সবচেয়ে বেশি দর্শক উপস্থিতির ১০ ফুটবল ম্যাচ

ফুটবল মানে শুধু ২২ জন খেলোয়াড়ের মাঠের লড়াই নয়। এর সঙ্গে ভক্ত-সমর্থকদের অজস্র আবেগ ও স্মৃতি জড়িত। প্রিয় দলকে সমর্থন জানাতে ঘরের মাঠে দর্শকদের ভিড় লেগেই থাকে। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে দেখা যায় স্টেডিয়াম উপচে পড়া দর্শক। অতীতে এমনও কিছু ম্যাচ হয়েছে, যেগুলোতে ধারণক্ষমতার চেয়েও অনেক বেশি দর্শক হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি দর্শক সমাগমের সেই ১০ ম্যাচ নিয়েই এই আয়োজন।

১০

রিয়াল মাদ্রিদ–এসি মিলান (দর্শক: ১২৯৬৯০)

রিয়াল মাদ্রিদ–এসি মিলানের সেই ম্যাচে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ১২৯৬৯০ দর্শক হয়েছিল
ছবি: ইউটিউব ভিডিও থেকে নেওয়া

উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের যাত্রা হয়েছিল ১৯৫৫–৫৬ মৌসুমে। তখন প্রতিযোগিতাটির নাম ছিল ইউরোপিয়ান কাপ। প্রথম আসরেই সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয় পরবর্তী সময়ে এই প্রতিযোগিতার সবচেয়ে সফল দুই ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ (সর্বোচ্চ ১৫ বারের চ্যাম্পিয়ন) ও এসি মিলান (দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭ বারের চ্যাম্পিয়ন)। ১৯৫৬ সালের ১৯ এপ্রিল সেমিফাইনালের প্রথম লেগ হয় রিয়ালের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে। সেই ম্যাচের সাক্ষী ছিলেন ১ লাখ ২৯ হাজার ৬৯০ জন। ম্যাচটি ৪–২ গোলে জেতে রিয়াল।

ইস্ট বেঙ্গল-মোহনবাগান (দর্শক: ১৩১৭৮১)

ইস্ট বেঙ্গল-মোহনবাগানের সেই ম্যাচে সল্টলেক স্টেডিয়ামে ১৩১৭৮১ দর্শক হয়েছিল
ছবি: এক্স

পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই; ভারতীয় ফুটবলের সবচেয়ে আইকনিক ডার্বি মনে করা হয় ইস্ট বেঙ্গল-মোহনবাগান দ্বৈরথকে। ১৯৯৭ সালের ১৩ জুলাই ইন্ডিয়ান ফেডারেশন কাপ সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই ক্লাব। কলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়ামে সেদিন একসঙ্গে খেলা দেখেছেন ১ লাখ ৩১ হাজার ৭৮১ জন, যা এখনো এশিয়া মহাদেশে অনুষ্ঠিত কোনো ফুটবল ম্যাচে সর্বোচ্চ দর্শক সমাগমের রেকর্ড। ম্যাচে মোহনবাগানকে ৪–১ গোলে হারায় ইস্ট বেঙ্গল। সল্টলেক স্টেডিয়ামকে অফিশিয়ালি বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন নামে ডাকা হয়।

ক্রুজেইরো-ভিলা নোভা (দর্শক: ১৩২৮৩৪)

ক্রুজেইরো-ভিলা নোভার সেই ম্যাচে ১৩২৮৩৪ দর্শক হয়েছিল
ছবি: এক্স

১৯৯৭ সালে ব্রাজিলের মিনাস গেরাইস রাজ্যের প্রতিযোগিতা কাম্পেওনাতো মিনেইরোর ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ক্রুজেইরো ও ভিলা নোভা। বেলো হরিজন্তের মিনেইরাও স্টেডিয়ামে সেদিন খেলা দেখেছেন ১ লাখ ৩২ হাজার ৮৩৪ জন দর্শক। অনেকে টিকিট ছাড়াই মাঠে ঢুকে পড়েছিলেন। ম্যাচে ভিলা নোভাকে ১–০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ক্রুজেইরো। ২০১৪ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে এই মাঠেই ব্রাজিলকে ৭–১ গোলে বিধ্বস্ত করে জার্মানি, যা মিনেইরাজো নামে পরিচিত।

