স্টোকস-ম্যাককালামদের বাজবল যখন টটেনহামেরও প্রেরণা

টটেনহাম ম্যানেজার অ্যাঞ্জে পোস্তেকগলু (বাঁয়ে) ও ইংল্যান্ড টেস্ট কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামএএফপি

‘যেকোনো খেলায়, যখনই আমি দেখি কেউ প্রথাগত ছাঁচ ভাঙছে, যখনই মানুষ এ নিয়ে অস্বস্তিতে ভোগে—তখনই আপনি জানবেন, “আচ্ছা, এটা বিশেষ কিছুই হতে পারে।”’

কথাগুলো অ্যাঞ্জে পোস্তেকগলুর। টটেনহামের নতুন অস্ট্রেলীয় ম্যানেজারের মনে ধরেছে ইংল্যান্ড টেস্ট দলের নতুন খেলার ধরন। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও বেন স্টোকসের ইংল্যান্ডের খেলা প্রেরণা দিচ্ছে প্রিমিয়ার লিগের দলটির ম্যানেজারকেও। টটেনহামেও আক্রমণাত্মক ধাঁচের ফুটবলই চান তিনি।

সেল্টিক থেকে টটেনহামে এসে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে অ্যাশেজের লর্ডস টেস্টে গিয়েছিলেন পোস্তেকগলু। অস্ট্রেলীয় হলেও ‘বাজবল’ নিয়ে তাঁর সোজাসাপটা মনোভাব, ‘ভাই, আমি বাজবল ভালোবাসি। দুর্দান্ত!’

বাজবলের মতো এমন ব্র্যান্ডের খেলা যে সফল হবেই—এমন কোনো নিশ্চয়তা স্বাভাবিকভাবেই নেই। পোস্তেকগলু সেটি জানেন। স্কাই স্পোর্টসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘এটা কাজে দেবেই, এমন নিশ্চয়তা নেই। এটা ভেঙে পড়তে পারে, ব্যর্থ হতে পারে। তবে আপনি যখন কিছু একটা দেখিয়ে লোকদের অস্বস্তিতে ফেলবেন, তার মানে আপনি নতুন কিছু গড়ছেন। জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রেই আমি এমন কিছু ভালোবাসি।’

পোস্তেকগলুর এখনকার মানসিকতাও অমনই, ‘তখনই বিশেষ কিছু মেলে। আমিও তেমন অবস্থানেই আছি।’

আরও পড়ুন

এমনিতে একটা নড়বড়ে অবস্থানের মধ্য দিয়েই যাচ্ছে সর্বশেষ মৌসুমে আটে থেকে প্রিমিয়ার লিগ শেষ করা টটেনহাম। পোস্তেকগলুর সঙ্গে ক্লাবটির চুক্তির মেয়াদ চার বছর, কিন্তু ২০১৮-১৯ মৌসুমের পর থেকে তাদের পূর্ণমেয়াদে চতুর্থ কোচ তিনি।

এমনিতে একটা নড়বড়ে অবস্থানের মধ্য দিয়েই যাচ্ছে সর্বশেষ মৌসুমে আটে থেকে প্রিমিয়ার লিগ শেষ করা টটেনহাম
এএফপি

জোসে মরিনিও, আন্তোনিও কন্তে, নুনো এসপিরিতো সান্তোরা টটেনহামকে শিরোপা এনে দিতে পারেননি। এবার পোস্তেকগলু এসে বলছেন উপভোগ্য ফুটবলের কথা। তবে সেল্টিকের হয়ে দুই মৌসুমে পাঁচটি শিরোপা জেতা পোস্তেকগলু মনে করিয়ে দিয়েছেন, সাফল্যের ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই, ‘আমাদের খেলার সৌন্দর্যই এটি। ফুটবলের সৌন্দর্য হচ্ছে, অনেক অনেক উপায়ে আপনি সফল হতে পারেন। অনেক পদ্ধতিতে দল গড়তে পারেন, প্রতিপক্ষের জবাব দিতে পারেন অনেক উপায়ে। হয়তো আমি এক মেরুতে, অন্যজন আরেক মেরুতে। তবে দুজনই সফল হতে পারি।’

