বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী মেসি

গ্রাফিকস: প্রথম আলো

ইন্টার মায়ামির জন্য ব্যাপারটা এখন একটা ‘টার্ম’ হয়ে দাঁড়িয়েছে—‘মেসি ইফেক্ট’।

যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারে (এমএলএস) ইন্টার মায়ামি তেমন ডাকাবুকো কোনো দল নয়। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর চার মৌসুম ধরে মায়ামির লিগ জয়ের সম্ভাবনা ৪১ শতাংশের ওপরে কখনো ওঠেনি।

কিন্তু মেসি গত জুনে মায়ামিতে যোগ দেওয়ার ঘোষণার পর থেকে সে ক্লাবই এখন ভীষণ জনপ্রিয়। দেশে দেশে ক্লাবটির জার্সি ছড়িয়ে পড়েছে। খেলাধুলার বড় বড় পোর্টালগুলোয় লাইভ স্কোরে এখন মায়ামি ওপরের দিকেই থাকে। টুইটারে ট্রেন্ড থেকে মোটামুটি ফুটবলের যেকোনো আলোচনায় এখন মায়ামির নাম উঠে আসছে।

আরও পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসকে যেমন চাইলে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের আগমনের আগে ও পরে দুই ভাগে করা যায়—প্রি–কলম্বিয়ান এবং পোস্ট–কলম্বিয়ান। তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের ইতিহাসও হয়তো আজ থেকে বহু বছর পর এভাবে ভাগ করা হবে—প্রি–মেসি ও পোস্ট–মেসি। অর্থাৎ মেসি–পূর্ব সময় এবং মেসি–পরবর্তী সময়।

মেসিকে নিয়ে আসার পর মায়ামির সহমালিক ডেভিড বেকহাম বলেছিলেন, আর্জেন্টাইনের আগমনে যুক্তরাষ্ট্রের সমগ্র ফুটবলই লাভবান হবে। বেকহামের এই ধারণা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বাস্কেটবল ও বেসবল–পাগল দেশটিতে মেসি এরই মধ্যে যে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তা ঈর্ষণীয়। আর তাতে মায়ামির লাভবান হওয়ার বিষয়টি এমনিতেই টের পাওয়া যায়। মেসি মায়ামিতে যোগ দেওয়ার পর গুগলে ক্লাবটি নিয়ে সার্চের পরিমাণ বেড়েছে ১২০০ শতাংশের বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয় মেসি
ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই–বের বৈশ্বিক সংগ্রহশালা বিভাগের সহসভাপতি জেন কুকের মন্তব্যটা জেনে নিতে পারেন, ‘মেসি ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেওয়ার ঘোষণার পর তার বিভিন্ন জিনিস যেগুলো সংগ্রহ হিসেবে রাখা যায়, যেমন ট্রেডিং কার্ড এবং অন্যান্য স্মারক—এগুলোর খোঁজ নেওয়া বৈশ্বিকভাবে বেড়েছে ৭৫ শতাংশ।’ আর টিকিটের ব্যাপারটি তো মোটামুটি সবার জানাই।

খুচরো বাজারে মেসির অভিষেক ম্যাচের টিকিটের দাম বেড়েছিল ১০০০ শতাংশের বেশি। মায়ামিতে এরই মধ্যে ৩ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন মেসি। গোল করেছেন ৫টি, একটি গোল বানিয়েও দিয়েছেন। জোড়া গোল করেছেন শেষ দুই ম্যাচে। পারফরম্যান্স যাঁর এমন, সেই বিশ্বজয়ী খেলোয়াড়ের খেলা দেখতে এখন যুক্তরাষ্ট্রে জনতার চাপ কতটা সেটাও হয়তো জানিয়ে দেবে কোনো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম।

আরও পড়ুন

আপাতত ডিজিটাল স্পোর্টস প্ল্যাটফর্ম ও এমএলএসের ই-কমার্স পার্টনার ‘ফ্যানাটিকস’ জানাচ্ছে অন্য হিসাব। মেসি ইন্টার মায়ামিতে যোগ দিচ্ছেন—এই খবর প্রকাশ হওয়ার পর ফ্র্যাঞ্চাইজি দলটির যে পরিমাণ ক্রীড়া সরঞ্জাম বিক্রি হয়েছে, তা গোটা ২০২৩ সালে বিক্রি হওয়া মায়ামির ক্রীড়া সরঞ্জামের চেয়ে বেশি। একই সময়ে ফ্যানাটিকসের তালিকায় ‘টপ সেলিং’ ক্লাবে উঠে এসেছে মায়ামি—অর্থাৎ, এই ক্লাবের ক্রীড়া সরঞ্জাম ফ্যানাটিকসে বিক্রি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৫০ শতাংশ সরঞ্জাম বেশি বিক্রি হয়েছে মায়ামির।

ফ্যানাটিকসের মতে, মায়ামিতে মেসির জার্সি প্রথম ২৪ ঘণ্টায় যে পরিমাণ বিক্রি হয়েছে, তা খেলাধুলার ইতিহাসেই বিরল। দল পাল্টানোর পর কোনো খেলোয়াড়েরই এত বেশি পরিমাণ জার্সি বিক্রি হয়নি। এ নিয়ে ফ্যানাটিকসের এক সূত্রের উদ্ধৃতি প্রকাশ করেছে ইএসপিএন, ‘এমএলএসের কোনো দলের ক্ষেত্রে এমন কিছু এর আগে কখনো দেখা যায়নি।’

প্রথম ২৪ ঘণ্টায় জার্সি বিক্রিতে মেসি পেছনে ফেলেছেন ২০২১ সালে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফেরা, ২০২০ সালে টম ব্রাডির টাম্পা বে বাকেনিয়ার্সে যোগ দেওয়া এবং ২০১৮ সালে লেব্রন জেমসের লস অ্যাঞ্জেলেস লেকার্সে যোগ দেওয়াকে। ১৭ জুলাই থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত ফ্যানাটিকসে ইন্টার মায়ামির ক্রীড়া সরঞ্জামই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

অনলাইনে এমএলএসের অফিশিয়াল ক্রীড়া সরঞ্জাম বিক্রির প্ল্যাটফর্ম থেকে বলা হয়েছে, অক্টোবরের আগে মেসির জার্সি আর দেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ? মেসির ইন্টার মায়ামি জার্সির উত্তুঙ্গ চাহিদা।

অনলাইনে খুচরা ক্রীড়া সরঞ্জাম বিক্রেতা সকার ডট কম কিছুদিন আগে সিএনএনকে জানিয়েছে, আগে ছয় মাসে তারা যে পরিমাণ জার্সি বিক্রি করতেন, মেসি আসার পর তাঁর মায়ামির ১০ নম্বর জার্সি এক দিনেই সে পরিমাণ বিক্রি হয়েছে। আর মায়ামির সহমালিক হোর্হে মাস আশা করছেন, মেসি আসার পর মায়ামির রাজস্ব আয় দ্বিগুণ হবে। ফোর্বসের হিসাবে গত বছর ৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার রাজস্ব আয় করেছে মায়ামি। আর ক্লাবটির মূল্য ৬০ কোটি ডলার।

কী ভাবছেন? মেসি এই ক্লাবে এক মৌসুম কাটানোর পর কী হবে! আসলে মেসি ছত্রিশে পা রাখলেও এখনো এটা তাঁর দুনিয়াই। আমরা শুধু সেখানে বসত করি।