কাঠমান্ডুতে শুধুই সাবিনাদের প্রশংসা

নেপালের শপিং মলে সাফের শিরোপা জয়ী বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলের সদস্যরাছবি: প্রথম আলো

শপিং মলে ঢোকার মুখে ট্রে–ভর্তি চকলেট হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক বিক্রয়কর্মী। চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের ফুটবলাররা যখন কাঠমান্ডুর ভাট ভাটেনি সুপারমার্কেটে ঢুকছিলেন, সবার হাতে চকলেট তুলে দিলেন ওই নারী কর্মী। সাবিনা খাতুন–মারিয়া মান্দাদের মার্কেটে ঢুকতে দেখে ক্যাশ কাউন্টারে বসা কর্মী থেকে শুরু করে সুপারমার্কেটের ম্যানেজার পর্যন্ত ছুটে এলেন। কেউ সেলফি তুললেন সাবিনাদের সঙ্গে, কেউ করলেন খেলার প্রশংসা।

স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সাফের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। কাঠমান্ডুতে এখন শুধুই বাংলাদেশের মেয়েদের প্রশংসা। সকালে যখন টিম বাসে করে বাংলাদেশের মেয়েরা সুপারমার্কেটে যাচ্ছিলেন, কাঠমান্ডুর রাস্তার যানজটে গাড়ি থামতেই পাশের গাড়ি ও মোটরসাইকেলে থাকা যাত্রীরা হাত নেড়ে সাবিনাদের শুভেচ্ছা জানান।

টিম হোটেলে বাংলাদেশ দলের মেয়েরা
ছবি: প্রথম আলো

আসলে সাবিনাদের শুভেচ্ছাবার্তা পাওয়া শুরু হয় কাল রাত থেকেই। নেপালের অন্যতম সেরা পাঁচ তারকা হোটেল দ্য সোলটি কাঠমান্ডুতেই থাকছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। দশরথ স্টেডিয়াম থেকে টিম হোটেলে পৌঁছানোর পর হোটেল কর্তৃপক্ষ বিশাল আকারের কেক উপহার দেয় বাংলাদেশ দলকে। সেই কেক কেটে শুরু হয় উদ্‌যাপনের প্রাথমিক পর্ব।

নেপালের গণমাধ্যমও বাংলাদেশের খেলার প্রশংসা করতে কার্পণ্য করেনি। ডেইলি কান্তিপুর পত্রিকার খেলার পাতা দখল করেছে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের ছবি। ছিল সাবিনার সেরা খেলোয়াড় ও সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার ছবিও। যদিও তারা শিরোনাম করেছে এভাবে, ‘চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্নটা আবারও অসম্পূর্ণ থেকে গেল, বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার সেরা।’

নেপালের সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের মেয়েদের সাফের শিরোপা জয়ের খবর
ছবি: প্রথম আলো

দ্য হিমালয়ানের শিরোনাম, ‘নেপালকে উড়িয়ে দিয়ে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ।’ পাশেই সাবিনা, কৃষ্ণাদের ট্রফি হাতে উল্লাসের ছবি। কাঠমান্ডু পোস্ট লিখেছে, ‘নেপালের সাফ–দুঃখ চলছেই। প্রথমবারের মতো হেরেছে বাংলার বাঘিনীদের কাছে।’

ভাট ভাটেনি সুপারমার্কেটের ম্যানেজার দীনেশ প্রধান বাংলাদেশের মেয়েদের খেলা দেখে মুগ্ধ, ‘অসাধারণ ফুটবল খেলেছে এই মেয়েরা। ৯ নম্বর (কৃষ্ণা রানী সরকার) ফুটবলারের খেলা খুব ভালো লেগেছে আমার। নেপাল হেরেছে বলে দুঃখ নেই। আসলে এটাই ফুটবল। ভেজা মাঠে বাংলাদেশের মেয়েরা যেভাবে বল দখলের চেষ্টা করেছে, তা ছিল অসাধারণ। ব্যস্ততার কারণে মাঠে যেতে পারিনি। তবে আমি টিভিতে খেলা দেখেছি। বাংলাদেশের খেলায় মুগ্ধ হয়েছি।’

শিরোপা জেতা সাবিনাদের উচ্ছ্বাস যেন থামছেই না
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশের মেয়েদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ দি কাঠমান্ডু পোস্টের সাংবাদিক প্রজ্জ্বল ওলি, পুরো টুর্নামেন্টজুড়েই একই ছন্দে খেলে গেছে বাংলাদেশ। আসলে ট্রফিটা যোগ্য দলের হাতেই উঠেছে। বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য রইল টুপিখোলা অভিনন্দন।

স্থানীয় রেস্তোরাঁর ম্যানেজার সিমন তামাংয়ের মুখেও ছিল বাংলাদেশের মেয়েদের প্রশংসা, ‘কাজ থেকে ছুটি নিয়ে কাল খেলা দেখতে গিয়েছিলাম। নেপাল হেরেছে বলে একটু মন খারাপ হয়েছে। তবে বাংলাদেশের মেয়েদের খেলা খুব ভালো লেগেছে। পুরো সময় গ্যালারিতে আমরা চিৎকার করেছি। কিন্তু আমাদের এত দর্শকের আওয়াজেও কোনো সময় চাপে ভেঙে পড়েনি। সত্যিই বাংলাদেশ কাল অসাধারণ ফুটবল খেলেছে।’