ফুটবল স্টেডিয়ামগুলোর একেকটি দর্শক কিংবা সমর্থকদের কাছে স্মৃতিময় এবং অসংখ্য গল্পের জায়গা। তবে মাঠের স্মৃতিগুলোর মধ্যে গোলের স্মৃতিই সবার মনে থাকে বেশি। প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বেশি গোল দেখা গেছে লিভারপুলের মাঠ অ্যানফিল্ডে। ট্রান্সফারমার্কেটের হিসাবে, প্রিমিয়ার লিগে গোলসংখ্যায় অ্যানফিল্ডসহ যে ১০টি স্টেডিয়াম শীর্ষে, সেগুলোর কথা জেনে নেওয়া যাক।
ম্যাচ: ৩৭১ গোল: ১,১০১
প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বেশি গোল দেখার তালিকায় ১০ নম্বরে আর্সেনালের মাঠ এমিরেটস। অবশ্য একটু কিন্তু আছে। এমিরেটস যাত্রা শুরু করেছে প্রিমিয়ার লিগে নতুন সংস্করণ চালু হওয়ার ১৪ বছর পর ২০০৬ সালে। ফলে এই মাঠে যতগুলো ম্যাচ হতে পারত তা হয়নি। ৩৭১ ম্যাচে ৬০ হাজারের বেশি দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই মাঠে গোল হয়েছে ১ হাজার ১০১টি। তবে আর্সেনালই একমাত্র ক্লাব, সেরা বিশে যাদের দুটি মাঠ জায়গা পেয়েছে। অন্যটি হচ্ছে হাইবুরি, যেখানে ২৬২ ম্যাচে ৭৩৬ গোল হয়েছে।
ম্যাচ: ৪৬৩ গোল: ১,১৬১
তালিকার নয়ে ক্রিস্টাল প্যালেসের মাঠ সেলহার্স্ট পার্ক। মাঠটি শতবর্ষের বেশি পুরোনো হলেও ক্রিস্টাল প্রিমিয়ার লিগে নিয়মিত খেলতে পারেনি, যে কারণে মাঠটিও বেশি ম্যাচ এবং গোল দেখেনি। ২৫ হাজারের বেশি দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই মাঠে ৪৬৩ ম্যাচে গোল হয়েছে ১ হাজার ১৬১টি। তবে প্রিমিয়ার লিগে থিতু হতে পারলে সামনের দিনগুলোয় এই পরিসংখ্যান আরও সমৃদ্ধ করতে পারেব তারা।
ম্যাচ: ৪১৫ গোল: ১,৩০২
গত এক দশকে প্রিমিয়ার লিগের সেরা ক্লাব হয়েও গোল করায় এবং ম্যাচ খেলায় পিছিয়ে আছে ম্যানচেস্টার সিটির মাঠ ইতিহাদ। এর পেছনে অবশ্য কারণও আছে। এমিরেটসের মতো ইতিহাদ যাত্রাই শুরু করেছে অনেক পরে, ২০০৩ সালে। ফলে অ্যানফিল্ড বা ওল্ড ট্রাফোর্ডের মতো বেশি ম্যাচ দেখেনি এই মাঠ। যে কারণে ৪১৫ ম্যাচে ১ হাজার ৩০২ গোল নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে ইতিহাদকে। তবে শীর্ষে থাকা মাঠগুলোর মতো ম্যাচ আয়োজনের সুযোগ পেলে, ইতিহাদ নিশ্চিতভাবে আরও ওপরে থাকতে পারত।
ম্যাচ: ৪৮৩ গোল: ১,৩৪৯
টটেনহামের সাবেক মাঠ হোয়াইট হার্ট লেনের অবশ্য আরও ওপরে থাকার কথা ছিল। কিন্তু ২০১৭ সালে আনুষ্ঠানকিভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয় এই মাঠ। যে কারণে তালিকায় পিছিয়ে আছে এটি। বন্ধ হওয়ার আগে এই মাঠে প্রিমিয়ার লিগে খেলা হয়েছে ৪৮৩ ম্যাচ, গোল হয়েছে ১ হাজার ৩৪৯টি। বর্তমান সময় পর্যন্ত চালু থাকলে নিশ্চিতভাবে আরও ওপরে থাকত এই মাঠ।
ম্যাচ: ৫৭৬ গোল: ১,৪৪৫