বেনফিকা-পোর্তো (দর্শক: ১৩৫০০০)

বেনফিকা-পোর্তোর সেই ম্যাচে ১৩৫০০০ দর্শক হয়েছিল
ছবি: এক্স

১৯৮৭ সালে পর্তুগিজ প্রিমেরা লিগার এই ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল বেনফিকা ও পোর্তো। বেনফিকার মাঠ লিসবনের এস্তাদিও দা লুজে সেদিন উপস্থিত ছিলেন ১ লাখ ৩৫ হাজার দর্শক, যা পর্তুগালে আয়োজিত কোনো ফুটবল ম্যাচ সর্বোচ্চ দর্শক সমাগমের রেকর্ড। ম্যাচে পোর্তোকে ৩–১ গোলে হারায় বেনফিকা।

সেল্টিক-লিডস (দর্শক: ১৩৬৫০৫)

সেল্টিক-লিডসের সেই ম্যাচে ১৩৬৫০৫ দর্শক হয়েছিল
ছবি: ফেসবুক

১৯৬৯–৭০ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয় সেল্টিক ও লিডস ইউনাইটেড। ১৯৭০ সালের ১৫ এপ্রিল সেমিফাইনালের ফিরতি লেগ হয় সেল্টিকের মাঠ গ্লাসগোর হ্যাম্পডেন পার্কে। মাঠে বসে ম্যাচটি দেখেছেন ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫০৫ জন ফুটবলপ্রেমী। উয়েফা আয়োজিত কোনো প্রতিযোগিতার এক ম্যাচে সেটিই সর্বোচ্চ দর্শক উপস্থিতির রেকর্ড।

করিন্থিয়ান্স-পন্তে প্রেতা (দর্শক: ১৩৮০৩২)

করিন্থিয়ান্স-পন্তে প্রেতার সেই ম্যাচে ১৩৮০৩২ দর্শক হয়েছিল
ছবি: এক্স

১৯৭৭ সালের ব্রাজিলের সাও পাওলো রাজ্যের প্রতিযোগিতা কাম্পেওনাতো পলিস্তা। সে সময় ফাইনাল ম্যাচ হতো তিনটি। কোনো দল প্রথম দুটি ফাইনাল জিতলে শেষটির প্রয়োজন পড়ত না। সেবারের ফাইনালে করিন্থিয়ান্সের প্রতিপক্ষ ছিল পন্তে প্রেতা। মোরুম্বি স্টেডিয়ামে প্রথম ফাইনাল জিতেছিল করিন্থিয়ান্স। শিরোপার আশা বাঁচিয়ে রাখলে হলে দ্বিতীয় ফাইনাল জেতা ছাড়া বিকল্প ছিল না পন্তে প্রেতার। এ ম্যাচটিই দেখতে গিয়েছিলেন ১ লাখ ৩৮ হাজার ৩২ জন ফুটবলপ্রেমী। পন্তে প্রেতা ম্যাচটি ২–১ গোলে জিতে তৃতীয় ফাইনালকে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ বানিয়ে ফেলে।

সেল্টিক-অ্যাবরডিন (দর্শক: ১৪৭৩৬৫)

সেল্টিক-অ্যাবরডিনের সেই ম্যাচে ১৪৭৩৬৫ দর্শক হয়েছিল
ছবি: অ্যাবরডিন এফসি ওয়েবসাইট

১৯৩৭ সালে স্কটিশ কাপ ফাইনালও হয়েছিল গ্লাসগোর হ্যাম্পডেন পার্কে। ম্যাচে অ্যাবরডিনকে ২–১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় সেল্টিক। হ্যাম্পডেন পার্কে সেদিন খেলা দেখেন ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৬৫ জন দর্শক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগপর্যন্ত সেটিই সর্বোচ্চ দর্শক সমাগমের ক্লাব ফুটবল ম্যাচ।

