ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে ‘বেস্টসেলার’ হওয়ার আশা আনচেলত্তির
ব্রাজিল কোচ হিসেবে গত সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদানের পর পরিচিতিপর্ব শেষে প্রথম সাক্ষাৎকার দেন কার্লো আনচেলত্তি। ব্রাজিল কোচ হিসেবে তাঁর এই প্রথম সাক্ষাৎকার নিয়েছে টিভি গ্লোবো নেটওয়ার্কের চ্যানেল ‘জর্নাল ন্যাসিওনাল’। ইতালিয়ান এই কোচ সেই আলাপচারিতায় মন খুলে কথা বলেছেন। ব্রাজিলিয়ান ফুটবল নিয়ে তাঁর ধারণা, নিজের খেলোয়াড়ি ও কোচিং ক্যারিয়ার, সিনেমা দেখার নেশা এবং লেখালেখি নিয়েও কথা বলেন আনচেলত্তি।
ফুটবল ইতিহাসে অন্যতম সেরা এ কোচ নিজের একটি স্বপ্নের কথাও বলেছেন, ঐতিহ্যাবাহী মারাকানা স্টেডিয়ামে ব্রাজিল দলের কোচ হিসেবে ডাগআউটে দাঁড়াতে চান। কোচিং ক্যারিয়ারে তিনি ৩৪ জন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারকে কোচিং করিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। যদিও ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম ‘ইউওএল’ আনচেলত্তির স্মরণশক্তির ভুল শুধরে জানিয়েছে, সংখ্যাটা আসলে ৪০ জন। তো যতজন ব্রাজিলিয়ানকে আনচেলত্তি কোচিং করিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিভাবান কে? সাক্ষাৎকারে এই প্রশ্নের উত্তরে আনচেলত্তি রোনালদো নাজারিও এর নাম বলেছেন।
আনচেলত্তি তাঁর ফুটবল ক্যারিয়ার নিয়ে তিনটি বই লিখেছেন, সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন আরেকটি বই লিখছেন তিনি, ‘আমি তিনটি বই লিখেছি। “আই প্রেফার দ্য ওয়ার্ল্ড কাপ”—আত্মজীবনীমূলক, “মাই ক্রিসমাস ট্রি” বইয়ে আমি ব্যাখ্যা করেছি গত ২০ বছরে কৌশলগত ও কাজের জায়গা থেকে ফুটবল পাল্টেছে এবং “কুয়ায়েট লিডারশিপ”। চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল নিয়ে চতুর্থটি শিগগিরই বের হবে।’
আনচেলত্তির কাছে এরপর জানতে চাওয়া হয়, ব্রাজিলকে ২০২৬ বিশ্বকাপ জেতাতে পারলে আরেকটি বই লিখবেন কি না? তাঁর উত্তর, ‘হ্যাঁ, কোনো সন্দেহ নেই এবং এটা সর্বাধিক বিক্রিত (বেস্টসেলার) বই হবে।’
ব্রাজিলের হয়ে দুবার বিশ্বকাপজয়ী রোনালদো আনচেলত্তির অধীনে খেলেছেন এসি মিলানে। রোনালদো ২০০৭ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত মিলানের ক্লাবটিতে থাকতে কোচ ছিলেন আনচেলত্তি। নিজের কোচিং করানো ব্রাজিলিয়ানদের মধ্যে রোনালদোকে কোন দৃষ্টিকোণ থেকে সেরা মনে করেন, আনচেলত্তি সেটা বলতে গিয়ে অন্য খেলোয়াড়দের প্রসঙ্গও টেনেছেন, ‘রোনালদো (টেকনিক্যালি সেরা)। সে বিশ্বের সবচেয়ে মজার মানুষও। কাফু ছিল সবচেয়ে পেশাদার। তবে মজার মানুষ আরও অনেকেই আছে...মিলিতাও, ভিনি। ভিনি খুব বিনয়ী। আমার সবার সঙ্গেই খুব ভালো সম্পর্ক। অনেকেই আমাকে ফোন করে অভিনন্দন ও শুভকামনা জানিয়েছে।’
আমি ভাগ্যে বিশ্বাসী। আমার শেষ ম্যাচ ছিল ব্রাজিলের বিপক্ষে। সেটা ছিল আমাকে ট্রিবিউট দিয়ে। আমাদের আবারও দেখা হলো, মধুচন্দ্রিমা।ব্রাজিল কোচ কার্লো আনচেলত্তি
তবে আনচেলত্তি একজন ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়ের সঙ্গে সমস্যার কথাও বলেছেন। যদিও তাঁর নাম প্রকাশ করেননি, ‘আমার মতে, ব্রাজিলিয়ানরা চরিত্রগত দিক থেকে ভালো। ব্রাজিলিয়ানরা সাধারণত (ফুটবলের) টেকনিক্যাল দিক থেকে অন্যদের চেয়ে উঁচুতে। আমি এমন ৩৪ জনকে কোচিং করিয়েছি। কারও সঙ্গে সমস্যা হয়েছে, মনে পড়ে না। একজনের সঙ্গে একবার হয়েছিল, কিন্তু আমি বলব না (কে)।’
