টুখেলের ‘ভাগ্য ভালো’ কন্তে তাঁকে দেখেননি, দেখলে ‘ল্যাং মেরে ফেলে দিতেন’

কাল স্টামফোর্ড ব্রিজে লেগে গিয়েছিল কন্তে ও টুখেলেরছবি: এএফপি

রেফারি অ্যান্থনি টেলরের বিরুদ্ধে চেলসি সমর্থকদের ক্ষোভটা পুরোনো।

ইংরেজ এই রেফারির বিরুদ্ধে আগেও অনলাইন পিটিশন করেছেন চেলসির সমর্থকেরা। চেলসির ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব যেন তাঁকে না দেওয়া হয়, এই দাবিতে গত মৌসুমে অনলাইন পিটিশনে ৮০ হাজারের বেশি সইও সংগ্রহ করেছেন তাঁরা।

চেলসির ম্যাচে টেলরের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত পছন্দ না হওয়ায় এই পিটিশন করা হয়েছিল। কাল টটেনহাম-চেলসি ম্যাচ ২-২ গোলে ড্রয়ের পর টেলরকে নিয়ে আবারও অনলাইনে পিটিশন করেন ‘ব্লুজ’ সমর্থকেরা। প্রথম ঘণ্টায়ই সই উঠেছে ১০ হাজারের বেশি।

স্টামফোর্ড ব্রিজে কাল চেলসি-টটেনহাম ম্যাচটি দেখা থাকলে প্রথম ঘণ্টায় সইয়ের সংখ্যা দেখে অনেকে না–ও অবাক হতে পারেন। ম্যাচে মেজাজ হারিয়েছেন খেলোয়াড়েরা, হাতাহাতিতে জড়িয়েছেন দুই দলের কোচ আন্তোনিও কন্তে ও টমাস টুখেলে। লাল কার্ডও দেখেন দুজন। ম্যাচ শেষে রেফারি অ্যান্থনি টেলরের ওপর ক্ষোভ উগড়ে দেন চেলসি কোচ টুখেল। সে কথায় পরে আসা যাবে। আগে টুখেল এবং কন্তের মধ্যে হাতাহাতির যে ঘটনা কাল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে দেখা গেছে, তা নিয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানানো যাক।

খ্যাপাটে স্বভাবটা আছে কন্তের মধ্যে। তবে শ্লেষ মিশিয়ে রসাত্মক খোঁচাও যে মারতে পারেন, তা বোঝা গেল কন্তের ইনস্টাগ্রাম পোস্টে। ম্যাচ শেষে টুখেলের গোল উদ্‌যাপনের একটি ছবি নিজের ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে পোস্ট করেন কন্তে। সেটি চেলসির দ্বিতীয় গোলের সময়। টটেনহামের ডাগআউটে কন্তের পাশ দিয়ে দৌড়ে গিয়ে গোল উদ্‌যাপন করেন টুখেল। কন্তে তখন হতাশায় নিচে তাকিয়ে। সে সময়ের একটি ছবি পোস্ট করে কন্তে লিখেছেন, ‘তোমার ভাগ্য ভালো যে আমি তোমাকে দেখিনি। ল্যাং মেরে তোমাকে ফেলে দেওয়াই হতো যথোপযুক্ত কাজ।’

নিজের ইনস্টাগ্রামে এই পোস্ট করেন কন্তে
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

তবে মাঠে হাতাহাতির ঘটনা কোনো কোচই যে বড় করে দেখছেন না, সেটাও বোঝা গেছে ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে। কন্তের ভাষ্য, ‘রেফারি আমাকে লাল কার্ড দেখিয়েছেন। কিন্তু তিনি পরিস্থিতির মাহাত্ম বুঝতে পারেননি, তবে আমি মেনে নিয়েছি। আবারও বলছি, এটা বড় কোনো সমস্যা নয়। কোনো সমস্যা থেকে থাকলে সেটা আমার এবং অপর কোচের মধ্যে।’

দুই দলের কোচই জানিয়েছেন, মাঠের উত্তপ্ত পরিস্থিতি উপভোগ করেছেন। কন্তে তো মজা করে বলেই ফেলেন, পরবর্তী সময় চেলসি-টটেনহাম ম্যাচ থেকে হাত মেলানোর রেওয়াজ তুলে নেওয়াই ভালো। যেহেতু হাত মেলানো নিয়েও সমস্যা হয়েছে দুই কোচের। ম্যাচ শেষে হাত মেলানোর সময় কন্তের হাত ধরে হ্যাঁচকা টান মেরেছেন টুখেল। এরপরই চোখে চোখ রেখে লেগে যায় দুই কোচের।

