মাস্তানতুয়োনো একদিন রিয়ালে খেলবেন, সত্যি হলো আর্জেন্টিনার সাবেক ডিফেন্ডারের ভবিষ্যদ্বাণী

আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুয়োনো।রয়টার্স

বয়স ১৮ পূর্ণ হওয়ার আগেই ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুয়োনোকে দলে ভিড়িয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। রিভার প্লেটে খেলা এই আর্জেন্টাইন প্লেমেকারের জন্য রিয়ালের খরচের অঙ্কও বড়সড়ই। পাঁচ কোটি মার্কিন ডলারের রিলিজ ক্লজসহ সাত কোটি ডলারের বেশি খরচ করেছে স্প্যানিশ ক্লাবটি, যা আর্জেন্টাইন ক্লাব থেকে বিক্রি হওয়া দেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

সাবেক আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার মার্তিন দেমিচেলিস জানিয়েছেন, মাস্তানতুয়োনো একদিন রিয়াল মাদ্রিদে খেলবেন—এটা তিনি বছর দুয়েক আগেই বলেছেন। যখন বলেছেন, তখন মাস্তানতুয়োনো ছিলেন রিভার প্লেটের একাডেমির খেলোয়াড় আর দেমিচিলিস ক্লাবটির সিনিয়র দলের প্রধান কোচ।

ম্যানচেস্টার সিটি ও বায়ার্ন মিউনিখের সাবেক ডিফেন্ডার দেমিচিলিস এখন মেক্সিকান ক্লাব মন্তেরেইর কোচ। এর আগে ২০২২ থেকে ২০২৪ সময়ে ছিলেন নিজের দেশের ক্লাব রিভার প্লেটের কোচ। একই ক্লাবের একাডেমিতে ২০১৯ থেকে আছেন মাস্তানতুয়োনো।

স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এএসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দেমিচিলিস জানান, কীভাবে এক প্রতিভাবান কিশোরের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন তিনি, ‘২০২৩ সালে যখন রিভার প্লেটের ডাগআউটে আমার প্রথম বছর, তখনই ‘‘মাস্তানতুয়োনো’’ নামটা বারবার শুনতে পাচ্ছিলাম। আমি তখন পর্যন্ত অনূর্ধ্ব-১৭ দলের খেলোয়াড়দেরও চিনতাম, কিন্তু ফ্রাঙ্কো আরও নিচের স্তরের খেলোয়াড় ছিল। তাকে আমি কখনো খেলতে বা অনুশীলন করতে দেখিনি।’

মার্টিন দেমিচিলিস এখন মন্তেরেইর কোচ।
ইনস্টাগ্রাম/দেমিচিলিস

এর পরের ঘটনাপ্রবাহের বর্ণনা দিয়ে দেমিচিলিস বলেন, ‘এরপর এদোগার্দো সিরিসা নামের এক বিশ্বস্ত লোককে পাঠাই ছেলেটিকে দেখে আসার জন্য। সে ফিরে এসে আমাকে জানায়, ছেলেটিকে নিয়ে যেসব কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো আসলে সত্য নয়। আসল সত্য হচ্ছে ছেলেটি যা বলাবলি হয় তার চেয়েও ভালো। সেই বছরেরই অক্টোবর মাসে আমরা তাকে অনুশীলনে ডাকলাম আর তখনই সে আমাকে মুগ্ধ করে দিল।’

আর্জেন্টিনার হয়ে ১১ বছর জাতীয় দলে খেলা দেমিচিলিস মাস্তানতুয়োনোর মধ্যে কী দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন, সেটিও জানান, ‘ছেলেটির ব্যক্তিত্ব ও পরিপক্বতা চোখে পড়ার মতো। মাঠে ও মাঠের বাইরে সে একজন পরিপূর্ণ পেশাদার খেলোয়াড়ের মতোই আচরণ করছিল। আমার প্রশিক্ষণপদ্ধতিতে আমি মানবদেহের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া এবং ধাপগুলো মাথায় রেখে কাজ করি। প্রাক্‌-মৌসুম প্রস্তুতিতে আমরা মাস্তানতুয়োনোর অনুশীলনের মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু দেখা গেল, সে কেবল শারীরিক চাপ ভালোভাবে সহ্য করছে তা-ই নয়; বরং এই দিক থেকে সে দলের সেরা পারফরমারদের একজন।’

আরও পড়ুন

১৬ বছর বয়সী মাস্তানতুয়োনো রিভার প্লেটের জন্য বড় সম্পদ, তখনই বুঝে যান দেমিচিলিস। মূল দল অথবা সামনের সারির বয়সভিত্তিক দলগুলোতে খেললে ইউরোপের ক্লাবগুলো তাঁর দিকে নজর দেবে—এমন ভাবনা থেকে ক্লাব কর্তৃপক্ষকে একটি পরামর্শ দেন সাবেক আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার, ‘আমি ক্লাবকে জানাই, ‘‘এই সপ্তাহেই ওর অভিষেক হবে এবং তোমাদের এখনই তার রিলিজ ক্লজ বাড়াতে হবে।’’ আমি বলেছিলাম ফ্রাঙ্কো শুধু রিভার প্লেটের একজন তারকাই হবে না, সে রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়ও হবে। আমি বোঝাতে চেয়েছিলাম, আড়াই কোটি ইউরোতে ম্যানচেস্টার সিটি যে ক্লদিও এচেভেরিকে কিনেছে, ফ্রাঙ্কো তার চেয়েও অনেক বেশি দামি হয়ে উঠবে। আমার সোজা কথা ছিল ‘‘ফ্রাঙ্কো রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলবে।’’ এরপর ক্লাব কর্তৃপক্ষ বেশ দক্ষতার সঙ্গেই রিলিজ ক্লজ সাড়ে চার কোটি ইউরোতে বাড়িয়ে নেয়। এটা বেশ চমকপ্রদ ব্যাপার ছিল। কারণ, এজেন্টরা সাধারণত এত বড় রিলিজ ক্লজে রাজি হয় না। রিলিজ ক্লজ বেশি হলে দ্রুত বিক্রি করা কঠিন হয়ে পড়ে।’

ছয় বছরের চুক্তি সেরে ফেললেও এখনই রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে মাঠে নামছেন না মাস্তানতুয়োনো। ১৭ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার ক্লাব বিশ্বকাপে খেলবেন রিভার প্লেটের হয়েই। আগস্টে যোগ দেবেন রিয়াল মাদ্রিদে। দেমিচিলিস তাঁর বিষয়ে শেষ কথা বলেছেন এভাবে, ‘এ ধরনের প্রতিভা খুবই দুর্লভ। আর একটা কথা বলি, যেটা আমাকে খুব আবেগপ্রবণ করে তোলে। আমি রিভার প্লেট ছাড়ার দিন ফ্রাঙ্কোকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলাম, ‘‘আমি তোমাকে আবার দেখব, তবে তখন তুমি রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে খেলবে।”’

আরও পড়ুন