ছাপিয়ে আমি খেলোয়াড়দের নিয়ে গর্বিত। সত্যি বলতে সুখী লাগছে।’
কেন সুখী লাগছে, সে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন সিমিওনে, ‘কারণ আমরা উদাহরণ দেওয়ার মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল মাদ্রিদকে হারাতে পারিনি। কিন্তু আমাদের বিপক্ষে তাদের খু্ব বাজে সময় কেটেছে।’
সিমিওনে জানিয়েছেন, আলভারেজের পেনাল্টি শট নিয়ে অফিশিয়ালরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এ ব্যাপারটি তিনিও বিশ্বাস করতে চান। কিন্তু সেটা পারছেন না যেসব কারণে, সংবাদ সম্মেলনে সেসব বলেছেন আতলেতিকো কোচ, ‘শুটআউটে পেনাল্টি নেওয়া ঠিক ছিল কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ভিএআরের সাহায্য নেওয়া কখনো দেখিনি। কিন্তু তারা দেখেছেন যে সে বলটা স্পর্শ করেছে। আমিও এটা বিশ্বাস করতে চাই। আমি বিশ্বাস করতে চাই যে তারা দেখেছেন সে বলটি স্পর্শ করেছে।’
সিমিওনে এরপর উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রতি জোরালো গলায় বলেন, ভিডিও রিপ্লেতে যাঁরা পরিষ্কার দেখেছেন আলভারেজ বলে দ্বিতীয়বার স্পর্শ করেছেন, তাঁরা হাত তুলুন, ‘আপনাদের হাত তুলুন, যারা দেখেছেন হুলিয়ান বল দ্বিতীয়বার স্পর্শ করেছে। কে হাত তুলবেন? কেউই হাত তোলেননি। এর বেশি আর কিছুই আমার বলার নেই...পরবর্তী প্রশ্ন।’
রিয়ালের গোলকিপার থিবো কোর্তোয়া স্বাভাবিকভাবেই সিমিওনের উল্টো প্রান্তে দাঁড়িয়ে। তাঁর দাবি, পা পিছলে যাওয়ার সময় আলভারেজ বল দ্বিতীয়বার স্পর্শ করেছেন, ‘শেষ পর্যন্ত এটা ছিল লটারি। মনে হয়েছে যে সে দ্বিতীয়বার বল স্পর্শ করেছে। রেফারিকে এটাই বলেছি। যদিও এটা দেখা সহজ না, তাদের জন্য ব্যাপারটা কিছুটা দুর্ভাগ্যও।’
তবে রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে অভিযোগ তোলায় আতলেতিকোর সমালোচনাও করেছেন কোর্তোয়া। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে স্পেনের রেফারিদের বিরুদ্ধে ‘কারচুপি’র অভিযোগ তোলায় নিজের ক্লাবকেও ছেড়ে কথা বলেননি কোর্তোয়া, ‘উয়েফা এটা পরিষ্কার দেখেছে—হারের পর নিজেদের অন্যায়ের শিকার ভাবাটা ভালো লাগে না। এসব নিয়ে সব সময়ই ঘ্যানঘ্যান করে। রেফারি নির্দিষ্ট কোনো দলকে সাহায্য করতে চান না, সেটা স্পেনেও না, ইউরোপেও না। তারা পরিষ্কারভাবে দেখে সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন...ভিএআরের মাধ্যমে তারা পরিষ্কার দেখেছেন। তাদের অনেক ছবি ও ক্যামেরা আছে।’
রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তিও মনে করেন রেফারির সিদ্ধান্ত সঠিক, ‘তারাই এটা ধরেছে। আমাদের মনে সন্দেহ জাগার আগেই ভিএআরে তারা এটা ধরেছে। আমিও দেখেছি। আমার মনে হয়, সে বাঁ পায়ে বলটা স্পর্শ করেছে, যেটা দ্বিতীয় স্পর্শ।’
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানিয়েছে, ফুটবলের আইনে বলা হয়েছে, বলে প্রথম স্পর্শের পর পেনাল্টি যিনি নিয়েছেন, তিনি ‘অবশ্যই আবারও বলটি স্পর্শ করতে পারবেন না, যতক্ষণ না পর্যন্ত তা আরেকজন খেলোয়াড় স্পর্শ করছেন।’