প্রিন্সের মর্যাদায় বিশ্বের অন্যতম বিলাসবহুল উড়োজাহাজে সৌদি গেলেন নেইমার

সৌদি আরবের পথে উড়াল দেওয়ার আগে উড়োজাহাজটির সামনে নেইমারছবি: টুইটার

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে। সাদা ট্রাউজার্স ও টি-শার্টে নেইমার, কাঁধে ঝোলানো আল হিলালের স্কার্ফ। গলায় যিশুর ক্রশসূচক হীরাখচিত চেন। হাসতে হাসতে বিমানবন্দরের একটি গেট দিয়ে ঢুকলেন। ফুল দিয়ে তাঁকে বরণ করে নিলেন আল হিলালের কর্মকর্তারা। সংবাদমাধ্যমের লোকজন ছবি তুললেন। শুক্রবার সৌদি আরবের রিয়াদে নেইমার পা রাখার পর তাঁকে এভাবে বরণ করে নেওয়া হয়। তবে আসল অনুষ্ঠান এখনো বাকি।

আরও পড়ুন

সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, রিয়াদের কিং ফাহাদ স্টেডিয়ামে আজ তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের খেলোয়াড় হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেবে আল হিলাল। রক তারকাকে যেভাবে অর্ভথ্যনা জানানো হয়, নেইমারকে নাকি সেভাবে বরণ করে নেবে সৌদি ক্লাবটি।

আল হিলালের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘সাম্বা ড্যান্সারের (নেইমার) সঙ্গে মানানসই, এমন বড় পার্টির আয়োজন করব আমরা।’ তবে আলোচনা চলছে নেইমার যে উড়োজাহাজে প্যারিস থেকে সৌদি আরবে গেছেন, সেই উড়োজাহাজ নিয়ে। সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বিলাসবহুল উড়োজাহাজগুলোর একটি, যার মালিক প্রিন্স আলওয়ালেদ বিন তালাল। সৌদি এই বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী দেশটির প্রথম বাদশাহ আবদুল আজিজের নাতি। বিশ্বখ্যাত সাময়িকী টাইম তাঁকে ‘আরবের ওয়ারেন বাফেট’ তকমা দিয়েছিল।

বিমানবন্দরে জমকালো আয়োজনে বরণ করে নেওয়া হয় নেইমারকে
ছবি: এএফপি

উড়োজাহাজটি বোয়িং ৭৪৭ মডেলের। উড়োজাহাজভিত্তিক ওয়েবসাইট অ্যারোফ্লাপ জানিয়েছে, বোয়িং ৭৪৭ মডেলের মধ্যে এটি সবচেয়ে বিলাসবহুল। দাম প্রায় ২০ কোটি ১১ লাখ ৯৫ হাজার ডলার। তবে দাম নিয়ে মতভেদ আছে। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘মার্কার দাবি, এই উড়োজাহাজের দাম ৫০ কোটি ইউরোর কম হবে না।

ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম গ্লোবো জানিয়েছে, ব্রাজিলিয়ান মুদ্রায় এই উড়োজাহাজের দাম প্রায় ১ বিলিয়ন রিয়েল এবং ব্যক্তিগত উড়োজাহাজের মধ্যে এটি অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোগত দিক থেকে সবচেয়ে বড়। ভেতরে ২টি ফ্লোর মিলিয়ে প্রায় ৪০০ যাত্রী বহন করতে পারে এই উড়োজাহাজ।

আরও পড়ুন

এই উড়োজাহাজের প্রধান কক্ষটি সৌদি আরবের প্রিন্স ব্যবহার করেন বলে জানিয়েছে গ্লোবো। নিজের উপদেষ্টা ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের সঙ্গে এই কক্ষে তিনি বৈঠক করেন। চামড়ার সোফার সঙ্গে বিলাসবহুল মোড়ক এবং দামি কাঠের টেবিল রয়েছে এই কক্ষে। ঝলমলে আলোর ব্যবস্থাও আছে। এ উড়োজাহাজের ভেতরে একটি বড় বৈঠককক্ষও আছে, যেখানে আছে অনেক বড় একটি টেবিল। চাইলে এই কক্ষকে ডাইনিং রুমেও পরিণত করা যায়। সাধারণ যাত্রীদের বসার আসনও চামড়ায় মোড়ানো এবং তিনটি সারিতে দুটি করে আসন বসানো হয়েছে উড়োজাহাজে।

উড়োজাহাজটির প্রধান কক্ষটিকে বলা হয় ‘বসেস রুম’। এই কক্ষের মধ্যে সৌদি প্রিন্সের জন্য একটি সিংহাসন বসানো হয়েছে। এ ছাড়া এক্সিকিউটিভ লাউঞ্জ, রয়্যাল লাউঞ্জ, কনফারেন্স রুম এবং বিলাসবহুল শোয়ার কক্ষ আছে এই উড়োজাহাজে। প্লেনস্পটারস ডটনেট জানিয়েছে, এই উড়োজাহাজ ১৯৯২ সালে এয়ার চায়নাকে সরবরাহ করা হয়েছিল। ২০০১ সালের আগস্টে এটি আবার বোয়িংকে ফেরত দেওয়া হয়। এরপর তা সৌদি আরবের কিংডম হোল্ডিং কোম্পানিকে হস্তান্তর করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির ৯৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক প্রিন্স আলওয়ালেদ বিন তালাল। প্যারিসের লা বোর্গেত বিমানবন্দর থেকে এই উড়োজাহাজে করে রিয়াদে গেছেন নেইমার।

আরও পড়ুন

ব্রাজিলিয়ান তারকা আল হিলালে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি নানা ধরনের সুবিধাও আদায় করে নিয়েছেন। ২৫ কক্ষের বাড়ি, ৮টি গাড়ি এবং দিনের ২৪ ঘণ্টা ও বছরের ৩৬৫ দিনই একজন গাড়িচালক নিয়োজিত থাকবেন নেইমারের জন্য।

বিমানের ভেতর সৌদি প্রিন্সের সিংহাসন
ছবি: টুইটার

নেইমার যেসব জায়গায় বেড়াতে যাবেন, যেসব হোটেল-রেস্তোরাঁয় থাকবেন-খাবেন এবং বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করবেন—সব ধরনের খরচের বিলই চলে যাবে আল হিলালের কাছে। ক্লাব এই টাকা পরিশোধ করবে। এ ছাড়া নেইমার ও তাঁর পরিবারের যাতায়াতের ব্যবস্থাও করবে আল হিলাল। সব সময় একটি ব্যক্তিগত বিমান থাকবে, যাতে যখন-তখন নেইমার ও তাঁর পরিবার তা ব্যবহার করতে পারে।

আরও পড়ুন