ঐতিহ্যগতভাবেই টটেনহাম উপভোগ্য ফুটবল ভালোবাসে, সেটিও বলেছেন তিনি, ‘আমার মনে হয় বিশেষ করে এ ফুটবল ক্লাবে, যারা সব সময়ই দলগুলোর মধ্যে এমন কিছু খুঁজে ফিরেছে, যারা বিনোদনদায়ীদের ভালোবাসে, তাদের সঙ্গে অমন ফুটবলের একটা যোগাসাজশ আছে।’

সাম্প্রতিক সময়ে ইংল্যান্ড টেস্ট দল যেমন ঘুরেফিরেই দর্শকদের কথা বলে, পোস্তেকগলুও বলছেন সেটিই, ‘ফলে, যদি অমন ঘরানার ফুটবল আনতে পারি, সমর্থকদের পাশে পাব আশা করি। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তখন এই জীবনীশক্তি দলের মাঝে সঞ্চারিত হবে। এরপর পরের ধাপে আমরা সফল হতে পারি।’

বদলাতে চান না পোস্তেকগলু
এএফপি

তবে সে সাফল্যের জন্য মোটেও রক্ষণাত্মক খেলবে না টটেনহাম, অন্তত তাঁর অধীন নয়—পোস্তেকগলু বলেছেন সেটি। প্রাক্‌–মৌসুমে শাখতার দোনেৎস্কের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল টটেনহাম। বিরতির আগে লিডটা ধরে রাখার চেষ্টা করে কোচের সমালোচনা শুনেছিলেন টটেনহাম খেলোয়াড়রা। কিন্তু প্রাক্‌–মৌসুমের ম্যাচে আক্রমণাত্মক হওয়া, আর লিগ বা কাপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে সবসময় গোল খুঁজে ফেরা তো এক নয়।

কিন্ত পরিস্থিতি যা–ই হোক, পোস্তেকগলুর কোচিং দর্শন বদলাবে না, ‘অবশ্যই অনেক বৈধ উপায় আছে, আমি সেসব বিচার করতেও যাব না। তবে আপনি দুটোই করতে পারবেন না। ‘পারফেক্ট সিস্টেম’ বলে কিছু নেই। হয় পুরোপুরি এক পথে এগোবেন, নাহয় ভিন্ন একটি পথে। আর সত্যি বলতে কী, আমি ওইভাবে কোচিং করাতে পারি না। শেষ ৫ মিনিটে এক গোলের লিড ধরে রাখতে গেলে খেলোয়াড়দের কী বলতে হয়, সেটা আমি জানি না। আমি আসলে এমন নয়, আমার কোচিং এমন নয়। হ্যাঁ, সব সময় কাজে দেবে না। তবে যেমনটি বললাম, কাজে দেবেই—এমন কোনো পদ্ধতি নেই।’

পোস্তেকগলু এরপর যা বলেছেন, স্টোকসদের কথার সঙ্গে মিল সেখানেও, ‘আমার মনে হয় ম্যানেজার হিসেবে মূল ব্যাপারটি হচ্ছে খেলোয়াড়দের কাছে সবকিছু পরিষ্কার হওয়া। যদি স্রেফ পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে এখানে সেখানে পরিবর্তন আনি, তাহলে তারা মাঠে নামবে ধোঁয়াশা নিয়ে। আমরা কোথায়, দল হিসেবে কেমন হতে চাই—এসব নিয়ে ধোঁয়াশা থাকবে।’

