বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বেই মুখোমুখি দুই ‘গোলমেশিন’—দেশম বললেন, দারুণ হবে

নরওয়ে তারকা আর্লিং হলান্ড ও ফ্রান্স তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পেপ্রথম আলো গ্রাফিকস

এই মুহূর্তে ফুটবল বিশ্বে সবচেয়ে বড় দুই তারকা কারা?

লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর নাম অবশ্যই আসবে। কিন্তু তাঁদের বয়স হয়েছে। এখনো দুর্দান্ত খেলে চললেও ৩৮ বছর বয়সী ও ৪০ বছর বয়সী দুই ফুটবলারকে এই তালিকা থেকে এখন ‘অবসরে’ পাঠানোর সময় হয়েছে। তা ছাড়া আগামী বছর ২০২৬ বিশ্বকাপ তাঁদের ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ। যদিও মেসি খেলবেন কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবু খেলবেন, এ আশাতেই কথাটা বলা। তাঁদের বিদায়ী বিশ্বকাপের মঞ্চে মূল তারকা আসলে কিলিয়ান এমবাপ্পে ও আর্লিং হলান্ড।

ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবল যদি হয় গোটা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয়, এমবাপ্পে-হলান্ড তাহলে সেই মহাদেশের ফুটবলে অবশ্যই সবচেয়ে বড় দুই তারকা। হলান্ড প্রতিপক্ষের রক্ষণ কাঁপান ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে, এমবাপ্পে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের মধ্যে এ মৌসুমে গোলে এমবাপ্পে (১৬) ও হলান্ডই (১৫) অন্যদের চেয়ে এগিয়ে। তবে আসল মজাটা এখানে নয়। আসল মজা হবে ২০২৬ বিশ্বকাপে। ওয়াশিংটন ডিসিতে গতকাল রাতে ২০২৬ বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠানে একই গ্রুপে পড়েছে এমবাপ্পের ফ্রান্স ও হলান্ডের নরওয়ে।

বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠানে ফ্রান্সের কোচ দেশম
এএফপি

আই গ্রুপের চারটি দল—ফ্রান্স, সেনেগাল, নরওয়ে ও ফিফা প্লে–অফ দুই জয়ী (ইরাক/বলিভিয়া/সুরিনাম) দল। দুবার বিশ্বকাপজয়ী ও সর্বশেষ আসরে ফাইনাল খেলা এমবাপ্পের ফ্রান্স এই গ্রুপের নিশ্চিত ফেবারিট দল। কিন্তু সেনেগাল ও নরওয়েও বেশ শক্তিশালী দল। বিশেষ করে নরওয়ে তারকা হলান্ডকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগতে হবে যেকোনো দলের কোচকেই।

ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশম ড্র শেষে এ নিয়ে কথা বলেছেন। হলান্ডকে নিয়ে দুশ্চিন্তার বিষয়টি তিনি মুখ ফুটে বলেননি। তবে এমবাপ্পে-হলান্ড দ্বৈরথ যে আগামী বিশ্বকাপে বাড়তি মাত্রা যোগ করবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই খেলোয়াড় হিসেবে ১৯৯৮ বিশ্বকাপজয়ী দেশমের, ‘দারুণ এক দ্বৈরথ হবে। দুই দলেই আরও অনেক বড় নাম আছে, কিন্তু কিলিয়ান ও হলান্ড—দুজনেই বিশ্বজুড়ে খুব পরিচিত খেলোয়াড় ও তারা দুজনেই সর্বোচ্চ গোলদাতার দৌড়ে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হবে।’

সে তো বটেই। এই সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি। বিশ্বকাপের ‘গোল্ডেন বুট’ জয়ের লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তাঁদের মধ্যে। আর গোল করায় দুই তারকা কেমন পটু দেখুন—চলতি মৌসুমে রিয়াল ও ফ্রান্সের হয়ে এমবাপ্পের গোলসংখ্যা ২৪ ম্যাচে ৩০। নরওয়ে ও সিটির হয়ে হলান্ডের গোলসংখ্যা ২৪ ম্যাচে ৩৩। দুজনেই প্রজন্মের অন্যতম সেরা দুই গোলমেশিন।

সেনেগালের বিপক্ষে ২০০২ বিশ্বকাপের স্মৃতি ফিরবে ফ্রান্সের। সেবার ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বিশ্বকাপে খেলতে নেমে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই সেনেগালের কাছে হেরেছিল ফ্রান্স। সেই হারের কারণে বাদ পড়তে হয় গ্রুপ পর্ব থেকেই। দেশমকে সেই ঘটনা মনে করিয়ে দেওয়া হলেও তাতে তিনি খুব একটা আগ্রহ বোধ করেননি, ‘প্রতিটি বিশ্বকাপেরই আলাদা গল্প থাকে। এবারের আসরকে যতটা সম্ভব সুন্দর করা নিশ্চিত করতে হবে আমাদের।’

আই গ্রুপের শীর্ষ দল হিসেবে ফ্রান্স শেষ ৩২-এ উঠলে সেখানে তৃতীয় স্থানে থাকা শীর্ষ আট দলের যেকোনো একটির মুখোমুখি হবে তারা। এরপর শেষ ষোলোয় জার্মানির মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে। দেশম আপাতত এসব নিয়ে ভাবছেন না, ‘ফ্রান্স দল হিসেবে আমাদের একটা মর্যাদা আছে এবং আমাদের ঘিরে অনেক প্রত্যাশাও আছে। তবে শুরু থেকেই আমাদের মাটিতে পা রাখতে হবে। পর্বতের চূড়ায় ওঠার কথা ভাবার আগে, আমাদের ধীরে ধীরে ওপরে ওঠার পথ তৈরি করতে হবে এবং প্রথম ধাপগুলোই সবচেয়ে কঠিন।’