‘ভুল’ আংটি দিয়ে জর্জিনাকে ‘প্রপোজ’ করেছেন রোনালদো

রোনালদো যে আংটি পরিয়ে জর্জিনাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন, সেটির দাম প্রায় ১২১ কোটি ৫২ লাখ টাকা। কিন্তু এক গয়নাবিশেষজ্ঞ দাবি করেছেন, সেটি বাগদানের আংটি হওয়ার শর্ত পূরণ করতে পারেনি।

এই আংটি পরিয়ে জর্জিনাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন রোনালদোজর্জিনার ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল

পরিচয়ের ৯ বছর পর গত সপ্তাহে প্রেমিকা জর্জিনা রদ্রিগেজকে বিয়ের প্রস্তাব দেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। বিশ্ববাসী তা বুঝতে পেরেছে ১১ আগস্ট ইনস্টাগ্রামে জর্জিনার এক পোস্টে।

আংটি পরা হাত রোনালদোর হাতের ওপর রেখে তোলা ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে জর্জিনা লেখেন, ‘হ্যাঁ, আমি রাজি। এই জীবনে এবং আমার অন্য সব জন্মেও।’

তারপর থেকেই শুরু হয় আলোচনা। রোনালদোর বাগদানের এই আংটির দাম কত, আংটিতে বসানো রত্নটি কোন পাথর—এসব আরকি।

ইতিমধ্যে আংটির আনুমানিক দামও বের করে ফেলেন গয়নার বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বের অন্যতম বড় ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল প্রকাশনা ‘এল’-এর অস্ট্রেলিয়া সংস্করণ এক গয়নার বিশেষজ্ঞের কাছে জেনেছে, এই আংটির দাম ১ কোটি ডলারের (প্রায় ১২১ কোটি ৫২ লাখ টাকা) বেশি হতে পারে। তবে দামের বিষয়ে ভিন্নমতও আছে।

অবশেষে জর্জিনাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন রোনালদো
ছবি: রয়টার্স

গয়নার বিশেষজ্ঞরা তখন আংটিটিকে নানাভাবে বিশ্লেষণও করেন। কারও মতে, আংটিতে ওভাল আকৃতি করে কাটা হীরকখণ্ড—অন্তত ২২ ক্যারেটের বেশি। আবার কারও মতে, ২৫ থেকে ৩০ ক্যারেট হতে পারে। তাহলে শুধু হীরকখণ্ডের দামই হবে আনুমানিক ২০ থেকে ৪০ লাখ মার্কিন ডলার।

সে যাই হোক, স্পেনের এমনই এক গয়নাবিশেষজ্ঞ হুয়ানা গার্সিয়া সানচেজ রোনালদোর বাগদানের আংটি নিয়ে এবার বিতর্কের সূত্রপাত করলেন। তাঁর দাবি, আল নাসর তারকা জর্জিনাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে যে আংটি উপহার দিয়েছেন, সেটি আসলে ‘ককটেল রিং’।

সানচেজ দাবি করেছেন, ‘বাগদানের আংটি হওয়ার শর্ত পূরণ করতে পারেনি’ রোনালদোর উপহার দেওয়া আংটিটি। সহজ কথায়, বাগদানের আংটি যেমন হয়, রোনালদোর দেওয়া আংটিটি সেই কাতারে পড়ে না।

রোনালদো–জর্জিনার পরিচয় হয় ৯ বছর আগে
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

ইতালিয়ান সংবাদমাধ্যম কোরিয়েরে দেল্লো স্পোর্তকে এ কথা বলেছেন সানচেজ। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘বাগদানের আংটি যেমন হয়, এটা তার মধ্যে পড়ে না। কারণ, এটা অনেক বড় এবং ভারী। এমন পাথর প্রায় ৪০ ক্যারেটের হয়, যেটা আংটি নয় নেকলেসের (গলার মালা) সঙ্গে বেশি মানানসই। এটা বেশ অস্বস্তিদায়ক এবং আঙুলের নড়াচড়াকে বাধাগ্রস্ত করে। শুধু সেটিংটাই নিখুঁত, বাকিটা ত্রুটিপূর্ণ।’

সানচেজ দাবি করেন, এই আংটি ‘ভালোবাসার অঙ্গীকার হিসেবে প্রতিদিন পরার প্রতীক’ বহন করে না। তিনি আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘এই আংটিতে বিশেষ উপলক্ষ কিংবা উদ্‌যাপনের জন্য বড় ও উজ্জ্বল পাথর রয়েছে, যেটা প্রতিদিন পরার জন্য নয়। বাগদানের আংটি হলুদ কিংবা সাদা সোনার (হোয়াইট গোল্ড) হওয়া উচিত। একই সঙ্গে এটি আরামদায়ক ও আঙুলের নড়াচড়ায় সহায়ক হওয়া উচিত, কারণ ভালোবাসা ও বিশ্বস্ততার প্রতীক হিসেবে এটা প্রতিদিন পরাটাই প্রত্যাশিত। আংটিটি আসলে “ককটেল রিং”, যেটা বিশেষ কোনো উপলক্ষে মনোযোগ আকর্ষণের জন্য বানানো হয়েছে। ভালোবাসার অঙ্গীকার হিসেবে এটি প্রতিদিন পরার আংটি নয়।’