ম্যাককালাম-স্টোকসের কাছ থেকে প্রেরণা নিতে চান টটেনহাম ম্যানেজার
ফাইল ছবি

এর আগে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের দায়িত্ব পালন করা পোস্তেকগলু ইংল্যান্ডে কতটা সফল হবেন, সেটি সময় বলবে। স্বাভাবিকভাবেই স্কটল্যান্ড বা জাপানে সফল হওয়া আর ইংল্যান্ডে প্রিমিয়ার লিগের মতো জায়গায় নিজের পায়ের নিচে শক্ত মাটি পাওয়া এক নয়—সমালোচকেরা বলবেন সেটিও। কিন্তু তাঁর কাজই নাকি সবাইকে ভুল প্রমাণ করা, ‘ক্যারিয়ারজুড়েই আমি সফল হয়েছি, যেখানেই এভাবে খেলি না কেন। আমি এ কারণেই এটি চালিয়ে যাব। প্রতিবারই যখন ক্লাব বদলাই, এ প্রশ্নটা থেকেই গেছে। যেটাকে আরেকটু উঁচু পর্যায়ের বা ভিন্ন পর্যায়ের বা ভিন্ন দেশ মনে হয়, সেখানে কি আমার সাফল্য অনূদিত হবে? এটা যে হয়, সেটি করে দেখাতে আমার ভালো লাগে। আর সফল হয়েছি বলে আপাতত বদলানোর কোনো কারণও দেখছি না, বন্ধু!’

এরপর তিনি যোগ করেছেন, ‘আমি কখনোই জীবনে লক্ষ্য ঠিক করিনি। কারণ, সেটি করলে হয়তো, আমি যে সাফল্য পেয়েছি, তা পেতাম না। সত্যিটা হচ্ছে, যেসব সাফল্য আমি পেয়েছি, তার অনেকগুলো এমনকি আমার নিজের কাছেই বিস্ময়জাগানিয়া। যদি এ মৌসুমের শেষ পর্যন্ত যেতে পারি, আমাদের সমর্থকেরা মৌসুম নিয়ে খুশি হয়, তাহলে আমরা যা চাই, সেটি অর্জন করতে পারব। বাস্তবতা অনুযায়ী সেটি পয়েন্ট, ট্রফি—যেকোনো কিছুই হতে পারে। কে জানে!’

‘এ মুহূর্তে হ্যারি দলের জন্য যতটা গুরুত্বপূর্ণ, আমার জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো আমি দলকে নিয়ে কী করব’
এএফপি

অবশ্য মৌসুমের শুরুতেই দলটির ইতিহাসের সেরা গোলদাতাকে হারিয়ে ফেলা যে একটা ধাক্কাই, কারও অজানা নয় সেটি। হ্যারি কেইনের চলে যাওয়া পোস্তেকগলু কীভাবে সামাল দেন, সেটি তাই আগ্রহজাগানিয়া ব্যাপারই। তবে টটেনহাম ম্যানেজার এ নিয়ে খুব একটা চিন্তিত, অন্তত তাঁর কথা শুনে সেটি মনে হবে না।

পোস্তেকগলু যখন স্কাই স্পোর্টসকে এ সাক্ষাৎকার দেন, কেইন তখনো আনুষ্ঠানিকভাবে চলে যাননি, তবে জোরাল গুঞ্জন ছিল। সেখানে দাঁড়িয়ে নিজের মনোভাব তিনি জানান এভাবে, ‘যদি এটা দ্বিতীয় বা তৃতীয় বছর হতো এ প্রজেক্টের, যদি দল এরই মধ্যে আমি যেভাবে চাই, সেভাবে খেলা শুরু করত, আমরা ভালো একটা দলের ভিত্তি পেয়ে যেতাম এরই মধ্যে, তাহলে হ্যারির এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে আমি অনেক সময় ও শক্তি ব্যয় করতাম এর পেছনে। তবে এ মুহূর্তে হ্যারি দলের জন্য যতটা গুরুত্বপূর্ণ, আমার জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো আমি দলকে নিয়ে কী করব।’

কী করতে চান এ দলকে নিয়ে, সেটি অবশ্য পোস্তেকগলুর আগের কথাতেই ভালো একটা ধারণা পাওয়ার কথা।

আরও পড়ুন