খেলোয়াড় হিসেবে আনচেলত্তির ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ ব্রাজিলের বিপক্ষে ১৯৯২ সালে। আনচেলত্তির জন্য ব্রাজিলের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলেছিল মিলান। কোচিংয়ে নামার পর ইতালির সহকারী কোচ হিসেবে ১৯৯৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছেন ব্রাজিলের। এসব মিলিয়ে আনচেলত্তি মনে করেন, ভাগ্যই তাঁকে ব্রাজিল পর্যন্ত টেনে এনেছে, ‘আমি ভাগ্যে বিশ্বাসী। আমার শেষ ম্যাচ ছিল ব্রাজিলের বিপক্ষে। সেটা ছিল আমাকে ট্রিবিউট দিয়ে। আমাদের আবারও দেখা হলো, মধুচন্দ্রিমা। ১৯৯৪ সালে আমি সহকারী কোচ ছিলাম, ব্রাজিলের কাছে হেরেছি। দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল। এই দলকে কোচিং করানো স্বপ্নের মতো। সব কোচেরই স্বপ্ন এটা।’
ব্রাজিলে কাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন, সে কথাও বলেছেন আনচেলত্তি, ‘অনেক আগে থেকেই খেলোয়াড়দের জানি। ফ্যালকাও, তোনিনিও, চেরেজোর সঙ্গে জানাশোনা আছে। ব্রাজিলিয়ানদের আনন্দমুখরতা আমার খুব ভালো লাগে। তাদের অমিত প্রতিভা ও যোগ্যতাও ভালো লাগে।’
আনচেলত্তি জানিয়েছেন, ব্রাজিল জাতীয় দলের কোচিং করানোর ফাঁকে অবসর সময়ে তিনি দেশটি ঘুরে দেখতে চান। কাকা তাঁকে সাও পাওলোয় যেতে বলেছেন, একসময়ের ক্লাব সতীর্থ ও বন্ধু ফ্যালকাও পোর্তো আলেগ্রেয় যেতে বলেছেন, সেটাও বলেছেন তিনি। এই ঘোরার মধ্যেই ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের কাঠামোর খোলনলচে জানতে চান তিনি, ‘আমি এটার (ঘোরার) জন্য সময় পাব। আমি এখানে থাকব। কাজ করা ও ঘুরেফিরে দেশটি উপভোগ করার মাধ্যমে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের কাঠামোকেও জানব।’
খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারে ইতালিতে ‘সাদা পেলে’–খ্যাত জিকোর মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতার কথাও জানিয়েছেন আনচেলত্তি। ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত খেলেছেন উদিনেসেতে। আনচেলত্তি তখন রোমার খেলোয়াড়। সেই স্মৃতি স্মরণ করে আনচেলত্তি বলেন, ‘জিকো আমার দলের বিপক্ষে গোল করেছিল। ম্যাচে আমি জিকোকে মার্ক (নজরদারি) করছিলাম। তখন অল্প বয়স। মরিয়া ছিলাম। তার গোলে আমরা ম্যাচটা হারি। উদিনেসের হয়ে প্রথম কয়েক ম্যাচেই সে ফ্রি–কিক থেকে ছয়টি গোল করেছিল। অবিশ্বাস্য।’
ব্রাজিলকে ২০২৬ বিশ্বকাপ জেতানোর লক্ষ্য নিয়ে দলটির কোচের দায়িত্ব নিয়েছেন আনচেলত্তি। আপাতত তাঁর দায়িত্ব হলো ব্রাজিলকে আগামী বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার টিকিট পাইয়ে দেওয়া। আনচেলত্তির প্রথম পরীক্ষা আগামী ৫ জুন ইকুয়েডরের বিপক্ষে। ১০ জুন পরের ম্যাচে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ প্যারাগুয়ে। দক্ষিণ আমেরিকান অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পয়েন্ট তালিকার চারে ব্রাজিল। এই মহাদেশ থেকে শীর্ষ ছয় দল সরাসরি খেলবে ২০২৬ বিশ্বকাপে। সপ্তম দলকে আন্তমহাদেশীয় প্লে-অফ বাধা টপকে খেলতে হবে বিশ্বকাপে।