এশিয়াড ফুটবলে ভারতের বিপক্ষে কেমন ফল বাংলাদেশের
ফুটবলে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ মানেই অন্য রকম রোমাঞ্চ। সেটি দুই প্রতিবেশী দেশের লড়াই বলেই হয়তো। না হলে শক্তি-সামর্থ্যে ভারত যে বাংলাদেশের চেয়ে সব সময়ই এগিয়ে। দুই দেশ ফুটবলে গত ৪৫ বছরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় মুখোমুখি হয়েছে অনেকবার। অমীমাংসিত থেকেছে অনেক ম্যাচ। তবে জয়-পরাজয়ের হিসেবে ভারত বাংলাদেশকে পেছনে ফেলেছে সব সময়ই। এশিয়ান গেমসে ভারতের তিনটি জয়ের বিপরীতে বাংলাদেশ জয়শূন্যই।
এশিয়াডে বাংলাদেশ প্রথম খেলেছিল ১৯৭৮ সালের ব্যাংককে। প্রথমবারই ভারতের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। সেই ম্যাচটি ছিল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রথম বাংলাদেশ-ভারত লড়াই। বাংলাদেশে হেরেছিল ৩-০ গোলে। ভারতের গোল তিনটি করেছিলেন বিদেশ বোস, হারজিন্দর সিং ও হাভিয়ের পায়াস। এশিয়াডের ফুটবল ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় দলের প্রতিযোগিতা ছিল। ২০০২ সালের বুসান এশিয়ান গেমস থেকে এটি অনূর্ধ্ব-২৩ দলের প্রতিযোগিতা। যদিও প্রতিটি দলই সিনিয়র কোটায় তিনজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় খেলাতে পারে।
এশিয়াডে ভারতের বিপক্ষে জাতীয় দল ও অনূর্ধ্ব-২৩ দল মিলিয়ে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত খেলেছে তিনটি ম্যাচ। তিনটি ম্যাচেই বাংলাদেশ হেরেছে। তবে দুই দলের সেরা লড়াইটা বোধ হয় ১৯৮২ সালের দিল্লি এশিয়াডে হয়েছে। যদিও সে ম্যাচে ২-০ গোলে হেরেছিলেন বাদল রায়-আশিস ভদ্ররা। দিল্লির নেহরু স্টেডিয়ামে শুরুর বাঁশির সঙ্গে সঙ্গেই গোল পেয়েছিল ভারত। গোলরক্ষক মোতালেবকে বোকা বানিয়ে প্রথম মিনিটেই গোল করেছিলেন প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাকি সময় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও বাংলাদেশ সমতা ফেরাতে পারেনি। বাংলাদেশ দ্বিতীয় গোলটি হজম করে যোগ করা সময়ের চতুর্থ মিনিটে। গোল সেই প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়েরই। বাংলাদেশ সেবারই মালয়েশিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে পেয়েছিল এশিয়াড ফুটবলে প্রথম জয়। গ্রুপে বাংলাদেশের অপর প্রতিপক্ষ ছিল চীন। তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশ হেরেছিল ১-০ গোলে। এবারের হাংজু এশিয়াডেও ফুটবলে ভারতের সঙ্গে চীনও বাংলাদেশের গ্রুপে আছে। অন্য দলটি মিয়ানমার।
এশিয়াডে অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবল চালুর প্রথম বছরই ভারতের গ্রুপে খেলেছে বাংলাদেশ। ২০০২ সালে বুসান অবশ্য ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি ভুলেই যেতে চাইবেন রজনীকান্ত বর্মণ, মোহাম্মদ সুজনরা। সে ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল ৩-০ গোলে। ভারতের তিন গোলের দুটি করেছিলেন সিনিয়র কোটার বাইচুং ভূটিয়া ও অন্য গোলটি রেনেডি সিংয়ের।
অনূর্ধ্ব-২৩ পর্যায়ে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় আছে একটিই। সেটি ২০১০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এসএ গেমসে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সে ম্যাচে বাংলাদেশ তৌহিদুল আলম সবুজের গোলে ১-০ গোলে হারিয়েছিল ভারতকে।
জাতীয় দল শেষবার ভারতকে হারিয়েছিল ২০ বছর আগে—২০০৩ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে। ঢাকায় সেই ম্যাচে ভারতকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের প্রথম জয় ১৯৯১ সালের সাফ গেমসে। সেবার বাংলাদেশ রিজভী করিম রুমির জোড়া গোলে ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছিল ভারতকে। অন্য জয়টি ১৯৯৯ সালের সাফ গেমসে। দুই দেশ জাতীয় দল পর্যায়ে এখনো পর্যন্ত খেলেছে ৩০টি ম্যাচ। ভারত জিতেছে ১৫টি, বাংলাদেশ ৩টি। ড্র হয়েছে ১২ ম্যাচ।
হাংজু এশিয়াডে আজ বাংলাদেশ সময় বেলা ২টায় ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দল। পরশু প্রথম ম্যাচ দুই দলই হেরেছে। ফলে আজকের ম্যাচটি দুই দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের জন্য আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এ ম্যাচ তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর ম্যাচও। প্রথম ম্যাচে চীনের বিপক্ষে যে ৫-১ গোলে উড়ে গেছে তারা।
বাংলাদেশ মিয়ানমারের বিপক্ষে হেরেছে আত্মঘাতী গোলে। ভারত আজ বাংলাদেশের চেয়ে শক্তির বিচারে অনেক এগিয়ে থাকলেও বাংলাদেশ যে ভারতকে ছেড়ে কথা বলবে না, সেটি ইতিহাসই বলে। তবে আজ হাভিয়ের কাবরেরার দল ১৯৭৮ ও ২০০২ সালের এশিয়ান গেমসের বড় হার নয়, ১৯৮২ সালের মতো ভারতের বিপক্ষে জোর লড়াই-ই চাইবে।