গোল হয়েছে কি না বুঝতে ৮ মিনিট ধরে ভিএআর চেক, কেন এত সময়
৮ মিনিটে কত কিছু ঘটে যায়! ফুটবল মাঠে যেখানে কয়েক সেকেন্ডেই বদলে যায় ম্যাচের ভাগ্য, সেখানে ৮ মিনিট তো বহু দূরের বিষয়।
গতকাল এফএ কাপে বোর্নমাউথ–উলভারহ্যাম্পটন ম্যাচে একটি গোল যাচাই করতে লেগে গেছে এমন ৮ মিনিট, যা ইংলিশ ফুটবলে সর্বোচ্চ সময় লাগার রেকর্ড। দর্শকের তো বিরক্ত হওয়াই স্বাভাবিক। বিরক্ত হয়ে অনেকেই মাঠে বসে ‘লজ্জাজনক, এ আর ফুটবল নয়’ আওয়াজও তুলেছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, প্রযুক্তিনির্ভর ফুটবলে একটি গোল যাচাই করতে ৮ মিনিট কেন লাগল?
মজার ব্যাপার হলো, এফএ কাপে কালই প্রথমবার আধা স্বয়ংক্রিয় অফসাইড প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্দেশ্যই ছিল সিদ্ধান্ত জানানোর প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুততর করা। সেটা করতে গিয়েই হয়ে গেছে দেরিতে সিদ্ধান্ত দেওয়ার রেকর্ড!
ঘটনার শুরু ম্যাচের ৩৫ মিনিটে। ১-০ গোলে এগিয়ে থাকা বোর্নমাউথ তখন মিলোস কেরকেজের গোলে আরও একবার এগিয়ে যায়। রেফারি স্যাম ব্যারট গোলের স্বীকৃতিও দেন। এরপরই নাটকের শুরু।
তাঁরা বলেছিলেন এই প্রযুক্তি চলতি মৌসুমের প্রথম বা দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বিরতির সময় চালু করা হবে। কিন্তু স্পষ্টতই কিছু একটা ঠিকঠাক কাজ করেনি।বোর্নমাউথ কোচ আন্দোনি ইরাওলা
দুই ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি টিমোথি উড ও ড্যারেন ইংল্যান্ড কেরকেজের সম্ভাব্য হ্যান্ডবলের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। বল কেরকেজের হাতে লাগলেও উড ও ইংল্যান্ড জানান, কেরকেজের হাতে বল লেগেছে অনিচ্ছাকৃতভাবে।
এরপর বোর্নমাউথের আরেক ফুটবলার ডিন হুইসেনের হ্যান্ডবল হয়েছে কি না, সেটিও যাচাই করা হয়। কিন্তু তাঁরও হ্যান্ডবল হয়নি। এরপর যাচাই করা হয় হুইসেন অফসাইডে ছিলেন কি না। সেখানেই বাঁধে বিপত্তি।
প্রযুক্তিরও যে সীমাবদ্ধতা আছে, সেটি আরও একবার বোঝা গেছে তখন। অবশ্য ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন আগেই সতর্ক করেছিল, গোলমুখে অতিরিক্ত ভিড় থাকলে সূক্ষ্ম অফসাইডের সিদ্ধান্ত দেওয়া নতুন এই প্রযুক্তির জন্য কঠিন হতে পারে। তখন ভিএআরকে আগের পদ্ধতিতে ফিরতে হবে।
অর্থাৎ রেখা এঁকে অফসাইডের সিদ্ধান্ত দিতে হবে। কালকের ম্যাচে সেটাই করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বোর্নমাউথের ভাইটালিটি স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকদের বিরক্তি ও ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের মধ্যে হুইসেনের গোলটি অফসাইডের কারণে বাতিল করা হয়।
এত সময় লাগায় শুধু দর্শক নন, বিরক্ত ছিলেন ফুটবলাররাও। তাই ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের দুই দলের খেলোয়াড় ও কোচদের কারণও ব্যাখ্যা করতে হয়েছে।
বোর্নমাউথের প্রধান কোচ আন্দোনি ইরাওলা এই ঘটনা নিয়ে বলেন, ‘তাঁরা বলেছিলেন এই প্রযুক্তি চলতি মৌসুমের প্রথম বা দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বিরতির সময় চালু করা হবে। কিন্তু স্পষ্টতই কিছু একটা ঠিকঠাক কাজ করেনি। কারণ, তাঁরা এটি মৌসুমের প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে বাস্তবায়ন করতে চেয়েছে। আজকের (গতকালের) ম্যাচে প্রথমে তারা হ্যান্ডবলের জন্য চেক করল এবং দ্রুত জানাল এটি হ্যান্ডবল নয়। এরপর অফসাইড চেক করতে লাগল। রেফারি আমাদের জানালেন যে আধা স্বয়ংক্রিয় অফসাইড প্রযুক্তি কাজ করছে না। তাই তাদের হাতে প্রক্রিয়াটি (রেখা টেনে) সম্পন্ন করতে হবে। ফলে এটি অস্বাভাবিকভাবে দীর্ঘ সময় ধরে চলেছে।’
ম্যাচটি অবশ্য শেষ পর্যন্ত বোর্নমাউথই জিতেছে। নির্ধারিত ৯০ মিনিট ১-১ সমতায় শেষ হওয়ার পর অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে কোনো গোল হয়নি। ফলে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে উলভসকে ৫-৪ গোলে হারিয়ে এফএ কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেছে বোর্নমাউথ।