কুলিবালির পায়ে সেনেগালের ভবিষ্যৎ

কালিদু কুলিবালিছবি: এএফপি

জিতলেই বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ড—এমন সমীকরণ ছিল তাঁর দেশের সামনে। কালিদু কুলিবালি এই হিসাব মাথায় নিয়ে মাঠে নামার পর কি তাঁর ২০ বছর আগের সেই বিশ্বকাপ মনে পড়েছে? ২০০২ সালে উরুগুয়ের বিপক্ষে জোড়া গোলে ৩–৩ ব্যবধানের ড্রয়ে সেনেগালকে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে তুলেছিলেন পাপা বুবা দিওপ।

গত মঙ্গলবারও সেনেগালের শেষ ষোলোয় ওঠার পথে বাধা ছিল আরেকটি লাতিন দল ইকুয়েডর। ৬৭ মিনিটে ইকুয়েডর ম্যাচে সমতায় ফেরার পর সেনেগালের কাউকে না কাউকে পাপা বুবা দিওপ হতেই হতো। কালিদু কুলিবালি থাকতে ভাবনা কী!

আরও পড়ুন

ঠিক ৩ মিনিট পরই গোল করেন চেলসি সেন্টারব্যাক। নাপোলির দিনগুলোতে দল বিপদে পড়লে যেভাবে ত্রাণকর্তা হয়ে উঠতেন, কুলিবালি সেভাবেই হয়ে উঠলেন পাপা বুবা দিওপ। সেদিন ২–১ গোলের জয়ে সেনেগাল যে বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় উঠল, তা তো ফ্রান্সে জন্ম নেওয়া কুলিবালির জন্যই। তাঁর বাবা সেনেগালের একটি কারখানায় সপ্তাহে টানা সাত দিনই কাজ করতেন। সাপ্তাহিক ছুটি নেননি টানা পাঁচ বছর!

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জ্বলে উঠতে হবে কুলিবালির
ছবি: এএফপি

কেন? কুলিবালির মাকে ফ্রান্সে নিয়ে যেতে টাকার দরকার ছিল তাঁর বাবার। সেনেগালিজ বাবা–মায়ের ঘরে জন্ম নেওয়া কুলিবালি জীবনসংগ্রাম কী জিনিস, তা বাবাকে দেখেই বুঝেছেন। সেসব দাহকাল পেরিয়ে ফ্রান্স অনূর্ধ্ব–২০ দলে আলোও ছড়াতে শুরু করলেন।

২০১৫ সালে ফ্রান্স জাতীয় দলে দিদিয়ের দেশম তাঁকে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু কুলিবালি বেছে নেন নিজের শিকড় সেনেগালকে। কারণ হিসেবে বলেছিলেন, ‘এ নিয়ে আমার কোনো অনুতাপ নেই। কারণ, আমি সেনেগালিজ ফুটবলের ভবিষ্যৎ গড়তে চাই।’

আরও পড়ুন

সৃষ্টিকর্তার কী লীলা! যে সেনেগাল গত ২০ বছরে মাত্র একটি বিশ্বকাপ খেলে গ্রুপ পর্বও পেরোতে পারেনি, নিজের সেই জন্মভূমিকেই এবার শেষ ষোলোয় তুলেছেন কুলিবালি। আজ বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে সেনেগাল। জিতলেই ২০০২ বিশ্বকাপে এল হাজি দিওপ–পাপা বুবা দিওপদের সেই দলের অর্জনকে ছুঁয়ে ফেলবে এই সেনেগাল। কুলিবালি কি পারবেন সেনেগালিজ ফুটবলের ভবিষ্যতের পাতা আরও সমৃদ্ধ করতে?

সময়ই তা বলে দেবে। কুলিবালি আপাতত ইংল্যান্ড ম্যাচ নিয়ে ভাবলেও ইকুয়েডরের বিপক্ষে সেই জয়ের পর বোঝা গেছে সেনেগালিজ ফুটবলের ভবিষ্যৎ নিয়ে সত্যিই ভাবেন তিনি। নইলে সেদিনের জয়টা প্রয়াত পাপা বুবা দিওপের পরিবারকে উৎসর্গ করতেন না। দুই বছর আগে না–ফেরার দেশে পাড়ি জমানো বুবা দিওপ তাঁর মতোই সেন্টারব্যাক পজিশনে খেলতেন। সেদিন শেষ ষোলোয় ওঠার পর কুলিবালি বলেছিলেন, ‘এটা (জয়) পাপা বুবা দিওপের পরিবারের জন্য। আমরা তাঁকে গর্বিত করতে চেয়েছি। ছোটবেলায় তাঁর মতো হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি।’