রিয়ালের ১২২ বছরের ইতিহাসে আনচেলত্তিই সর্বকালের সেরা
ভীষণ একা হয়ে পড়লেন কার্লো আনচেলত্তি।
না, তাঁর পরিবারের কেউ গত হননি। রিয়াল মাদ্রিদও তাঁকে ছাড়েনি। শিষ্যরাও আছেন ঠিকঠাকই। সমর্থকের সংখ্যাও হয়তো বাড়ছে। কিন্তু এত সব কোলাহলের মধ্যেও ইতালিয়ান এই কোচ সেখানে একা। তাঁর পাশে দাঁড়ানোর মতো আর কেউ নেই। আনচেলত্তি নিজেই রাখেননি। সেই ভীষণ একাকিত্বের লোভটা পূরণের পর আনচেলত্তি নিজেও ‘খুব খুশি’।
কোন সে একাকিত্ব—প্রশ্নের উত্তরে ফিরে যেতে হবে গতকাল রাতে কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে ইন্টারকনটিনেন্টাল কাপে। সেখানে মেক্সিকোর ক্লাব পাচুকাকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে ফিফা আন্তমহাদেশীয় কাপ জিতেছে রিয়াল। এর মধ্য দিয়ে ক্লাবটির ১২২ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল কোচ হয়ে গেলেন আনচেলত্তি। রিয়াল কোচ হিসেবে আন্তমহাদেশীয় কাপ তাঁর জেতা ১৫তম শিরোপা। সমান ১৪ ট্রফি জিতে আনচেলত্তি এত দিন সঙ্গ পেয়েছিলেন রিয়ালের কিংবদন্তি কোচ মিগুয়েল মুনোজের। লুসাইল থেকে ট্রফিটি আসার পর রিয়ালে আনচেলত্তির পাশে দাঁড়ানোর মতো আর কেউ রইলেন না।
পাচুকার বিপক্ষে জয়ের পর তিনবার একই প্রশ্নের মুখোমুখি হন আনচেলত্তি। প্রথমবার ফ্লাশ ইন্টারভিউয়ে, রেকর্ডটি নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল তাঁর কাছে, ‘অনেক শিরোপা! খুব ভালো লাগছে। আমি খুব আনন্দিত। এটা সাফল্য।’ মাঠেই মিডিয়াসেটের পক্ষ থেকে একই প্রশ্ন করা হলে একই উত্তর দিয়েছেন চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল (৫ বার জয়ী) এই কোচ।
মিক্সড জোনে রিয়াল মাদ্রিদ টিভির পক্ষ থেকে অনুভূতি জানতে চাওয়া হলে ৬৫ বছর বয়সী আনচেলত্তি বলেছেন, ‘খুব ভালো। আমরা সবাই খুব খুশি। এটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ২০২৪ সালটা আমরা অসাধারণভাবে শেষ করলাম...এর চেয়ে বেশি কিছু করা সম্ভব ছিল না। তবে রিয়াল মাদ্রিদে সব সময়ই যেটা হয় আরকি, এখন ২০২৫ নিয়ে ভাবতে হবে।’
আনচেলত্তি ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগজয়ী একমাত্র কোচও। এই যে এত এত শিরোপা তাঁর, কেমন লাগে সেসব জিততে? তাঁর উত্তর, ‘অনেক, অনেক ভালো। পেছনে তাকিয়ে যখন দেখি, আমি এত বছরে অনেক অনেক শিরোপা জিতেছি, খুব খুশি লাগে। তবে সব সময়ই যেটা মনে রাখতে হবে, রিয়াল মাদ্রিদ এমন একটা ক্লাব, যেখানে সব সময় মনোযোগ ধরে রাখতে হয়। সব সময় এগিয়ে যেতে হয়। অর্থাৎ আরও সাফল্য।’
গত আগস্টে আতালান্তাকে ২-০ গোলে হারিয়ে উয়েফা সুপার কাপ জিতে মুনোজকে ধরে ফেলেন আনচেলত্তি। মাদ্রিদের ক্লাবটিতে দুই মেয়াদে (২০১৩-২০১৫ এবং ২০২১-বর্তমান) তিনটি চ্যাম্পিয়নস লিগ, দুটি করে লা লিগা, কোপা দেল রে ও স্প্যানিশ সুপার কাপ, তিনটি উয়েফা সুপার কাপ, দুটি ক্লাব বিশ্বকাপ এবং এবার আন্তমহাদেশীয় কাপ জিতলেন আনচেলত্তি।
রিয়ালে খেলোয়াড় হিসেবে এক দশক কাটানো সাবেক মিডফিল্ডার মুনোজ ১৯৬০ থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত টানা ১৪ বছর কোচ ছিলেন ক্লাবটির। আনচেলত্তির মতো মুনোজও অনেকের বিচারেই ইতিহাসের অন্যতম সেরা কোচদের একজন। রিয়ালের ডাগআউটে দুটি ইউরোপিয়ান কাপ (চ্যাম্পিয়নস লিগ), একটি আন্তমহাদেশীয় কাপ, ৯টি লা লিগা ও দুটি কোপা দেল রে জিতেছেন ১৯৯০ সালে মারা যাওয়া মুনোজ। সংবাদ সম্মেলনে তাঁকে পেছনে ফেলে রেকর্ড গড়া প্রসঙ্গে আনচেলত্তি বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমি ভালো কাজ করছি এবং সেটা ধরে রাখতে চাই। অবশ্যই এমন সব গ্রেট কোচদের সঙ্গে আমার নামও উচ্চারিত হওয়াটা খুব সম্মানের।’
প্রায় ৩০ বছর কোচিংয়ের অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ আনচেলত্তি স্পেনে রিয়ালের হয়ে, ইতালিতে এসি মিলান, জার্মানিতে বায়ার্ন মিউনিখ, ইংল্যান্ডে চেলসি ও ফ্রান্সে পিএসজির হয়ে লিগ জিতেছেন।