১০ হাজার কোটি খরচের পর ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডেই কি চেলসির মুক্তি
ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিজের শৈশবের ক্লাবের বিপক্ষে জোড়া গোল করে চেলসিকে জিতিয়েছেন পেদ্রো। ম্যাচ শেষে শুরুটা স্বপ্নের মতো বললেও, জানিয়েছেন কষ্টের কথাও।
‘ভিনি, ভিডি, ভিসি’—বাংলায় ‘এলাম, দেখলাম ও জয় করলাম’ বোধ হয় একেই বলে! ক্লাবে যোগ দেওয়ার দুই দিন পর অভিষেক এবং ছয় দিন পর দলের জয়ের নায়ক। হোয়াও পেদ্রোর শুরুটা সম্ভবত এর চেয়ে ভালো হতে পারত না। যদিও তাঁর ব্রাইটন ছেড়ে চেলসিতে যোগ দেওয়া নিয়ে ফুটবল–দুনিয়ায় আলোচনা হয়েছে সামান্যই এবং সেটাই স্বাভাবিক।
২৩ বছর বয়সী এই ব্রাজিলিয়ান চেলসির আমেরিকান মালিক টড বোয়েলির সময়ে কেনা ১৯ জন ফরোয়ার্ডের একজন। রোমান আব্রামোভিচের কাছ থেকে ক্লাবের মালিকানা নেওয়ার পর বোয়েলির অধীন চেলসি শুধু আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের পেছনে খরচ করেছে ৬০ কোটি পাউন্ড, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড (প্রায় ৯১০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা) খরচ করা হয় পেদ্রোর জন্য।
চেলসিতে যোগ দেওয়ার পর শুরুতে আলোচনায় না থাকলেও আলো কাড়তে পেদ্রোর সময় লাগল মাত্র দুই ম্যাচ। ক্লাব বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পালমেইরাসের বিপক্ষে বদলি নেমে ৩৬ মিনিট মাঠে থাকলেও সেদিন তেমন কিছু করতে পারেননি। কিন্তু গতকাল রাতে সেমিফাইনালের একাদশে সুযোগ পেয়েই যেন ভিন্ন এক রূপে আবির্ভূত হলেন পেদ্রো। ১৮ মিনিটে তাঁর দুর্দান্ত গোলে এগিয়ে যায় চেলসি। বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শটটি ফ্লুমিনেন্সের ৪৪ বছর বয়সী গোলরক্ষক ফাবিওর থামানোর কোনো সুযোগ ছিল না।
ম্যাচে দ্বিতীয় গোলটিও তাঁর। প্রতিপক্ষের অর্ধে এনজো ফার্নান্দেজের কাছ থেকে বল পেয়ে একক প্রচেষ্টায় এগিয়ে দুই ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে করেন দুর্দান্ত আরেকটি গোল। এই দুই গোলে চেলসিকে মৌসুমের দ্বিতীয় শিরোপার কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পেদ্রো ঘোষণা করেছেন নিজের আগমনী বার্তাও।
এমন না যে দুই গোলে পেদ্রো শুধু নিজের স্কোরিং সামর্থ্য দেখিয়েছেন, বরং ভেতর থাকা ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের নির্যাসও দেখিয়েছেন। দুটি গোলেই ব্যক্তিগত প্রতিভা ও দক্ষতার ছাপ ছিল। বড় মঞ্চে ক্লাবের হয়ে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচে একক কৃতিত্বে করা দুটি গোল পেদ্রোকে বাকিদের চেয়ে খানিকটা আলাদাভাবেই চিনিয়েছে।
ফ্লুমিনেন্সের বিপক্ষে পেদ্রো সব মিলিয়ে বল স্পর্শ করেছেন ২৬ বার। ক্লাব বিশ্বকাপে চেলসির হয়ে শুরুর একাদশে থাকা সব ফরোয়ার্ডদের মধ্যে শুধু জ্যাকসনই একটি ম্যাচে এতবার বল স্পর্শ করতে পেরেছিলেন। আবার এমন না যে শুধু প্রতিপক্ষের বক্সের ভেতরেই পেদ্রো স্পর্শগুলো করেছেন। বরং বক্সের বাইরে বেশির ভাগ বল স্পর্শ করেছেন। এমনকি সাতবার তিনি নিজের অর্ধেই বল স্পর্শ করেন। তাঁকে নিয়ে চেলসি কোচ এনজো মারেসকা বলেছেন, ‘আমরা আগেই জানতাম, সে কতটা ভালো খেলোয়াড়।’
চেলসির জয়ের নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার পর নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে পেদ্রো বলেন, ‘এটা স্বপ্ন ছিল। আমার মনে হয় না এর চেয়ে ভালো কিছু হতে পারত। আমি নিজের প্রথম গোল করতে পেরে খুশি। আশা করি, ক্লাব বিশ্বকাপ আমার প্রথম শিরোপা হবে। আমি মাত্র এক সপ্তাহ আগে এখানে এসেছি এবং এখন ফাইনাল খেলব।’
পেদ্রোর জন্য এই ম্যাচ একটু ভিন্ন অনুভূতিরও। ম্যাচটি তিনি খেলেছেন নিজের শৈশবের ক্লাব ফ্লুমিনেন্সের বিপক্ষে। ক্লাবটির বয়সভিত্তিক দলের হয়ে ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করেন এই ফরোয়ার্ড। ফ্লুমিনেন্সের খেলোয়াড় তৈরির আঁতুড়ঘর জেরেমেতে নিজেকে গড়ে তুলেন পেদ্রো।
বয়সভিত্তিক দলে প্রতিভার ছাপ রেখে ২০১৯ সালে ক্লাবের মূল দলের হয়ে নিজের যাত্রা শুরু করেন পেদ্রো। ২০২০ সালে ফ্লুমিনেন্স ছেড়ে যোগ দেন ওয়ার্টফোর্ডে। ওয়ার্টফোর্ড থেকে ব্রাইটন হয়ে এখন চেলসিতে। তবে চেলসির মতো ইউরোপিয়ান পরাশক্তির ঘরে পা রাখলেও নিজের শিকড় ভোলেননি পেদ্রো। গতকাল রাতে ফ্লুমিনেন্সের বিপক্ষে গোল করে উদ্যাপনও করেননি তিনি।
পরে নিজের শৈশবের ক্লাবকে বিদায় করার কষ্টের কথাও জানিয়েছেন পেদ্রো, ‘ফ্লুমিনেন্স আমাকে সবকিছু দিয়েছে। তারা আমাকে দুনিয়ার সামনে তুলে ধরেছে। আমি যে আজ এত দূর এসেছি, এটা তাদের কারণে সম্ভব হয়েছে, কারণ, তারা আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। আমি ভীষণ কৃতজ্ঞ, কিন্তু এটাই ফুটবল। আমাকে পেশাদার থাকতে হয়েছে। তাদের জন্য খারাপ লাগছে, কিন্তু আমাকে আমার কাজটা করতেই হতো।’