টুখেল এ নিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, ‘হাত মেলানোর সময় চোখে চোখ রাখতে হয় এটাই জেনে এসেছি। সে এটা করেনি। হ্যাঁ, হয়তো এর দরকার ছিল না, কিন্তু এমন অনেক কিছুরই তো দরকার ছিল না। আমরা দুজনেই লাল কার্ড দেখেছি। এর দরকার ছিল না। কোনো সমস্যা নেই। এটা ফুটবল, এটা প্রিমিয়ার লিগ। আমরা টাচলাইনে একটু আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম।’

ইতালিয়ান কোচ কন্তে মাঠের উত্তপ্ত পরিস্থিতি এবং হাত মেলানো নিয়ে বলেছেন, ‘যা ঘটেছে আমরা উপভোগ করেছি। কিন্তু পরেরবার আমরা আরও মনোযোগী হব এবং হাত মেলাব না। সে তার বেঞ্চে থাকবে, আমি আমার বেঞ্চে থাকব।’

তবে ম্যাচের রেফারি অ্যান্থনি টেলরের ওপর রাগ দমাতে পারছেন না টুখেল। জার্মান এই কোচ জানিয়েছেন, টেলর এ ম্যাচ পরিচালনা করবেন জানার পর থেকেই শঙ্কায় ছিলেন তাঁর খেলোয়াড়েরা। টটেনহাম যে দুটি গোল করেছে, তা অবৈধ হিসেবেও দাবি করেন টুখেল।

ম্যাচের ১৯ মিনিটে কালিদু কুলিবালির গোলে এগিয়ে যায় চেলসি। ৬৮ মিনিটে পিয়ের-এমিল হইবিয়ার শটে সমতায় ফেরে টটেনহাম। এই গোলের আগে একটা ফাউলের আবেদন করেছিল চেলসি। কিন্তু রেফারি টেলর কর্ণপাত করেননি। ডাগআউটে এ নিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়েন টুখেল। টটেনহাম কোচ কন্তের সঙ্গে তখন তাঁর হাতাহাতি বেঁধেই যেত, যদি বাকিরা এসে দুজনকে সরিয়ে না নিতেন। ৭৭ মিনিটে রিস জেমসকে চেলসিকে আবারও এগিয়ে দিলেও যোগ করা সময়ের ৬ মিনিটে হ্যারি কেইনের গোলে সমতায় ফেরে টটেনহাম।

কিন্তু কেইনের গোলের আগে চেলসির বক্সে ডিফেন্ডার মার্ক কুকুরেয়ার চুল টেনে ধরে তাঁকে নিষ্ক্রিয় রাখার চেষ্টা করেন টটেনহামের আর্জেন্টাইন তারকা ক্রিস্টিয়ান রোমেরো। এসব নিয়ে মেজাজ হারিয়ে ম্যাচ শেষেও উত্তেজনাকর মুহূর্তের জন্ম দেন দুই দলের কোচ। চেলসি কোচ টুখেলের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, টেলরের যেহেতু চেলসির ম্যাচে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দেওয়ার ইতিহাস রয়েছে, সমর্থকদের মতো তিনিও কি মনে করেন, তাঁকে চেলসির ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব না দেওয়া হোক।

টুখেলের সোজাসাপটা উত্তর, ‘শুধু সমর্থকদের একটা অংশই নয়, আমি নিশ্চিত করতে পারি পুরো ড্রেসিংরুম এবং প্রত্যেক লোকই তা মনে করে। প্রথম গোলটি অফসাইড হয় না কীভাবে, তা আমার বোঝার বাইরে। কখন একজন খেলোয়াড় অন্য খেলোয়াড়ের চুল ধরে টান মারে সেটাই আমি বুঝি না। শেষ কর্নারে কারও চুল টেনে মাঠে দাঁড়িয়ে থাকবে এবং আক্রমণ করবে—এটাই হয়েছে আমার ক্ষেত্রে এবং আমি তা মেনে নেব না। একটি গোলও থাকা উচিত নয়।’

টুখেল মনে করেন টেলরকে চেলসির ম্যাচের বাইরে রাখাই ভালো। তবে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) প্রযুক্তিকেও দুষছেন টুখেল, ‘(টেলরকে না রাখা) এটাই ভালো হয়। তবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে তো ভিএআরও আছে। খেলোয়াড়ের চুল টানা কবে থেকে বৈধ হলো? কবে থেকে এটা ফাউল নয়? সে (টেলর) এটা না দেখে থাকলে দোষ দেব না। আমিও দেখিনি। কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তো ভিএআর আছে।’

লিডসের বিপক্ষে চেলসির পরের ম্যাচে টাচলাইনে নিষিদ্ধ থাকবেন টুখেল, যেহেতু টটেনহামের বিপক্ষে লাল কার্ড দেখেছেন। এ নিয়ে টুখেলের খোঁচা, ‘খুব ভালো। আমি কোচিং করাতে পারব না কিন্তু পরের ম্যাচে রেফারি বাঁশি বাজাতে পারবে।’