বাফুফে ক্যাম্পে কেমন কাটছে বিদ্রোহী ফুটবলারদের দিন
ঘড়িতে তখন সকাল ১০টা ২৬। বাফুফের আঙিনায় সাংবাদিকদের আনাগোনা ততটা নেই। মাত্র দুটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের গাড়ি চোখে পড়ল। অনেকটা সময় অপেক্ষার পর গতকাল কয়েক পা এগিয়ে কাচঘেরা জিমঘরের পাশে যেতেই বাইরে থেকে দেখা মিলল একজনের। আগ্রহটা একটু বাড়ল। একদৃষ্টে তাকাতেই চেনা যায় তিনি সানজিদা আক্তার ছাড়া আর কেউ নন।
এর ঠিক ৩০-৪০ মিনিট পর বোঝা গেল এক ঢিলে দুই পাখি শিকারের জন্যই জিমে এসেছিলেন এই বিদ্রোহী ফুটবলার! ততক্ষণে তাঁর ফেসবুক পেজে নতুন রিলস চলে এসেছে। এই যেমন জিমও করা হলো, আবার জিম করার ভিডিও ছোট ক্লিপ আকারে রিলস বানিয়ে নিজের ফেসবুক পেজে শেয়ারও দেওয়া গেল।
সানজিদা একা নন, কোচ পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করা বাকি ১৭ জনের অনেককেই গত কদিন এভাবে জিমে এসে ভিডিও ধারণ করে কয়েক মিনিট কাটিয়ে সোজা ক্যাম্পে ফিরতে দেখা যায়। তাঁদের মধ্যে মনিকা চাকমা, কৃষ্ণা রানী সরকার, ঋতুপর্ণা চাকমার কথা তো বলতেই হয়। তাঁদের ফেসবুক পেজে চোখ বোলালেও তেমন প্রমাণ মিলবে।
‘আমরা ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছি। তারা (বাফুফে) চলে যেতে বললেই চলে যাব।’নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিদ্রোহী ফুটবলার
এদিক থেকে শামসুন্নাহার জুনিয়র একটু ব্যতিক্রম। কোনো দিকে না তাকিয়ে হনহন করে বাফুফের গেট দিয়ে একাই বেরিয়ে যেতে দেখা যায় তাঁকে। বেশ কিছুক্ষণ পর দুহাত ভরে বাজার নিয়ে ফেরেন। দূর থেকে জানতে চাওয়া হলো, আজ তাহলে মজার কিছু রান্না হচ্ছে? কোনো উত্তর না দিয়ে মাথাটা নিচু করেই চলে গেলেন সাফজয়ী এই নারী ফুটবলার। কে জানে, প্রশ্নটা তাঁর কান পর্যন্ত পৌঁছেছিল কি না? নাকি শুনেও এড়িয়ে গেলেন।
বুধবার দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই বাফুফে ভবনের পেছনের ফটক দিয়ে আসতে দেখা যায় নারী ফুটবল দলের ফরোয়ার্ড মাতসুশিমা সুমাইয়াকে। ভবনে ঢোকার পথেই বাফুফের মিডিয়া ম্যানেজার সাদমান সাকিবের সঙ্গে কিছু আলাপ সেরে নেন।
সপ্তাহখানেক আগে ধর্ষণ এবং হত্যার হুমকি পাওয়া সুমাইয়ার চোখেমুখে দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। কিছু হতাশা চেপেই বোধ হয় ফেডারেশনের ভেতরে প্রবেশ করেন সুমাইয়া।
মনিকা গত চার দিনে তাঁর ফেসবুক পেজে জিমের তিনটি রিল ভিডিও ছেড়েছেন। কৃষ্ণা একা জিম করার দৃশ্য ফেসবুকে পোস্ট করেন। মাসুরা গতকাল জিমে কিছু সময় কাটিয়ে সেই ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। পাশাপাশি আগের মঙ্গল ও বুধবার দুটি টিকটকও প্রকাশ করেন।
ঋতুপর্ণা জিমের সাতটি রিল শেয়ার করেন মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। কীভাবে সময় কাটছে, এটা স্পষ্ট হয় বিদ্রোহী নারী ফুটবলারদের একজনের বয়ানে, ‘আমাদের কেউ কেউ ডাইনিংয়ে টিভি দেখে সময় কাটাচ্ছে। কেউ ইউটিউবে দেখছে নাটক-সিনেমা, রাতে ঘুমানোর আগে চলে ফেসবুকিং। বিকেল হলে ছাদে গল্প–আড্ডা। মাঝেমধ্যে আবার জুনিয়রদের সঙ্গে ছাদ-ফুটবলও খেলে কেউ কেউ।’
বাফুফের চারতলায় তাঁদের সময় কীভাবে যাচ্ছে, এমনটা জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক সিনিয়র ফুটবলার বলেন, ‘কী আর করব, খাওয়াদাওয়া, ঘুম; এটাই এখন আমাদের দৈনন্দিন কাজ। মাঝেমধ্যে একটু বারান্দায় যাওয়া হয়। আসলে কতক্ষণ আর রুমে থাকা যায়।’
কিন্তু বিদ্রোহে অনড় থাকার আভাস গতকালও দিলেন এক বিদ্রোহী ফুটবলার। এমনকি বাফুফে বললে তাঁরা ক্যাম্প ছেড়ে বাড়ি চলে যেতেও প্রস্তুত। কাল বিকেলে প্রথম আলোকে সাফজয়ী সেই ফুটবলার জানালেন ক্যাম্পে অনেকের অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর, ‘কী আর করব, খেয়ে–বসে সময় কাটছে। জানি না, বাফুফে কী চায়। আমরা যে দাবিগুলো জানিয়েছি, সেটা নিয়ে তো তারা কিছু বলছে না। দেখা যাক, আমরা ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছি। তারা (বাফুফে) চলে যেতে বললেই চলে যাব। এভাবে রুমে দিনের পর দিন থাকাও কষ্টকর। মানসিকভাবে অনেকেই ভেঙে পড়ছে।’
তবু দ্রোহের আগুন নিভছে না। এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে ১৫ দিন। কোচের সঙ্গে ফুটবলারদের দ্বন্দ্বের সমাধান এখনো দেয়নি বাফুফে। কবে দেবে, সেটাই–বা কে জানে!