মিরপুরেও ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে পারেন সাকিব, নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন ডমিঙ্গোর কাছে ‘ট্রিকি’

৮৪ রানের ইনিংস খেলার পথে সাকিবছবি: শামসুল হক

ভারতের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ইনিংসে ১২ ওভার বোলিং করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংয়ে আসেননি সাকিব আল হাসান। মিরপুরে পরের টেস্টেও বাংলাদেশ অধিনায়ককে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেলতে দেখা যেতে পারে, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবেও সাকিবের দলে জায়গা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই, সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন ডমিঙ্গো। টেস্ট ক্রিকেটে সাকিবের নিবেদনের প্রশ্নকে ‘কঠিন’ বলেছেন তিনি।

ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে উমরান মালিকের বলে পাওয়া চোট নিয়ে চট্টগ্রাম টেস্টে সাকিবের খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তিনি খেলেছেন, প্রথম ইনিংসে ষষ্ঠ ওভারেই নিজে বোলিংয়ে এসেছিলেন। ১ ওভার পর সরে গেলেও সেদিন আরও ১১ ওভার করেন। তবে এর পর থেকে আর বোলিংয়ে দেখা যায়নি তাঁকে।

দ্বিতীয় ইনিংসে সাকিব বোলিং করতে পারবেন, স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ এমন জানালেও সাকিবকে বল হাতে নিতে দেখা যায়নি। যদিও দুই ইনিংসেই ব্যাটিং করেছেন, ফিল্ডিংয়ের সময়ও মাঠেই ছিলেন।

আরও পড়ুন

আজ টেস্ট শেষ হয়ে যাওয়ার সংবাদ সম্মেলনে এসে ডমিঙ্গো জানালেন, সাকিব এখনো কাঁধের চোটে ভুগছেন, ‘অবশ্যই সে খুব বেশি বোলিং করেনি। কারণ, এখনো কাঁধ ও আগের চোট নিয়ে ভুগছে। এটি আমাদের জন্য বড় ধাক্কা ছিল। কারণ, এতে আমরা চার বোলারে পরিণত হই। এরপর ইবাদতও ব্যথা পেলে আমাদের হাতে শুধু তিন বোলার ছিল। এতে করে দলের ভারসাম্য ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ, আমাদের ব্যাটিং অর্ডারের আত্মবিশ্বাস এখন খুব বেশি নয়। এ ছাড়া আমাদের বোলাররাও তেমন ব্যাটিং করতে পারে না। এটি তাদের দোষ নয়। তারা ব্যাটিংয়ের জন্য আসেনি। তবে এ কারণে আমাদের শুধু চার বোলার নিয়ে খেলতে হয়।’

মিরপুর টেস্টে অবশ্য শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেলতে পারেন সাকিব, ডমিঙ্গো বলেছেন সেটিও, ‘আমি এখনো শতভাগ নিশ্চিত নই, সে (মিরপুর টেস্টে) বোলিং করতে পারবে কি না। তবে অবশ্যই ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে পারবে। এটি অবশ্যই আমাদের জন্য চিন্তার কারণ। কারণ, সে একজন অলরাউন্ডার। আমাদের একজন অলরাউন্ডার প্রয়োজন। আমাদের আগামী ২-১ দিন তাকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এ মুহূর্তে সে ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলার জন্য ফিট আছে।’

খুব বেশি সময় টিকতে পারেনি বাংলাদেশ
ছবি: শামসুল হক

ব্যাটসম্যান হিসেবেই সাকিবকে খেলানো হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে এরপর ডমিঙ্গো বলেছেন, ‘সে দলের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। দ্বিতীয় ইনিংসেও সে আশির মতো (৮৪) রান করেছে এবং সে দলের অধিনায়কও। আপনি অলরাউন্ডার হিসেবে দলে জায়গা পেলে, বোলিং ভালো না করলেও ব্যাটিংয়ে পুষিয়ে দেওয়ার সুযোগ থাকে। ব্যাটিংয়ে খারাপ করলে বোলিংয়েও সুযোগ থাকে। শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবেও দলে থাকার যোগ্য সে।’

আরও পড়ুন

সাকিব শেষ পর্যন্ত শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেললে একজন বাড়তি বোলার খেলাতে হবে বাংলাদেশের। সে ক্ষেত্রে বাদ পড়তে পারেন উইকেটকিপার নুরুল হাসানও, দলে এমনিতেই উইকেটকিপার হিসেবে আছেন লিটন দাস। তবে নুরুলকে বাদ দেওয়াটা সহজ হবে না, মনে করিয়ে দিয়েছেন ডমিঙ্গো, ‘সাকিব বল না করলে (নুরুলকে উইকেটকিপার হিসেবে খেলানোর) ব্যাপারটি কঠিন। সে বোলিং করলে আমার মনে হয় কাজটা সহজ। সোহান (নুরুল) খুব ভালো করেছে ব্যাটিংয়ে। এই ম্যাচে রান করেনি, তবে বাংলাদেশে এটিই চ্যালেঞ্জ—এক দিন রান না করলেই বাদ দেওয়ার কথা ওঠে। অথচ আগের ম্যাচে কী করেছে, সেটা মনে থাকে না। আপনাকে একটু ধাতস্থ হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এক টেস্ট আগেও ওয়েস্ট ইন্ডিজে সে দুটি ফিফটি করেছে। সে নিজেও তার আউট নিয়ে হতাশ হবে। আমাদের আবেগী হওয়া যাবে না। এখনো পরের টেস্টের আগে দুই দিন সময় আছে।’

আরও পড়ুন

বোলিং করেননি, তবে অধিনায়ক হিসেবেও সাকিবকে বিশেষ করে দ্বিতীয় ইনিংসে তেমন উজ্জীবিত দেখা যায়নি। একটা সময় তো বাংলাদেশ দল ভারতের ইনিংস ঘোষণার জন্যই অপেক্ষা করছিল বলে মনে হচ্ছিল। তবে সাকিবের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স করার নিবেদন নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলতে চান না ডমিঙ্গো, ‘কীভাবে তার নিবেদন মূল্যায়ণ করব? ট্রিকি প্রশ্ন। ভালো একটি প্রশ্ন। সে যখন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে থাকে, নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে গর্ব করে। সে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে শতভাগই দেয়। বাইরে থেকে দেখলে হয়তো মনে হবে, সে আসলেই এসবকে গুরুত্ব দেয় কি না। তবে চ্যাম্পিয়ন প্লেয়ারদের দিকে তাকালে দেখবেন, নিজেদের পারফরম্যান্সে তাদের গর্ব আছে। ফলে সাকিব তো মাঝে গিয়ে নিজেকে লজ্জা দেবে না। সে শতভাগ দিয়েই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।’

আরও পড়ুন

এদিকে সাকিব চট্টগ্রাম ছাড়ছেন আগেভাগেই। এমনিতে আগামীকাল সকালের ফ্লাইটে বাংলাদেশ দলের চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাওয়ার কথা থাকলেও আজই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। জানা গেছে, দুপুরের ফ্লাইটেই রওনা দেবেন তিনি। এ কারণে চট্টগ্রাম টেস্টের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষেই মাঠ ছেড়ে চলে গেছেন তিনি, দলের অন্যরা টিম বাসে গেছেন পরে। ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে ভারত অধিনায়ক লোকেশ রাহুল এলেও সাকিব আসেননি। টেস্টের আগে থেকে শেষ পর্যন্ত একবারও সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হননি তিনি।