ব্রাজিল ম্যাচ নিয়ে স্মৃতিকাতর ক্যামেরুন কোচ সং

ব্রাজিল ম্যাচে সংয়ের মনে ২৮ বছর আগের স্মৃতিছবি: রয়টার্স

কৈশোরের দিনগুলোতে ফিরে যাচ্ছেন রিগোবার্ট সং।

ক্যামেরুনের কোচকে নস্টালজিয়া পেয়ে বসেছে। আজ নিজেদের শেষ গ্রুপ ম্যাচে ব্রাজিলের বিপক্ষে খেলতে নামার আগে স্মৃতিকাতর ক্যামেরুনের কোচ সং। ২৮ বছর আগে মাত্র ১৭ বছর বয়সে এই ব্রাজিলের বিপক্ষেই বিশ্বকাপে অভিষেক হয়েছিল তাঁর।

ক্যামেরুনের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার রিগোবার্ট সং। লিভারপুল, ওয়েস্টহ্যাম ইউনাইটেড ও গ্যালাতাসারাইয়ের সাবেক এই ফুটবলার দেশের হয়ে খেলেছেন ১২৩ ম্যাচ। ১৯৯৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে ক্যামেরুনের জার্সিতে বিশ্বকাপে অভিষেক। সে ম্যাচে ব্রাজিল জিতেছিল ৩-০ গোলে। আজ লুসাইল স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপে জাতীয় দলের কোচ হিসেবে ব্রাজিলকে পাচ্ছেন প্রতিপক্ষ হিসেবে। গত ফেব্রুয়ারিতে পর্তুগিজ কোচ টনি কনসেইকাওয়ের স্থলাভিষিক্ত হন সং। এরপর কঠিন পরীক্ষাই দিতে হয়েছে। আলজেরিয়ার মতো দলকে পেছনে ফেলে কাতার বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিত করেছে সংয়ের ক্যামেরুন।

১৯৯৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে লাল কার্ড দেখেছিলেন সং
ছবি: সংগৃহীত

৪৬ বছর বয়সী সং জানিয়েছেন, ব্রাজিল ম্যাচ তাঁকে অতীতে নিয়ে যাচ্ছে, ‘মধুর স্মৃতি, যদিও আমরা ম্যাচটা হেরেছিলাম ৩-০ গোলে। কিন্তু আমার জন্য সেই ম্যাচ স্মরণীয়। ছোটবেলায় ব্রাজিল সবারই স্বপ্নের দল ছিল, আমারও তা-ই। আমার বয়স ছিল তখন মাত্র ১৭ বছর। যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বকাপ খেলাটাই ছিল বিশেষ কিছু। আমার শুরুটা হয়েছিল বিশ্বের অন্যতম সেরা দল ব্রাজিলের বিপক্ষে।’

সে ম্যাচ খুব মধুরও ছিল না সংয়ের। লাল কার্ড দেখেছিলেন। তবে সং মনে করেন, সেই লাল কার্ড তাঁর ক্যারিয়ারে কাজে এসেছে, ‘আমি তখন খুবই ছোট। নিয়মকানুন অত জানতাম না। আমি সে ম্যাচে যা পারি, করেছিলাম। লাল কার্ডটি আমার ক্যারিয়ারে খুব কাজে এসেছিল। আমি অনেক কিছুই শিখেছিলাম।’

২০১৪ বিশ্বকাপে ক্যামেরুনের ম্যানেজার ছিলেন সং। সেবারও গ্রুপ পর্বে ক্যামেরুনের প্রতিপক্ষ ছিল স্বাগতিক ব্রাজিল। ক্যামেরুন হেরেছিল ৪-১ গোলে। খেলোয়াড় থেকে টিম ম্যানেজার ও কোচ—এই তিন ভূমিকায় সংয়ের এটি ষষ্ঠ বিশ্বকাপ। আজ ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচটি কঠিন এক পরীক্ষাই ক্যামেরুনের জন্য। সেটি সং জানেন। ১৯৯০ সালের পর ক্যামেরুন যদি প্রথমবারের মতো গ্রুপ পর্বের বাধা পেরোতে চায়, তাহলে আজ ব্রাজিলের বিপক্ষে জয়ের পাশাপাশি অন্য ম্যাচের ফলেও তাকিয়ে থাকতে হবে। সং বলেন, ‘আমাদের জিততেই হবে। যেকোনো মূল্যে আমাদের ৩ পয়েন্ট পেতেই হবে। তবে আমাদের হারাবার কিছু নেই।’

খেলোয়াড় রিগোবার্ট সং
ফাইল ছবি

খেলোয়াড় হিসেবে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার। সংয়ের জীবনটাও বর্ণাঢ্য। ঘটনা-দুর্ঘটনায় ঠাসা। খেলার মাঠে চুল-দাড়ির ছাঁট—সবকিছুই ছিল অন্য আর সব খেলোয়াড়ের চেয়ে আলাদা। ২০১৬ সালে মৃত্যুর হাত থেকে ফিরেছিলেন তিনি। স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন ক্যামেরুন কোচ। তবে সং মৃত্যুর হাত থেকে ফেরার সব কৃতিত্ব দিয়েছেন তাঁর পোষা কুকুরটিকে। ফরাসি পত্রিকা ‘লেকিপ’কে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমার পোষা কুকুরটি না থাকলে আমি বাঁচতাম না। সেদিন আমি ঘরের বৈঠকখানায় বসে টিভি দেখছিলাম। কেন যেন খুব ক্লান্ত বোধ করছিলাম। সদর দরজা খোলাই ছিল। কারণ, বাড়িতে অতিথি আসার কথা ছিল। জীবন বাঁচার সেটিও বড় একটি কারণ। আমার স্ত্রী ও বাচ্চারা প্যারিসে বেড়াতে গিয়েছিল। কুকুরটি আমার অবস্থা টের পেতেই তারস্বরে ডাকা শুরু করে। ওর ডাক শুনে বাইরে থেকে একজন ভেতরে ঢুকে দেখেছিল, আমি মাটিতে পড়ে আছি। সঙ্গে সঙ্গে ওই লোকই আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।’

ক্যামেরুনের সে সময়ের প্রেসিডেন্ট পল বিয়ার যথেষ্ট সাহায্য পেয়েছিলেন সং, ‘তাঁর কথা না বললে অকৃতজ্ঞতার পরিচয় দেওয়া হবে। বলতে গেলে তাঁর জন্যই আমি আজ এখানে। তিনিই আমাকে প্যারিসে পাঠিয়ে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন।’