যে গল্প কাঁদিয়েছে মেসি ও আন্তোনেলাকে

অবশেষে হাতে বিশ্বকাপ। ক্যারিয়ারের সবচেয়ে আনন্দময় মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তিটা স্ত্রী–সন্তানদের সঙ্গেও ভাগ করে নেন লিওনেল মেসিছবি: রয়টার্স

স্বপ্নপূরণের গল্পগুলো খুব সম্ভবত এমনই! হাঁটি হাঁটি পায়ে সেগুলো ধরা দেয় না খুব সহজে। লিওনেল মেসির চূড়ায় ওঠার গল্পটাও এর ব্যতিক্রম নয়। রোজারিও থেকে বার্সেলোনা হয়ে বিশ্বকাপের পোডিয়ামে ওঠার যাত্রাটা ছিল কাঁটা বিছানো। মেসির সেই গল্পটা ‘মেসি ও তাঁর স্যুটকেস’ নামের গল্পে তুলে ধরেছেন আর্জেন্টিনার প্রখ্যাত লেখক হারনান কাসসিয়ারি।

যেখানে নিজের শিকড় না ভুলে একজন সাধারণ মানুষের অসাধারণ হয়ে ওঠার গল্পটা তুলে ধরেছেন কাসসিয়ারি। ‘ওরসাই’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিতব্য কাসসিয়ারির সেই গল্পটির অডিও সংস্করণ প্রচারিত হয় আর্জেন্টাইন রেডিও ‘পেরোস দে লা চালে’তে। যেটি শুনে আপ্লুত হয়েছেন মেসি নিজেও, ভিজেছে তাঁর এবং আন্তোনেলার চোখও।

এই গল্প মেসিকে এতটাই আপ্লুত করেছে যে আর্জেন্টাইন মহাতারকা নিজেই বার্তা পাঠিয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছেন গল্পের লেখক কাসসিয়ারি এবং রেডিও অনুষ্ঠানের উপস্থাপক অ্যান্ডি কুসনেজফকে। সেই বার্তায় মেসি বলেছেন, কুসনেজফের অনুষ্ঠানে ৯ মিনিট ধরে কাসিয়ারির গল্পটা শুনে তিনি এবং আন্তোনেলা কেঁদেছেন।

মেসির ভাষ্য, ‘হারনান যা বলেছে, যা সে তুলে ধরেছে, তা শুনে আমরা কাঁদতে শুরু করেছি। কারণ, সে যা বলেছে সব সত্যি। তোমাদের শুভেচ্ছা জানাতে চাই। দুজনকেই ধন্যবাদ। আমি ও আন্তোনেলা রোজারিওতে এটা শুনেছি এবং আমরা তাড়িত হয়েছি। এটা আমি তোমাদের জানাতে চেয়েছি। তোমাদের জন্য বড় একটি আলিঙ্গন। আবারও ধন্যবাদ।’

মেসির এই বার্তা পেয়ে রেডিরও স্টেশনে উপস্থিত সবার চোখই আর্দ্র হয়েছে। কাসসিয়ারি বলেছেন, ‘লিওনেলের (মেসি) বার্তাটি ছিল অসাধারণ। সে বলেছে, গল্পটি শুনতে শুনতে সে আর তার স্ত্রী কেঁদেছে। যদি তারা আমাকে বেছে নেওয়ার সুযোগ দেয় যে: সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার, সেরভান্তেস পুরস্কার কিংবা আমার গল্পে মেসির তাড়িত হওয়া। আমি আজ যা ঘটেছে, সেটিকেই বেছে নেব।’

কাসসিয়ারি ১৫ বছর ধরে স্পেনে ছিলেন। সেখানে তিনি কাছ থেকে দেখেছেন কীভাবে আর্জেন্টিনার এক শিশু বার্সেলোনার নিচের স্তরে গোল করতে করতে পৃথিবীর চূড়ায় ওঠে যাচ্ছেন।

কাসসিয়ারি বলেছেন, ‘দুই ধরনের অভিবাসী আছেন। একধরনের হচ্ছে তাঁরা, যাঁরা স্পেনে পৌঁছে নিজেদের স্যুটকেস আলমারিতে উঠিয়ে রাখেন এবং যাঁরা বাইরে রাখেন। দ্বিতীয় দলের হচ্ছেন সেই মানুষগুলো, যাঁরা নিজেদের শিকড় ভুলতে পারেন না। মেসি সেই দ্বিতীয় দলের একজন। যিনি তাঁর গাউচো উচ্চারণ অক্ষুণ্ন রেখেছেন।’

কাসসিয়ারি লিখেছেন, ‘আমরা মেসিকে বাইরে রাখা স্যুটকেসটিতে করে বিশ্বকাপ নিয়ে ফিরতে দেখে আনন্দ পেয়েছি। এই মহাকাব্যিক গল্পটা কখনো সম্ভব হতো না, যদি লিওনেল তার স্যুটকেসটি আলমারিতে লুকিয়ে রাখত। সে স্পেনে কখনো থিতু হয়নি। সে কখনো নিজের বাচনভঙ্গি হারিয়ে ফেলেনি। একটি জিনিসই শুধু বদলেছে, যা সে স্যুটকেসে করে নিয়ে এসেছে।’