বিয়ের আংটি ও ককটেল আংটির মধ্যে পার্থক্য

ককটেল আংটিতে সাধারণত মূল পাথরটি ডিজাইনে যতটুকু প্রয়োজন তার চেয়ে বড় হয়, যেটার মূল উদ্দেশ্য মনোযোগ আকর্ষণ করা। ১৯২০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে ‘প্রহিবিশন যুগ’ চলার সময় এমন আংটির উদ্ভব ঘটে। নারীরা তাঁদের স্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত স্টাইল প্রকাশে এমন আংটি পরতেন তখন। সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রের সমাজব্যবস্থায় ‘ফ্ল্যাপার’ নামে এক নতুন প্রজন্মের নারীদের আত্মপ্রকাশ ঘটে, যাঁরা ঐতিহ্যবাহী ভিক্টোরিয়ান মূল্যবোধ পরিহার করে নিজেদের স্বাধীনতা ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য প্রকাশে গাঢ় মেকআপ, স্বল্পদৈর্ঘ্যের পোশাক ও বিলাসবহুল আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র ব্যবহার করতেন। ককটেল আংটি ছিল এর মধ্যে অপরিহার্য অনুষঙ্গ।

বিয়ের আংটি (বাঁয়ে) এবং ককটেল আংটি
ছবি: ভিনটেজ জুয়েলারি ওয়েবসাইট

বিয়ের আংটি থেকে আলাদা করতে এটা ডান হাতে পরা হয়। জর্জিনা আংটিটি বাঁ হাতে পরেছেন। বাগদানের আংটি ককটেল আংটি থেকে আলাদা। এটি সাধারণ হলুদ কিংবা সাদা সোনায় বানানো হয়। আকৃতিতে ছোট এবং পরতে আরামদায়ক হয়। কারণ, বাগদানের আংটি সাধারণত বাগ্‌দত্তা প্রতিদিন পরেন। তাঁর আঙুলের জন্য আরামদায়ক করতেই আংটির আকৃতি ও পাথর সুষম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হয়। প্রাচীন মিসরীয়, গ্রিক ও রোমান সভ্যতা থেকে বাগ্‌দানের আংটির উৎপত্তি।

বিয়ে কবে

বিয়ের তারিখ এখনো জানা যায়নি। তবে স্প্যানিশ টিভি শো দ্য কোরাজোনের সাংবাদিক আলবার্তো গুজমান দিয়েছেন কিছু ভেতরের খবর। গুজমানের ভাষায়, ‘রোনালদো জর্জিনাকে শুধু আংটি দেননি। দিয়েছেন একটি পোরশে গাড়ি, দুটি দামি ঘড়ি (যার মূল্য ৫০ হাজার ইউরোর বেশি) আর দুই বিখ্যাত ডিজাইনারের পোশাক (দাম ৩০ হাজার ইউরোর বেশি)।’

বিয়ের সম্ভাব্য তারিখ নিয়ে গুজমান বলেছেন, ‘আমি জর্জিনার ঘনিষ্ঠ একজনের সঙ্গে কথা বলেছি। ওরা এখনো তারিখ নিয়ে ভাবছেন। মনে হচ্ছে, এখনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। ক্রিস্টিয়ানোও বিষয়টা খুব গোপন রাখছেন।’

২০২৬ বিশ্বকাপ শেষে জর্জিনাকে বিয়ে করতে পারেন রোনালদো
ছবি: রয়টার্স

তবে একটা ব্যাপার নিশ্চিত—আগামী বছরের জুলাইয়ের আগে বিয়ে হচ্ছে না। গুজমান জানালেন, ‘আমাকে বলা হয়েছে, খুব সম্ভবত বিয়ে হবে ২০২৬ সালের ১৯ জুলাইয়ের পর। তখন বিশ্বকাপ শেষ হবে। সেই বিশ্বকাপে খেলতে চান ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। বয়স তখন হবে ৪১। তিনি চান বিশ্ব ফুটবলকে গ্র্যান্ড স্টাইলে বিদায় জানাতে।’

বিয়ের ভেন্যু নিয়েও ইঙ্গিত দিয়েছেন গুজমান, ‘যতটুকু ধারণা পেয়েছি, অনুষ্ঠানটা হতে পারে রোনালদোর নিজের দেশ পর্তুগালেই।’