বিশ্বকাপে মিসর–ইরান ম্যাচ নিয়ে হঠাৎ কেন এত আলোচনা

বিশ্বকাপ ট্রফি। আগামী বছর জুনে শুরু হবে বিশ্বকাপরয়টার্স

ইরানে সমকামিতার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, মিসরে এমন আইন না থাকলেও কঠোর শাস্তি আরোপের দৃষ্টান্ত আছে। কাকতালীয় ঘটনা হচ্ছে, ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপে এই দুটি দেশ যে ম্যাচে মুখোমুখি হতে চলেছে, সেটিতে সমকামিতাবিষয়ক এলজিবিটিকিউ+প্রাইড উদ্‌যাপন হওয়ার কথা রয়েছে।

ইরান ও মিসর দুই দেশই এ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। মিসর এরই মধ্যে ফিফাকে চিঠি দিয়ে সমকামী, উভকামী ও রূপান্তরকামীদের জন্য আয়োজিত ‘প্রাইড’ উদ্‌যাপন বাতিল করতে বলেছে। ইরানও জানিয়েছে, ম্যাচটি যেন খেলাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। সিয়াটলের লুমেন ফিল্ডে গ্রুপ ‘জি’র মিসর–ইরান ম্যাচটি হবে আগামী ২৬ জুন।  

মিসর যা বলছে

মঙ্গলবার ইজিপ্ট ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (ইএফএ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আগামী জুনে ইরানের বিপক্ষে বিশ্বকাপ ম্যাচটিতে এলজিবিটিকিউ+প্রাইড সম্পর্ক সব কার্যক্রম বাতিলের জন্য ফিফার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ধরনের আয়োজন ম্যাচে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করেছে ইএফএ।

ইজিপ্ট ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন
ইজিপ্ট ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ফেসবুক পেজ

ফিফার মহাসচিব ম্যাটিয়াস গ্র্যাফস্ট্রমকে পাঠানো চিঠিতে মিসর লিখেছে, তারা ‘ম্যাচ চলাকালীন এলজিবিটিকিউ সমর্থিত যেকোনো কার্যক্রমকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছে’, এবং এমন আয়োজন ‘সমর্থকদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংবেদনশীলতা উসকে দিতে পারে’ বলে সতর্কও করছে।

নিজেদের অবস্থানের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে ইএফএ আরও বলেছে, ফিফা বিধিমালার অনুচ্ছেদ–৪–এ ফিফা প্রতিযোগিতায় রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে নিরপেক্ষতার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি শৃঙ্খলাবিধিতে আছে সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বা দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতে পারে, এমন আচরণও নিষিদ্ধ।

আরও পড়ুন

ইরান যা বলছে

ইরানের ফুটবল ফেডারেশনের প্রধান মেহদি তাজ স্থানীয় সংবাদ সংস্থা আইএসএনএর কাছে বলেছেন, তেহরান ও কায়রো উভয়ই এ বিষয়ে আপত্তি তুলেছে। তিনি এটিকে ‘একটি অযৌক্তিক পদক্ষেপ’ উল্লেখ করে বলেছেন, ‘এটি নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীকে সমর্থন করে’। তাজ অবশ্য কোনো নির্দিষ্ট ম্যাচের ব্র্যান্ডিংয়ের উল্লেখ করেননি। এ ছাড়া সোমবার ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, তেহরান এ বিষয়ে ফিফার কাছে আপিল জানাবে।

ইরান ফুটবল ফেডারেশন
এক্স

ইরান–মিসর ম্যাচেই কেন ‘প্রাইড’ উদ্‌যাপন

এলজিবিটিকিউ+প্রাইড উদ্‌যাপনের সিদ্ধান্তটি ফিফার নয়, সিয়াটলের স্থানীয় আয়োজক কর্তৃপক্ষের। ২০২৬ বিশ্বকাপে মোট ছয়টি ম্যাচ আয়োজন করবে সিয়াটলের লুমেন ফিল্ড। এর মধ্যে গ্রুপ পর্বের চারটি, বাকি দুটি ‘রাউন্ড অব থার্টি টু’ ও ‘রাউন্ড অব সিক্সটিনে’। গ্রুপ পর্বের দুটি ম্যাচকে বিশেষভাবে উদ্‌যাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিয়াটল প্রাইড ম্যাচ অ্যাডভাইজরি কমিটি। প্রথমটি ১৯ জুন, দ্বিতীয়টি ২৬ জুন। ১৯ জুনে পালন করা হবে জুনটিনথ দিবস। দাসপ্রথার বিলুপ্তি দিবস হিসেবে এটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছরই পালিত হয়। কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক ঘোষিত ছুটির দিনও এটি।

২৬ জুন কোনো দিবস নেই। তবে ২৮ জুন এলজিবিটিকিউ অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে কাছাকাছি থাকা ২৬ জুনেই এই সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিকতার পরিকল্পনা আয়োজকদের। সেদিন স্টেডিয়ামের গ্যালারি ও সিয়াটলজুড়ে শিল্পকর্ম প্রদর্শনসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা আছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের।

আর এই পুরো পরিকল্পনাটি হয়েছে বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠানের আগে। ৫ ডিসেম্বরের ড্র এবং ৬ ডিসেম্বরের ম্যাচের লাইনআপ চূড়ান্তের পর দেখা যায়, ২৬ জুন সিয়াটলে পড়েছে ইরান–মিসর ম্যাচ। আর ১৯ জুন পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র–অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ।

আরও পড়ুন

আপত্তি কি আমলে নেওয়া হবে

ড্রয়ের পর পিএমএসির সদস্য এরিক ওয়াহল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘জুনে সিয়াটলে অনুষ্ঠিত মিসর বনাম ইরান ম্যাচটি প্রাইড ম্যাচ হিসেবে নির্ধারিত—এটা শুধুই ঘটনাচক্রে। আমি মনে করি, এটি আসলে ভালো ব্যাপার। কারণ, এলজিবিটিকিউ মানুষ সব জায়গায়ই আছে। সিয়াটলে সবার নিজের মতো হওয়ার স্বাধীনতা আছে।’

ইরান ও মিসরের আপত্তির পর পিএসএসি পরিকল্পনা বাতিল করবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। এ আয়োজন অন্য কোনো ম্যাচে সরিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। কারণ, একই মাঠে ২৪ জুনের ম্যাচে ইউরোপিয়ান প্লে–অফের দলের বিপক্ষে খেলবে কাতার, আর ১৫ জুন মিসরই খেলবে বেলজিয়ামের বিপক্ষে। এ ছাড়া নকআউটের ম্যাচ দুটি জুলাইয়ে (১ ও ৬ তারিখে)।

জুরিখে ফিফার সদরদপ্তর
রয়টার্স

ফিফা কী করতে পারে

ফিফা এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেবে কি না, তা সময়ই বলবে। তবে এলজিবিটিকিউ প্রসঙ্গ সর্বশেষ আসরেও আলোচিত হয়েছিল। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে এলজিবিটিকিউ মানুষের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ‘ওয়ানলাভ’ বাহুবন্ধনী পরার পরিকল্পনা ছিল ইংল্যান্ড, ওয়েলসসহ কয়েকটি দেশের। তবে খেলোয়াড়েরা এমনটি করলে হলুদ কার্ড দেখানো হবে বলে ফিফা হুমকি দেওয়ার পর সেটি আর দেখা যায়নি।