অ্যাস্টন ভিলার মাঠ ভিলা পার্কে সেন্ট জেমস পার্কের চেয়ে বেশি ম্যাচ হয়েছে। কিন্তু গোল করায় ৪২ হাজার ৬৪০ জন দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ভিলা পার্ক আশ্চর্য রকম কৃপণ। এই মাঠে ৫৭৬টি ম্যাচ খেলা হলেও গোল হয়েছে ১ হাজার ৪৪৫টি, যা জেমস পার্কের চেয়ে ৯৬ গোল কম।
ম্যাচ: ৫১১ গোল: ১,৫৪১
নিউক্যাসলের ঘরের মাঠ সেন্ট জেমস পার্ক এই তালিকায় পঞ্চম। ৫২ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই মাঠে খেলা হয়েছে প্রিমিয়ার লিগে ৫১১টি ম্যাচ। সব মিলিয়ে গোল হয়েছে ১ হাজার ৫৪১টি। সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ ছন্দে আছে নিউক্যাসল। পরের মৌসুমে নিউক্যাসল নিজেদের ছন্দ ধরে রাখলে এই মাঠে গোলসংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ম্যাচ: ৬৩৩ গোল: ১,৬৫৩
সবচেয়ে বেশি প্রিমিয়ার লিগ ম্যাচ আয়োজনে অ্যানফিল্ড, ওল্ড ট্রাফোর্ড এবং স্টামফোর্ড ব্রিজের সঙ্গে শীর্ষে এভারটনের গুডিসন পার্কও। তবে গোলের দিক থেকে পিছিয়ে এই মাঠ। ৩৯ হাজার ৫৭২ জন দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই মাঠে ৬৩৩ ম্যাচে গোল হয়েছে ১ হাজার ৬৫৩টি। প্রতিবেশী অ্যানফিল্ডের সমান ম্যাচ আয়োজন করেও গুডিসন পার্ক ১৪৮ গোল কম দেখেছে।
ম্যাচ: ৬৩৩ গোল: ১,৭৬৮
স্টামফোর্ড ব্রিজে অনেক অনবদ্য ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন ফুটবলপ্রেমীরা। এই মাঠেই চেলসি লিখেছে তাদের উত্থানের গল্প। ৪০ হাজার ৩৪১ জন দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এ মাঠে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ হয়েছে ৬৩৩টি। গোলসংখ্যায় অ্যানফিল্ড ও ওল্ড ট্রাফোর্ডের চেয়ে খানিকটা পিছিয়ে স্টামফোর্ড ব্রিজ। এই মাঠে সব মিলিয়ে গোল হয়েছে ১ হাজার ৭৬৯টি।
ম্যাচ: ৬৩৩ গোল: ১,৭৯৮
বিশ্বের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী স্টেডিয়ামগুলোর অন্যতম ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মাঠ ওল্ড ট্রাফোর্ড। ‘থিয়েটার অব ড্রিমস’ নামে খ্যাত এই স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণক্ষমতা ৭৪ হাজার ৩১০ জন। প্রিমিয়ার লিগে গোলের হিসাবে অ্যানফিল্ডের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে এ মাঠ। ৬৩৩ ম্যাচে গোলসংখ্যা ১ হাজার ৭৯৮, যা অ্যানফিল্ডের চেয়ে মাত্র ৩ গোল কম! কে জানে, আসছে মৌসুমেই হয়তো অ্যানফিল্ডকে ছাড়িয়ে যাবে ওল্ড ট্রাফোর্ড।
ম্যাচ : ৬৩৩ গোল: ১,৮০১
অ্যানফিল্ডকে বলা হয় প্রতিপক্ষের জন্য ‘নরক’। লিভারপুলের এই মাঠে খেলা নিয়ে আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন বিশ্বের বাঘা বাঘা কোচও। ফুটবলের অসামান্য সব মুহূর্তেরও জন্ম দিয়েছে লিভারপুল রোডের এই মাঠ। প্রিমিয়ার লিগে গোলের দিক থেকেও সবার ওপরে ৬১ হাজার ২৭৬ জন দর্শক ধারণক্ষমতার এই স্টেডিয়াম। ১৯৯২ সাল থেকে প্রিমিয়ার লিগের নতুন সংস্করণ শুরুর পর ৬৩৩ ম্যাচে এই মাঠে গোল হয়েছে ১ হাজার ৮০১টি।