বার্সেলোনাকে হারাতে আজ রিয়াল মাদ্রিদকে যে তিনটি কাজ করতে হবে
টানা তিনটি এল ক্লাসিকোতে রিয়াল মাদ্রিদ হেরেছে তো কী হয়েছে! আরও একটা তো বাকি। এই মৌসুমে এখনো কিছুই জিততে পারেনি রিয়াল, কিন্তু সব আশা তো শেষও হয়ে যায়নি। আজ লা লিগার এই এল ক্লাসিকো জিতলেই কিন্তু রিয়ালের ফিকে হয়ে যাওয়া শিরোপা-স্বপ্নটা একটু হলেও উজ্জ্বল হবে। ওদিকে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে যাওয়া বার্সেলোনা লা লিগায়ও খাবে বড় ধাক্কা।
পয়েন্ট তালিকায় দুই দলের কী অবস্থা, সেটা এরই মধ্যে প্রায় সবারই মুখস্থ। এ মুহূর্তে ৩৪ ম্যাচে ৭৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে বার্সেলোনা। সমান ম্যাচে রিয়ালের পয়েন্ট ৭৫। মানে আজ রিয়াল হারলে বার্সেলোনা এগিয়ে যাবে ৭ পয়েন্টে। তখন বাকি তিন ম্যাচের মাত্র একটিতে জিতলেই লা লিগা জিতে যাবে বার্সেলোনা। কোনো সন্দেহ নেই, সেটা হতে দিতে চায় না রিয়াল। আর সেটা হতে না দিতে চাইলে মাঠেও বেশ কৌশলী হতে হবে কার্লো আনচেলত্তির দলকে।
চলুন দেখা যাক, বার্সেলোনাকে আজ হারাতে চাইলে রিয়াল মাদ্রিদ কী কী কৌশল নিতে পারে:
১. আর্দা গুলারকে নামাতে হবে শুরু থেকেই
২০ বছর বয়সী তুর্কি এই উইঙ্গার যখন মাঠে থাকেন, রিয়াল যেন একেবারেই অন্য দল! তবু পুরো মৌসুমে বেশির ভাগ সময় বেঞ্চেই কেটেছে আর্দা গুলারের। তবে মৌসুমের শেষ দিকে সুযোগ পেয়ে যেভাবে আলো ছড়িয়েছেন, তাতে কোচ আনচেলোত্তির জন্য তাঁকে আজ উপেক্ষা করা কঠিন।
সর্বশেষ তিন ম্যাচে দুই গোল ও দুই অ্যাসিস্ট গুলারের—যার মধ্যে হেতাফের বিপক্ষে জয়সূচক গোল, কোপা দেল রে ফাইনালে দুর্দান্ত কর্নার থেকে অ্যাসিস্ট এবং সেল্তা ভিগোর বিপক্ষে গোল-অ্যাসিস্ট।
তাঁর দুর্দান্ত বাঁ পা, নিখুঁত পাস, আর প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত করে খেলার ক্ষমতা—ভীষণ দরকার রিয়ালের। আর এখন তো রদ্রিগো একেবারেই অফ ফর্মে (সর্বশেষ ২২ ম্যাচে মাত্র এক গোল)। আজ তাই গুলারকে বসিয়ে রাখাটা আত্মঘাতী হতে পারে।
২. বার্সেলোনার ‘অফসাইড ফাঁদে’ না পড়া
হান্সি ফ্লিকের বার্সেলোনা খেলছে হাইলাইন ডিফেন্সে। এতটাই ওপরে, যেন গোলকিপার ছাড়া সবাই মাঝমাঠে! ফলে প্রতিপক্ষ বারবার অফসাইডে পড়ছে। শুধু অক্টোবরের ক্লাসিকোতেই এমবাপ্পে আটবার অফসাইডে ধরা পড়েছিলেন, পুরো রিয়াল দল ১২ বার!
এই কৌশল দারুণ, কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণও। ইন্টার মিলান যেমন দেখিয়েছে, ঠিক সময়মতো পাস আর স্পিড থাকলে এই হাইলাইন ডিফেন্সের ফাঁকেই গোল বানানো যায়। দুই লেগ মিলিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে বার্সেলোনার জালে সাতটা গোল দিয়েছে ইন্টার।
আনচেলত্তির হাতে আছে এমবাপ্পে ও ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের মতো দুই ‘বুলেট’ গতির ফরোয়ার্ড। শুধু দরকার সঠিক সময়ের দৌড় আর মিডফিল্ড থেকে নিখুঁত বল। বিশেষ করে ভিনির সামনে তো আজ দারুণ সুযোগ—কারণ, বার্সার ডান দিকের ডিফেন্ডার জুলস কুন্দে চোটে পড়ে বাইরে।
৩. রক্ষণ সামলাও, রাফিনিয়া-ইয়ামাল ঠেকাও
বার্সেলোনার আক্রমণভাগে রাফিনিয়া, লেভানডভস্কি আর লামিনে ইয়ামাল—এই ত্রিমূর্তি রীতিমতো আতঙ্ক। তবে চোট থেকে সেরা ওঠা লেভানডফস্কি এখনো শতভাগ ফিট নন, আজ হয়তো বেঞ্চে থেকেই শুরু করবেন ম্যাচ।
কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদেরও যে সমস্যার কমতি নেই। চোটের কারণে মূল সেন্টারব্যাকদের মধ্যে কেউই পুরো ফিট নন। রক্ষণে তাই আনচেলত্তি এখন খেলাচ্ছেন মূলত মিডফিল্ডার চুয়ামেনি, ২১ বছরের রাউল আসেনসিও আর ফ্রান্সিসকো গার্সিয়ার মতো তরুণদের।
ইয়ামাল-রাফিনিয়ার একের পর এক আক্রমণ ঠেকাতে তাই রিয়াল ডিফেন্ডারদের খেলতে হবে আরও ঘন হয়ে, একে অন্যের পাশে থেকে। বাড়তি জায়গা দিলেই বিপদ। কোপা দেল রে ফাইনালেও কিছু সময় রিয়াল ভালোভাবে রক্ষণ সামলেছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভুল করে ম্যাচটা হেরে গেছে। আজ ওই ভুল করাই যাবে না।