স্কটল্যান্ড-ইংল্যান্ড (দর্শক: ১৪৯৪১৫)

স্কটল্যান্ড-ইংল্যান্ডের সেই ম্যাচে ১৪৯৪১৫ দর্শক হয়েছিল
ছবি: ফেসবুক

প্রতিবেশী দেশ হলে কী হবে, আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বড় প্রতিন্দ্বী স্কটল্যান্ড আর ইংল্যান্ড। হ্যাম্পডেন পার্কেই ১৯৩৭ সালের ১৭ এপ্রিল ব্রিটিশ হোম চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হয় দুই দল। এই ম্যাচের সাক্ষী ছিলেন ১ লাখ ৪৯ হাজার ৪১৫ জন দর্শক। ইউরোপে আয়োজিত কোনো আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচে এটিই সর্বোচ্চ দর্শক উপস্থিতির রেকর্ড। ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ৩–১ গোলে হারায় স্কটল্যান্ড। তবে তিন ম্যাচের সব কটি জিতে সেবার চ্যাম্পিয়ন হয় ওয়েলস।

ফ্লামেঙ্গো-ফ্লুমিনেন্স (দর্শক: ১৯৪৬০৩)

ফ্লামেঙ্গো-ফ্লুমিনেন্সের সেই ম্যাচে ১৯৪৬০৩ দর্শক হয়েছিল
ছবি: ফেসবুক

ফুটবল ইতিহাসে বিশেষ এক জায়গা করে নিয়েছে মারাকানা স্টেডিয়াম। বর্তমানে এর অফিশিয়াল নাম এস্তাদিও জার্নালিস্তা মারিও ফিলিও। ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো রাজ্য সরকারের মালিকানাধীন স্টেডিয়ামটি স্থানীয় দুই ক্লাব ফ্লামেঙ্গো ও ফ্লুমিনেন্সের ঘরের মাঠ। এই দুই দলের লড়াই ‘ফ্লা-ফ্লু ডার্বি’ নামে পরিচিত। ১৯৬৩ সালের ডার্বিতে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৬০৩ জন দর্শক মারাকানায় বসে খেলা দেখেছেন, যা কোনো ক্লাব ফুটবল ম্যাচে সর্বোচ্চ উপস্থিতির বিশ্ব রেকর্ড। সেদিন প্রায় ১৭ হাজার মানুষ টিকিট ছাড়াই মাঠে ঢুকেছিলেন। ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়।

ব্রাজিল-উরুগুয়ে (দর্শক: ১৯৯৮৫৪)

ব্রাজিল-উরুগুয়ের সেই ম্যাচে রেকর্ড ১৯৯৮৫৪ দর্শক হয়েছিল
ছবি: এক্স

সেই মারাকানাই সবচেয়ে বেশি দর্শক সমাগমের ম্যাচের বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে। সেখানে ১৯৫০ বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখেছেন ১ লাখ ৯৯ হাজার ৮৫৪ দর্শক। যদিও বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, মারাকানায় আসলে সেদিন ২ লাখের বেশি দর্শক ছিলেন। এটি সর্বোচ্চ উপস্থিতির ফুটবল ম্যাচ হিসেবে গিনেস বুকে জায়গা করে নিয়েছে। ফাইনালে উরুগুয়ের কাছে ২-১ গোলে হেরে যায় ব্রাজিল, পরবর্তী সময়ে যা মারাকানাজো নামে পরিচিতি পেয়েছে। আধুনিকায়ন করতে গিয়ে মারাকানা স্টেডিয়ামের আসনসংখ্যা অনেক কমিয়ে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে এর দর্শক ধারণক্ষমতা ৭৮ হাজার ৮৭৮ জন।

সবচেয়ে বেশি দর্শক উপস্থিতির ১০ ফুটবল ম্যাচ