ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে সবচেয়ে বেশি ‘ফলোয়ার’ কোন ১০ ক্লাবের
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবল ক্লাব কোনটি? খুব সহজ উত্তর—যাদের সমর্থক বেশি।
কিন্তু কোন ক্লাবের সমর্থক বেশি, সেটা হিসাব করার উপায় কী? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এ যুগে সেটা এখন আর কঠিন কিছু নয়। বিশ্বের বড়-ছোট সব ক্লাবই এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সক্রিয়। সেখানে তাদের অনুসারী হিসাব করলেই আন্দাজ করা যায়, জনপ্রিয়তায় কোন ক্লাব এগিয়ে।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ফুটবল অবজারভেটরি ঠিক এ কাজই করেছে তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, মাঠের মতোই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সবচেয়ে দাপুটে স্পেনের দুই ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা।
ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, এক্স, টিকটক ও ইউটিউব—এই পাঁচ প্ল্যাটফর্ম মিলিয়ে গোটা বিশ্বে রিয়াল মাদ্রিদের অনুসারী ৪৭ কোটি ৩০ লাখ। সেই হিসাবে রিয়ালকে ‘সোশ্যাল মিডিয়া কিং’ তো বলাই যায়। কম যায় না বার্সেলোনাও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বার্সার অনুসারী ৪২ কোটি ৭৪ লাখ।
ফুটবল অবজারভেটরি কী?
ফুটবল অবজারভেটরি হলো সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্পোর্টস স্টাডিজের (সিআইইএস) একটি স্বাধীন গবেষণা দল, যারা বিশেষভাবে ফুটবলের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে কাজ করে থাকে।
২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ফুটবল অবজারভেটরি খেলোয়াড়দের শ্রমবাজার এবং দলবদলের বাজার নিয়ে জনমিতি ও অর্থনৈতিক গবেষণার ক্ষেত্রে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি তারা ক্লাব ও খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ এবং দলবদলের মূল্যের বৈজ্ঞানিক অনুমান নিয়েও কাজ করে।
বিশ্বের ফুটবল সংস্থাগুলো, যেমন—ফিফা, উয়েফা, ইসিএ, সাফসহ বিশ্বের অনেক স্বনামধন্য ক্লাব ফুটবল অবজারভেটরির তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে।
কী আছে ফুটবল অবজারভেটরির সর্বশেষ (জুন ২০২৫) প্রতিবেদনে?
জুন ২০২৫ পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্লাবগুলোর একটা তালিকা করা হয়েছে ফুটবল অবজারভেটরির এই প্রতিবেদনে, যেখানে শীর্ষ ১০০টি ক্লাবের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বলতে ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, এক্স, টিকটক ও ইউটিউব—বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই পাঁচ প্ল্যাটফর্মকে ধরা হয়েছে। এ প্ল্যাটফর্মগুলোয় মোট অনুসারীর হিসাবে রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা যে সবচেয়ে এগিয়ে, সেটা তো আগেই বলা হয়েছে। বাকি ক্লাবগুলোর সঙ্গেও স্প্যানিশ এই দুই ক্লাবের যোজন ব্যবধান।
কারণ মেসি-রোনালদোর জাদু
ফুটবল অবজারভেটরির প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, এই দুই ক্লাবের জনপ্রিয়তার পেছনে বড় অবদান লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর। ঐতিহাসিক একটা দ্বৈরথ তো ছিলই, এখনো আছে। তবে একবিংশ শতাব্দীতে রোনালদো ও মেসি রিয়াল এবং বার্সেলোনাকে একেবারে বিশ্বজুড়ে পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁদের ম্যাজিক শুধু স্পেনেই নয়, সারা বিশ্বে এই দুই ক্লাবের ফ্যানবেজ বাড়িয়েছে!
তবু আছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
নিকট অতীতে বড় কোনো সাফল্য নেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। কিন্তু তারপরও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয়তার বিচারে এখনো তৃতীয় ইংল্যান্ডের ইতিহাসে অন্যতম সফল এ ক্লাব।
ফুটবল অবজারভেটরির প্রতিবেদন বলছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখনো ইউনাইটেডের অনুসারী ২৩ কোটি ৩৬ লাখ। আরেকটা ব্যাপার, রিয়াল ও বার্সেলোনার ক্ষেত্রে যেমন সবচেয়ে বেশি অনুসারী ইনস্টাগ্রামে (রিয়ালের ১৭ কোটি ৫৮ লাখ, বার্সার ১৪ কোটি ১৬ লাখ), ইউনাইটেডের বেলায় সেটি নয়। ইউনাইটেডের সবচেয়ে বেশি অনুসারী ফেসবুকে—৮ কোটি ৫১ লাখ।
সাফল্যে বেড়েছে জনপ্রিয়তা
ফুটবল–ঐতিহ্যে ম্যানচেস্টার সিটি ও পিএসজি ইউরোপের অন্য বড় অনেক ক্লাবের চেয়ে হয়তো পিছিয়ে। তবে সাম্প্রতিক সাফল্যে এই দুই ক্লাবেরই জনপ্রিয়তা বেড়েছে।
এ বছর ইউরোপসেরা হওয়া পিএসজি ও ২০২৩ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা সিটি আছে যথাক্রমে ৪ ও ৫ নম্বরে। পিএসজিই কিছুটা এগিয়ে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের অনুসারী ১৯ কোটি ৯৪ লাখ। সিটির অনুসারী ১৭ কোটি ৯৫ লাখ।
ইংলিশ ক্লাবগুলোর দাপট
সেরা দশে পাঁচটি ইংলিশ ক্লাব—ইউনাইটেড, সিটি ছাড়াও আছে লিভারপুল, চেলসি, আর্সেনাল। ক্লাবগুলোর ঐতিহ্য আর ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ‘ব্র্যান্ড ভ্যালু’ এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে।
‘স্টার পাওয়ার’
মেসি-রোনালদো এখন আর ইউরোপে নেই। মেসি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টার মায়ামিতে, রোনালদো সৌদি আরবের আল নাসরে। দুই ক্লাবের কোনোটিই বিশ্ব ফুটবলের পরাশক্তি নয়। তারপরও মেসি-রোনালদোর মতো মহাতারকা প্রভাব পড়েছে এই দুই ক্লাবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেড়েছে তাদের অনুসারী।
রোনালদোর আল নাসর আছে তালিকার ১৬ নম্বরে, ক্লাবটির অনুসারী ৬ কোটি ২০ লাখ। মেসির মায়ামি ২৩ নম্বরে, ৩ কোটি ২৩ লাখ অনুসারী তাদের। তালিকার ৩১ নম্বরে নেইমারের সান্তোস, যাদের এখন অনুসারী ২ কোটি ৪৩ লাখ।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, গত বছর জুন থেকে এখন পর্যন্ত এক বছরেই সান্তোসের অনুসারী বেড়েছে ১ কোটি ২ লাখ। এ সময়ে বিশ্বের আর কোনো ক্লাবের অনুসারী এত বাড়েনি। কারণ তো নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছেন—নেইমারের সান্তোসে ফেরা। ‘স্টার পাওয়ার’ বোধ হয় একেই বলে!